গন্ধরাজ চিকেন ফ্রাই
সামনেই পুজো। পুজো মানেই জমিয়ে আড্ডা। আর কে না জানে আড্ডা তো শুধু মুখে হয় না। তার জন্য চাই মুচমুচে ভাজাভুজি। এমনই এক রান্না গন্ধরাজ চিকেন ফ্রাই যা ফ্রায়েড রাইস, পোলাও অথবা গরম ভাতের সঙ্গে ও দারুণ লাগবে। জমে যাবে চায়ের সঙ্গে 'টা' হিসেবেও।
কী কী লাগবে
হাড়ছাড়া মুরগির টুকরো- ২৫০গ্রাম
ডিম-৪ টে
ময়দা-৪ বড় চামচ
কর্নফ্লাওয়ার- ৪ বড় চামচ
ময়দা আর কর্নফ্লাওয়ারের পরিমাণ হবে সমান সমান।
আদা রসুনবাটা-৩ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো- ২ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা-২ থেকে ৩ টে লঙ্কা বেটে নিতে হবে
গন্ধরাজ লেবু-২ টো
গন্ধরাজ লেবুর পাতা- ৫ টা
খাবার সোডা বা বেকিং পাউডার-১/২ চা চামচ
ভাজার জন্য- যে কোনও সাদা তেল
কীভাবে রাঁধতে হবে
মুরগির টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে। এই টুকরোগুলো খুব পাতলা বা মোটা হবে না। মুরগির টুকরোয় ২ চা চামচ পরিমাণে আদা রসুন বাটা, গোলমরিচ গুঁড়ো, অল্প নুন, ২ টো কাঁচালঙ্কা বাটা, ২টো গন্ধরাজ লেবুর আধখানা করা পাতা আর একটা গন্ধরাজ লেবুর রস ভালো ভাবে মেখে ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। অন্তত এক ঘণ্টা এভাবে রাখতে হবে। চারটে ডিম খুব ভালো ভাবে ফেটিয়ে তাতে আদা রসুনবাটার অবশিষ্ট অংশ, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো ও কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে আবারও ফেটাতে হবে। এতে সামান্য পরিমাণ গন্ধরাজ লেবুর রসও দিতে হবে। ফেটানো ডিমে ময়দা ও কর্নফ্লাওয়ারের পরিমাণ হবে সমান। ডিমের সাইজের ওপর ময়দা ও কর্নফ্লাওয়ার কতটা লাগবে তা নির্ভর করবে। গোলা যেন পাতলা বা খুব বেশি ঘন না হয়। এক ঘন্টা হয়ে গেলে গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করতে হবে। মুরগির টুকরোগুলো থেকে গন্ধরাজ পাতা তুলে নিতে হবে। গ্যাসটা কমিয়ে ডিমের গোলায় মশলা মাখা মুরগির টুকরোগুলো ডুবিয়ে গরম তেলে ভাজতে হবে। গ্যাসের আঁচ বাড়ানো থাকলে ভাজা ভালো হবে না। ওপরটা ভাজা হলেও ভেতরে কাঁচা থেকে যাবে। একসঙ্গে বেশি মুরগির টুকরো তেলে না দেওয়াই ভালো। একপিঠ ভালো করে ভাজা হলে উলটে দিতে হবে। দুদিক বেশ ভাজা হয়ে গেলে তুলে নিতে হবে। পরিবেশনের সময় গন্ধরাজ লেবুর পাতলা ফালি দিয়ে সাজাতে হবে। এই ভাজার সঙ্গে দিতে হবে বাংলার নিজস্ব স্বাদের কাসুন্দি যাতে অবশ্যই মেশাতে হবে গন্ধরাজ লেবুর রস। তবেই তো মনে হবে " তোমারি তুলনা তুমি প্রাণ"।
গন্ধরাজ মাটন
"কচি পাঁঠা বৃদ্ধ মেষ"- পাঁঠার মাংসে গন্ধরাজ লেবুর স্পর্শ এক আশ্চর্য স্বাদ এনে দেয়। চিরচেনা মাংস মনে হয় অচেনা, অজানা। সেই নতুন রস উপভোগ করার পদ্ধতি রইল এই লেখাটিতে।
কী কী লাগবে
পাঁঠার মাংস- ৫০০ গ্রাম
আলু- ২০০ গ্রাম
পেঁয়াজ- ৩৫০ গ্রাম
টক দই- ১০০ গ্রাম
আদা- ৫০ গ্রাম
ধনেগুঁড়ো- ৭/৮ চা চামচ
হলুদ গুঁড়ো- ৩ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা-২ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা- ৩টে
কাশ্মীরী লঙ্কার গুঁড়ো- ২ চা চামচ
রসুন- ২ টো
তেজপাতা- ২ টো
শুকনো লঙ্কা- ২ টো
গরমমশলা-ছোট এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ- সব ২ টো করে
গন্ধরাজ লেবু-২ টো
গন্ধরাজ লেবুর পাতা-৮ টা
কীভাবে রাঁধতে হবে
পাঁঠার মাংস খুব ভালো ভাবে অল্প গরম জলে ধুয়ে নিতে হবে। দই কাপড়ে বেঁধে অথবা ছাঁকনিতে দিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। আদা মিহি করে বেটে নিতে হবে। একটা রসুন বেটে রাখতে হবে। মাংসে জল ঝরানো দই, আদা বাটা, রসুনবাটা, ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, কাশ্মীরী লঙ্কার গুঁড়ো এবং একটা গন্ধরাজ লেবু ভালো করে ধুয়ে তার ওপরের সবুজ খোসা গ্রেটারে ঘষে দিতে হবে। সবুজ খোসা ঘষতে গিয়ে যদি সাদা অংশ ঘষে যায় তবে মাংস তেতো হয়ে যাবে। তাই খুব সাবধানে এই ঘষার কাজটা করতে হবে। এই মশলা মাখা মাংস ২ ঘন্টা ম্যারিনেট করতে হবে।ঘন্টা দুয়েক পরে একটা গন্ধরাজ লেবু চিপে তার রস মাংসে দিতে হবে। আলু ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে আধখানা করে রাখতে হবে। আলু কাটার পরেও ধুয়ে নিতে হবে। রসুন কুচিয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ ও কুচি করে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে আলুগুলো বাদামি করে ভেজে নিতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, গোটা গরমমশলা ও রসুনকুচি দিয়ে নাড়াচাড়া করে পেঁয়াজকুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে নিতে হবে। এরপর মাংসের টুকরো গুলো মশলা থেকে তুলে ভালো করে ভাজতে হবে। একটু ভাজা হলে আদাবাটা, কাঁচালঙ্কাবাটা ও মাংস মাখার মশলা দিয়ে কষাতে হবে। চিনি দিয়ে কষিয়ে একটু গরম জল দিতে হবে। আবার খুন্তি দিয়ে কড়াইর নিচে পর্যন্ত নেড়ে দেখতে হবে যাতে লেগে না যায়। মাংস কষালেই স্বাদ। তাই অল্প গরম জল দিয়ে কষাতে হবে। তারপর প্রেশার কুকারে মাংস ঢেলে নিয়ে কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে দরকার মনে হলে গরম জল দিয়ে তিনটে সিটি দিতে হবে। ভেতরের তাপ কমে এলে প্রেশার কুকার খুলে আলুগুলো দিয়ে একটা সিটি দিতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে প্রেশার কুকার খুলে লেবু পাতা দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে গন্ধরাজ মাংস।
গন্ধরাজ মোচার পাতুরি
বাঙালির রন্ধনশৈলীতে মোচা ও গন্ধরাজ লেবু দুই-ই বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সারা ভারতের লোক কলা খায়। কিন্তু মোচা শুধু পূর্ব ভারতেই খাওয়া হয়। তার মধ্যে আবার বাঙালির কাছে মোচার আলাদা কদর। " চৈতন্যচরিতামৃত"- তেও মোচার নানা পদের উল্লেখ আছে। সেকেলে রান্নায় একেলে রূপটান দিয়ে তৈরি মোচার একটি পদ গন্ধরাজ মোচার পাতুরির রন্ধনপদ্ধতি আজ দেওয়া হল।
কী কী লাগবে
মোচা-১টি বড়( কেনার আগে দাঁতে কেটে দেখে নিতে হবে তেতো কি না)
নারকেল- আধ মালা
হলুদ গুঁড়ো- ২ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা-৪টে
তেঁতুল- আন্দাজমতো
সর্ষে-৪ চামচ
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
গন্ধরাজ লেবু- ২ টো
গন্ধরাজ লেবুর পাতা- ৮/৯ টা
কলাপাতা-মোচার আকার অনুযায়ী লাগবে
নুন- স্বাদ অনুযায়ী
সাদা সুতো-পাতুরি বাঁধার জন্য
কীভাবে রাঁধতে হবে
গামলা বা বড় মুখের বাটিতে জলে তেঁতুল গুলে রাখতে হবে। মোচা ছাড়িয়ে খুব মিহি করে কেটে তেঁতুল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর তেঁতুল জল থেকে মোচা ছেঁকে তুলে অন্য একটা পাত্রে জল দিয়ে মোচা সেদ্ধ করতে হবে। নারকেল কুরিয়ে মিহি করে বেটে রাখতে হবে। সর্ষে কাঁচালঙ্কা আর সামান্য নুন দিয়ে বেটে নিতে হবে। এবার সেদ্ধ করা মোচা নারকেলবাটা, সর্ষে কাঁচালঙ্কা বাটা, হলুদ গুঁড়ো, অল্প করে নুন ও কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে মাখতে হবে। গন্ধরাজ লেবুগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে একটা লেবুর রস করে নিতে হবে। সেই রসটা মোচা মাখার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। অন্য লেবুটার খোসা ফেলে পাতলা গোল গোল করে কেটে নিতে হবে। কলাপাতাগুলো গ্যাসে সামান্য সেঁকে নিয়ে বড় থালায় বিছিয়ে তার ওপর সামান্য তেল মাখিয়ে মোচা- নারকেল মাখা থেকে খানিকটা নিয়ে চৌকো করে সাজাতে হবে। মোচার পরিমাণ যেন খুব কম বা বেশি না হয়। ওই মোচা মাখার ওপর ১ টা করে গন্ধরাজ লেবুর পাতা, ১ টা করে চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে কলাপাতা মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এবার গ্যাসে চাটু বা ফ্রাইং প্যান বসিয়ে তাতে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে পাতুরিগুলো দিতে হবে। পাতার একটা দিক কালচে হয়ে এলে উলটে দিতে হবে। দু দিকটা পোড়া পোড়া হলে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবেশনের সময় সুতো খুলে লেবু পাতা সরিয়ে গোল গোল করে কাটা গন্ধরাজ লেবুর টুকরোগুলো পাতুরির ওপরে দিয়ে ছোট থালায় সাজিয়ে পাশে গন্ধরাজ লেবুর লম্বা করে কাটা টুকরো রেখে পরিবেশন করতে হবে। পছন্দ করলে মোচা মাখার সময় সামান্য চিনি ও পোস্তবাটা দেওয়া যায়। যদিও পাতুরির বৈশিষ্ট্য তার সর্ষের ঝাঁঝালো তীব্র স্বাদ যা একমাত্র গরম ভাতের নম্রতাই ধারণ করতে পারে।