"ওগগরা ভত্তা রম্ভঅ পত্তা গাইক ঘিত্তা/ দুগ্ধ সজুক্তা/ মোইনি মচ্ছা নালিতা গচ্ছা দিজ্জই কান্তা/ খা(য়) গুণবন্তা"- অর্থাৎ কলাপাতায় গরম ভাত তাতে গাওয়া ঘি, দুধ, মৌরলা মাছ আর নালতে শাক অর্থাৎ পাটশাক যার গৃহিণী পরিবেশন করেন তিনিই ভাগ্যবান। এমনই ভাবা হত চতুর্দশ শতকে। মুকুন্দরামের "চন্ডীমঙ্গল" কাব্য অথবা "চৈতন্যচরিতামৃত"- তেও নালতে শাকের উল্লেখ আছে। বাংলার জলাজমিতে স্বাভাবিক ভাবে জন্মানো এই শাক প্রাচীন বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। নানা গুণে গুণী সেই পাটশাক আজ শহুরে বাঙালির পাতে থেকে প্রায় উধাও। ভুলতে বসা পুরোনো দিনকে ফিরিয়ে আনতে পাটশাকের কিছু রান্না রইল আজকের লেখায়।
পাটপাতার খড়খড়ি
নিতান্ত অচেনা এক রান্না পাটপাতার খড়খড়ি। শাকের এই পদটি অভিনব হলেও রাঁধতে তেমন পরিশ্রম কিন্তু নেই।
কী কী লাগবে
পাটশাক- ১ আঁটি
রাঁধবার তেল- প্রয়োজনমতো
কালোজিরে- ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা-৪/৫ টা
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধবেন?
পাটশাক ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকোতে হবে। দু/ তিন দিন রোদে শুকোলে পাটপাতাগুলো খড়খড়ে হয়ে যাবে। তখন ডাঁটা থেকে পাতাগুলো আলাদা করে নিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল গরম হলে কালোজিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে শুকনো পাটপাতাগুলো হালকা করে ধুয়ে, জল ঝরিয়ে তেলে ছেড়ে দিতে হবে। নুন ছড়িয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করলেই কড়াই জুড়ে খড়খড়ে পাটশাক ছড়িয়ে থাকবে। পাটপাতাগুলো সব আলাদা আলাদা থাকবে। গায়ে গায়ে লাগবে না। গরম ভাতে ঘি সহযোগে পাটপাতার খড়খড়ি যেমন অপূর্ব তেমনই ঘি ছাড়া কাসুন্দির সঙ্গতেও জমে যায় এই যুগলবন্দী।
পাট চিংড়ি
কী কী লাগবে
পাটশাক-১ আঁটি
কুচো চিংড়ি- ১৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ- ১টা বড়
আদা- ২৫ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা- ৩/৪ টে
শুকনো লঙ্কা- ১টা
তেল- আন্দাজমতো
নুন-আন্দাজমতো
চিনি- সামান্য
কীভাবে রাঁধবেন?
পাটশাক ভাল করে ধুয়ে ডাঁটা থেকে ছাড়িয়ে রাখতে হবে। চিংড়ি মাছ ধুয়ে পিঠের কালো শিরা,মাথা ও ল্যাজা ফেলে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে তেল গরম করে চিংড়িমাছগুলো হালকা ভেজে নিতে হবে। তেলে শুকনো লঙ্কা ভেজে পেঁয়াজকুচি লাল করে ভেজে নিতে হবে। এবার পাটশাক দিয়ে কুচো চিংড়িগুলো নাড়াচাড়া করে আদাবাটা ও কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। সামান্য চিনি ও নুন দিয়ে মাপমতো জল দিতে হবে যাতে শাক ও মাছ সেদ্ধ হবে আর গা মাখা ঝোল থাকবে। ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে দিতে হবে এই পাট চিংড়ি।
পাটপাতার শুক্তো
কী কী লাগবে
কচি পটল-৫০০ গ্রাম
পাটশাক- আধ আঁটি
রাঙা আলু- ২০০ গ্রাম
মটরডালের বড়ি-৫০ গ্রাম
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
সর্ষে-ফোড়নের জন্য
আদা- ২৫গ্রাম
নুন- আন্দাজমতো
চিনি- সামান্য
কাঁচা লঙ্কা- ২টি
কীভাবে রাঁধবেন?
পটল ও রাঙা আলুগুলো ভালোভাবে জলে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পাটশাকগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে জলে ধুয়ে নিতে হবে।রাঙা আলুগুলো খোসা ছাড়িয়ে একটু মোটা করে শুক্তোর জন্য কাটতে হবে। পটলের খোসা ফেলার দরকার নেই। একটু আঁচড়ে খোসার ওপরের অংশ ফেলে দিলেই হবে। আদা ভাল করে ধুয়ে বেটে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল গরম করে বড়ি ভেজে তুলে রাখতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে সর্ষে ফোড়ন দিতে হবে। রাঙাআলু হালকা করে ভেজে নিতে হবে। পটলগুলো হালকা করে ভেজে নিয়ে রাঙাআলু ভাজা দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে আদাবাটা দিতে হবে। পাটশাক ও বড়িভাজা দিয়ে জল দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে, নুন ও চিনি দিয়ে ঢাকা দিয়ে তরকারি সেদ্ধ করতে হবে। বেশ গাঢ় ঝোল হলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে পাটপাতার শুক্তো।
পাটশাক ভাজা
কী কী লাগবে
পাটশাক-১ আঁটি
শুকনো লঙ্কা- ৩/৪ টে
কালোজিরে- ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
কাঁচালঙ্কা- ২/৩ টে
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধবেন
পাটশাক ভাল করে ধুয়ে পাতা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচিয়ে নিতে হবে। শাক কাটা হয়ে গেলে নুন মাখিয়ে রাখতে হবে। শাক শুদ্ধু কড়াই গ্যাসে বসিয়ে মিনিট কয়েক রাখলেই প্রচুর জল বেরবে। জল ফেলে দিয়ে আর একটা কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা আর কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে শাক দিতে হবে। নুন ও কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়তে হবে। শাক ভাজা হয়ে নরম হলে নামাতে হবে। গরম ভাত আর পাটশাক ভাজার আসল স্বাদ পেতে কাসুন্দি কিন্তু চাই-ই চাই।