‘কচুপাতায় বজ্রাঘাত’- এর মতো প্রবাদে, কচুপাতায় পুরে এক শিশুর প্রাণ নিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য লোককথায় অথবা বাঙালির নিজস্ব রন্ধনশৈলিতে জড়িয়ে আছে-কচুপাতা। তার সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটি বড় নিবিড়। গ্রামবাংলায় অনায়াসে পাওয়া যায় নানা ধরণের কচুপাতা। তবে তার মধ্যে দুধকচুর পাতাই সুস্বাদু। কৌড়া থেকে টক-কত ভাবে যে বাঙালি ব্যবহার করেছে কচুপাতাকে! আজকের লেখায় রইল তার কিছু উদাহরণ।
কচুপাতার কৌড়া
কী কী লাগবে
দুধকচুর পাতা-১ আঁটি
হলুদ গুঁড়ো- সামান্য
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুসারে
সর্ষেবাটা- ১ বড় চামচ
কাঁচালঙ্কা-৩/৪টি (ঝাল কম খেলে কম নেওয়া যায়)
তেঁতুল- সামান্য
চিনি- সামান্য (না দিলেও চলবে)
সর্ষের তেল-প্রয়োজনমতো
কালোজিরে- ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা-২ টি
কীভাবে রাঁধবেন?
দুধকচুর পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। একটা কাঁচালঙ্কা ও সামান্য তেঁতুল দিয়ে কচুপাতাগুলো মিহি করে শিলে বা মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। গ্যাসে কড়া বসিয়ে সর্ষের তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা, কালোজিরে ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে কচুপাতা বাটা দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। নুন, চিনি, সর্ষেবাটা, কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেশ করে মিশিয়ে একটু শুকিয়ে এলে কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে নামাতে হবে। গরম ভাত ছাড়া কৌড়ার স্বাদ কিন্তু জমবে না।
কচুপাতার ডালনা
কী কী লাগবে
দুধকচুর পাতা- ৬ খানা
মটর ডাল বাটা-২০০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো- সামান্য
আদাবাটা-২ চা চামচ
রসুন-১ চা চামচ ( না দিলেও চলবে)
তেঁতুল- সামান্য
কাঁচালঙ্কা- ৩টি
ডালনার জন্য
পেঁয়াজবাটা-২ বড় চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো-স্বাদ অনুসারে
হলুদগুঁড়ো-১ চা চামচ
চিনি-পছন্দমতো
জিরে-ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
কীভাবে রাঁধবেন?
এই পদটি যেদিন রাঁধা হবে তার আগের দিন রাতে মটরডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। দুধকচুর পাতা ভাল করে ধুয়ে জল ঝরাতে হবে। সেই সময় মটরডাল শিলে বা মিক্সিতে ১টা কাঁচালঙ্কা দিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। বাটা ডালে হলুদগুঁড়ো, আদাবাটা, অল্প রসুনবাটা ও সামান্য নুন দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার বড় থালায় প্রথমে বড় আকারের কচুপাতা বিছিয়ে তার ওপরে মশলা মাখা ডাল বাটা ভালভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর ওই ডালমাখা কচুপাতার ওপরে একটু ছোট কচুপাতা বিছিয়ে হাত দিয়ে একটু চেপে চেপে দিতে হবে। এরপর আবার ডাল বাটা পাতায় ছড়িয়ে তার ওপর আর একটু ছোট কচুপাতা বিছিয়ে একটু শুকিয়ে নিতে হবে। এবার খুব সাবধানে পাতাগুলো গুটিয়ে একটা রোলের আকার দিতে হবে। এই রোল থেকে এক/ দেড় ইঞ্চি মাপের গোল চাকা কাটতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল গরম করতে হবে। তেল গরম হলে ওই চাকাগুলো দু/ তিনটে করে ভেজে নিতে হবে। একসঙ্গে বেশি চাকা দিলে ভেঙে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। সব চাকাগুলো ভাজা হয়ে গেলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করতে হবে। তেলে জিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, রসুনবাটা, লঙ্কাগুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, সামান্য চিনি মিশিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে। একটু তেঁতুল গুলে অথবা তেঁতুলের পেস্ট দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। অল্প জলের ছিটে দিয়ে খুন্তি দিয়ে মশলা ভালো করে মিশিয়ে আবার অল্প জল দিয়ে মশলা কষাতে হবে। মশলা থেকে তেল ছেড়ে গেলে জল দিতে হবে। খুব বেশি জল দিতে হবে না। ঝোল ফুটে গেলে গ্যাস কমিয়ে কচুপাতার ভাজা চাকাগুলো আস্তে আস্তে ঝোলে ছেড়ে দিয়ে, নুন ও কাঁচালঙ্কা দিতে হবে। গ্যাস বাড়িয়ে ঝোলটা বেশ গাঢ় করতে হবে। ঝোলের মধ্যে কচুপাতার ভাজা চাকাগুলো উল্টে দিতে হবে। কিছুক্ষণ ফুটে ঝোল একটু টেনে গেলেই তৈরি হয়ে যাবে কচুপাতার ডালনা। পেঁয়াজবাটা ও রসুনবাটা ছাড়াও এই রান্নাটা করা যায়। সেক্ষেত্রে ৩ চামচ ধনে গুঁড়ো, ২ চামচ জিরেগুঁড়ো দিতে হবে। তবে পেঁয়াজ দিয়ে অথবা না দিয়ে যেভাবেই কচুপাতার ডালনা রান্না করা হোক না কেন তার সঙ্গে কিন্তু চাই-ই চাই গরম গরম ভাত।
কচুপাতা চিংড়ির টক
কী কী লাগবে
দুধ কচুর কচি পাতা- ২ টো
কুচো চিংড়ি-১৫০ গ্রাম
তেঁতুল- আন্দাজমতো
চিনি- স্বাদ অনুসারে
নুন- সামান্য
সর্ষে- ফোড়নের জন্য
সরষের তেল- রাঁধবার জন্য
কীভাবে রাঁধবেন?
কুচো চিংড়িগুলোর মাথাগুলো ছাড়িয়ে, পিঠের শিরাগুলো ছাড়াতে হবে। এবার ভালো করে, অন্তত চার/পাঁচবার ধুয়ে নিতে হবে। তারপর নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। দুধকচুর কচি পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে একটু তেঁতুল দিয়ে জলে সেদ্ধ করতে হবে। কড়াই পরিষ্কার করে অল্প তেল দিয়ে গরম করে সর্ষে ফোড়ন দিয়ে জলশুদ্ধু চটকানো কচুপাতা গেলে দিতে হবে। তেঁতুল গোলা, চিনি ও সামান্য নুন দিতে হবে। টকটা ফুটে উঠলে চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে ফুটিয়ে একটু গাঢ় হলেই তৈরি কচুপাতা চিংড়ির টক। তবে ঠান্ডা না হলে টকের স্বাদ খুলবে না।