"শাপলা শালুকে সাজাইয়া সাজি/ শরতে শিশিরে নাহিয়া"- শাপলা গ্রাম বাংলার নিতান্ত পরিচিত ফুল।রূপে গুণে তার জুড়ি নেই। বাঙালি তাকে যেমন কাব্যে স্থান দিয়েছে তেমনই সে কদর পেয়েছে রন্ধনশালায়। শাপলার কিছু পদ রইল আজকের রেসিপিতে।
শাপলার শুক্তো
কী কী লাগবে
টাটকা শাপলা-১ আঁটি
নারকেল কোরা-৬ চা চামচ
সরষে-৪ চা চামচ( কালো অথবা সাদা যা ইচ্ছে)
কাঁচালঙ্কা-২ টো
চিনি-১ চা চামচ
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
সরষের তেল- আন্দাজমতো
আদা- ২৫ গ্রাম
করলা বা উচ্ছে- বড় হলে ১ টি। ছোট হলে ২ টি।
কীভাবে রাঁধবেন
শাপলার ডগাগুলির ওপরের আঁশ ছাড়িয়ে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি মাপে কেটে খুব ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। সরষে ভাল করে ধুয়ে সামান্য নুন দিয়ে বেটে রাখতে হবে। নারকেল কোরা মিহি করে বাটতে হবে। আদাও বেটে নিতে হবে। করলা বা উচ্ছে ভালো করে ধুয়ে একটু মোটা মোটা করে কেটে নিতে হবে। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে সরষের তেল দিয়ে তেল গরম হলে করলা বা উচ্ছেগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তেল যদি কমে যায় তবে আর একটু তেল দিয়ে গরম করতে হবে। তেল গরম হলে সরষে ফোড়ন দিয়ে জল ঝরানো শাপলা দিতে হবে। নুন দিতে হবে। শাপলার জলেই শাপলা সেদ্ধ হবে। শাপলা প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে ভেজে রাখা করলা বা উচ্ছে ভাজা দিয়ে আর একটু সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর সরষে বাটা, নারকেল বাটা, চিনি ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে একটু ফুটিয়ে আদাবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করলেই তৈরি শাপলার শুক্তো। সঙ্গে অবশ্যই চাই গরম ভাত।
শাপলার ভেলা ভাজা
কী কী লাগবে
টাটকা শাপলা-২ টো
ময়দা-১ কাপ
চালের গুঁড়ো- ১ কাপ
হলুদ গুঁড়ো- সামান্য
লঙ্কা গুঁড়ো- আন্দাজমতো
কালোজিরে- ছোট আধ চামচ
নুন-আন্দাজমতো
সরষের তেল-ভাজবার জন্য
সরু সরু কাঠি- যতগুলো ভেলা বানানো হবে সেই আন্দাজে নিতে হবে।
কীভাবে রাঁধতে হবে
শাপলার ডগা বা নালের ওপরের আঁশ টেনে ফেলে চার আঙুল লম্বা মাপে কাটতে হবে। কেটে রাখা শাপলা খুব ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। ময়দা ও চালের গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে নুন, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, সামান্য কালোজিরে আর তেলের ময়ান দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। তারপর জল দিয়ে ঘন গোলা করতে হবে। তিনটে বা চারটে শাপলার টুকরো নিয়ে মাঝখানে একটু ফাঁক রেখে দুটো করে কাঠি বিঁধিয়ে বেশ ভেলার আকার দিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে বেশি করে তেল দিয়ে তেল গরম হলে শাপলার ভেলাগুলো ময়দা-চালের গুঁড়োর গোলায় ডুবিয়ে তেলে ছাড়তে হবে। একদিকটা ভাজা হলে সাবধানে অন্য দিকটা ভাজতে হবে। গ্যাসের আঁচ কমিয়ে ভাজলে ভালো হবে। গরম ভাতে ঘি আর শাপলার ভেলাভাজা যেমন অপূর্ব তেমনই আবার ডাল ভাতের সঙ্গেও ভেলাভাজা তুলনাহীন। পরিবেশনের সময় কিন্তু সাবধানে কাঠি দুটো খুলে দেবার কথা ভুললে চলবে না।
শাপলার ঘন্ট
কী কী লাগবে
টাটকা শাপলা-১ আঁটি
ছোলা-২ বড় চামচ
নারকেল কোরা-২ বড় চামচ
মুগ ডাল-২ বড় চামচ
জিরে গুঁড়ো- ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো- ২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী
কাঁচা লঙ্কা- ২ টি
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
কালো জিরে- ১/২ চা চামচ
তেজপাতা- ২ টি
সরষের তেল- রাঁধবার জন্য
কীভাবে রাঁধবেন
শাপলার ঘন্ট যেদিন রান্না করা হবে তার আগের দিন রাতে ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। শাপলার ওপরের আঁশ ছাড়িয়ে ২ ইঞ্চি মাপে কেটে নিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ভেজানো ছোলা বারবার করে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নারকেল কুরিয়ে রাখতে হবে। কাঁচা মুগের ডাল ভালো করে কচলে কচলে ধুয়ে নিতে হবে। ডাল, শাপলা আর জল দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। জল কিন্তু পরিমাণমতো দিতে হবে। ডাল আর শাপলা সেদ্ধ হয়ে গেলে জল যদি খুব বেশি না থাকে তবে ওই জলশুদ্ধু ডাল আর শাপলা ঠান্ডা করতে হবে। কিন্তু জল বেশি থাকলে জল ঢেলে ফেলে দিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা হলে ভাল করে চটকে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, কালোজিরে আর তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বেরোলে জল ঝরিয়ে ভেজানো ছোলা তেলে দিয়ে নাড়াচাড়া করে কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। ছোলা একটু ভাজা ভাজা হলে চটকে রাখা শাপলা তেলে ঢেলে দিতে হবে। গ্যাস বাড়িয়ে দিয়ে শাপলায় জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন ও চিনি দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। জল টেনে গেলে নারকেল কোরা দিয়ে নাড়াচাড়া করে শুকিয়ে গেলে নামাতে হবে। জল শুকোলেও যদি আঁট না হয় তবে ময়দা গুলে পিঠালি দিলেই তৈরি হবে শাপলার ঘন্ট।