সপ্তমীতে মৎস্যমুখ
কথায় বলে "মাছের নামে গাছেও হাঁ করে"। শুধু গাছ হাঁ করে না। বাঙালিও করে। বাঙালির সব শুভ কাজে জড়িয়ে আছে মাছ। শারদীয় আনন্দোৎসবের সপ্তমী তিথির ভোগ তাই সাজানো হল মাছের নানা পদে।
ভেটকি মাছের নিরামিষ ঘন্ট
প্রবাদ আছে ‘শাক দেব না মাছ দেব’। শাক আর মাছকে মিলিয়ে এক সম্পূর্ণ অন্য ধরণের রান্না ভেটকি মাছের নিরামিষ ঘন্টের রন্ধনপ্রণালী রইল সপ্তমীর উপহারে।
কী কী লাগবে
ভেটকি মাছের গাদা-৫০০গ্রাম
পালং শাক- ৩০০গ্রাম
আলু-২০০গ্রাম
বেগুন-৩০০গ্রাম
মুলো-২০০গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-৩ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো-২ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-৩ চা চামচ
আদাবাটা-৩ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা-২ টো
পেঁয়াজ-২টো(মাঝারি)
রসুন-২ কোয়া
কাঁচালঙ্কা-৩টে
নুন-আন্দাজমতো
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
ভেটকি মাছের গাদাগুলো ভালো করে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে। মাছ ভাজা হলে থালায় ঠান্ডা হতে দিতে হবে। পালং শাক ভালো করে ধুয়ে কুচিয়ে নিতে হবে। আলু ও মুলো ধুয়ে নিয়ে ছোট ডুমো ডুমো করে কেটে নিতে হবে। আলু মুলোর চেয়ে বড় মাপে কাটতে হবে। বেগুনও আলুর মাপে কেটে রাখতে হবে। মাছ ঠান্ডা হয়ে এলে মাছগুলোকে ভেঙে কাঁটা বেছে নিতে হবে। পেঁয়াজ কুচিয়ে রাখতে হবে। রসুন খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে বেগুন হালকা ভেজে নিতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে রসুন কুচি ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে আলু ও মুলো হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে। তেলে পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভেজে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো ও আদাবাটা দিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে পালংশাক দিয় আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে মজতে দিতে হবে। মিনিট পাঁচেক পরে ঢাকা তুলে দেখতে হবে যাতে কড়াইতে লেগে না যায়। এবার বেগুন ও ভাঙা মাছগুলো দিয়ে নুন ও কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে আবার কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। এই সময় আঁচ কমানো থাকবে। আলু বেশ সেদ্ধ হয়ে এলে আঁচ বাড়িয়ে ঘন্টটাকে আঁটো করতে হবে। তারপর ঘি ও গরমমশলাগুঁড়ো মিশিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ভেটকি মাছের নিরামিষ ঘন্ট। ঘন্ট কিন্তু গরম ভাত ছাড়া জমবেই না।
হিং পাবদা
কী কী লাগবে
পাবদা মাছ-৮ টা
হলুদগুঁড়ো-৪ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ অনুযায়ী
কাঁচালঙ্কা-৪-৫ টা
টমেটো- ২ টো বড়, ছোট হলে ৪টে
হিং- সামান্য
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
ধনেপাতা- আন্দাজমতো
চিনি- সামান্য
নুন- স্বাদমতো
কীভাবে রাঁধবেন
মাঝারি সাইজের পাবদা মাছ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রবাদ আছে, ‘মাছ ধুলে মিঠা’- অর্থাৎ মাছ ধুলে তার স্বাদ বাড়ে। অন্তত চার থেকে পাঁচ বার মাছ ধুয়ে নিতে হবে। তারপর নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। টমেটো বেটে নিতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে মাছ হালকা ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, কালোজিরে ও হিং ফোড়ন দিতে হবে। হিং- এর গন্ধ বের হলে হলুদ গুঁড়ো ও লঙ্কাগুঁড়ো অল্প জলে গুলে কড়াইতে দিতে হবে। একটু নাড়াচাড়া করে ঘষে রাখা টমেটো আদাবাটা ও নুন দিয়ে আবার মেশাতে হবে। দরকার মনে করলে অল্প চিনিও দেওয়া যায়। মশলা বেশ মজে এলে আর একটু জল দিয়ে ফুটিয়ে ভাজা মাছগুলো দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। পাবদা নরম মাছ তাই তাড়াতাড়ি রান্না হয়ে যাবে। মাছের গা-মাখা ঝোল হলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে রাখতে হবে। হিং পাবদার জন্য চাই গরম ভাত। তবে উৎসবের দিনে বাঙালি পোলাও-এর সঙ্গেও এই রান্নাটি অন্য আমেজ আনবে।
বাঙালি ফিশ ফ্রাই
পুজোর সন্ধ্যেবেলায় ‘আর কী খাবি বল’ বললে প্রথমেই মনে আসবে ভেটকি মাছের ফ্রাই- এর কথা। বাঙালি পাকশালার নিজস্ব রূপটানে যে ভেটকি ফ্রাই আজ বাঙালির সিগনেচার ডিশ। যা না থাকলে পুজোর আড্ডা জমবেই না। পুজো উপহারে সেই বাঙালি ফিশ ফ্রাই- র রন্ধনপ্রণালী রইল পাঠকদের জন্য।
কী কী লাগবে
ভেটকি মাছের ফিলে-৬টা
ডিম-২ টো
ময়দা-২ টেবিল চামচ
পাতিলেবু-১টা
আদা-২৫ গ্রাম
ধনেপাতা-আন্দাজমতো
পুদিনাপাতা-আন্দাজমতো
গোলমরিচ গুঁড়ো-২ চা চামচ
পেঁয়াজ-১ টি
কাঁচালঙ্কা-৪ টে
রসুন- ছোট ১ টি
ব্রেডক্র্যাম্ব-আন্দাজমতো
যেকোনও রিফাইন তেল- প্রয়োজনমতো
কীভাবে রাঁধবেন
ভেটকি মাছের ফিলে বাজার থেকেই কাটিয়ে আনতে হবে। ফিলেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পাতিলেবু অর্ধেক করে কেটে নিয়ে রস করে নিতে হবে। পাতিলেবুর রস, অল্প নুন আর ১ চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো মাখিয়ে ফিলেগুলো অন্তত আধঘন্টা রাখতে হবে। পেঁয়াজ, আদা, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা আর রসুন শিলে বা মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। মাছ আধঘন্টা ম্যারিনেট করার পর ধনেপুদিনাবাটা মাছের ফিলেগুলোর গায়ে খুব ভালোভাবে মাখিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি মাছের ফিলেতে যেন ওই পেস্টটা লাগানো হয়। একটা মুখ বন্ধ টিফিনকৌটোয় মশলা মাখানো ফিলেগুলো রেখে ফ্রিজে(ডিপ ফ্রিজে নয়) আধঘন্টা রাখতে হবে। আধঘন্টা হয়ে গেলে ফিলেগুলো ফ্রিজ থেকে বের করে আনতে হবে। ২ টো ডিম অল্প নুন আর গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে। ওই ফিলেগুলোর ওপর ২ টেবিল চামচ ফেটানো ডিম আর ১ চামচের চেয়ে একটু বেশি ময়দা মাখিয়ে নিতে হবে। একটা ছড়ানো পাত্রে ব্রেডক্র্যাম্ব নিতে হবে। একটা করে মশলা মাখানো ফিলে ব্রেডক্র্যাম্বে মাখিয়ে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে আবার ব্রেডক্র্যাম্বে ভালোভাবে মাখিয়ে রাখতে হবে। দুহাত দিয়ে ভেটকি ফিলেগুলো চেপে চেপে ফ্রাইয়ের আকার দিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তাতে তেল কোনও রিফাইন তেল দিয়ে গরম করে, গ্যাস কমিয়ে একটা করে ফিলে তেলে দিয়ে আঁচ মাঝারি রেখে দুপিঠ খয়েরি করে ভেজে তেল ঝরিয়ে তুলতে হবে। লেবুর রস মাখানো শশা পেঁয়াজের স্যালাড আর কাসুন্দির ঝাঁজ না থাকলে বাঙালি ফিশফ্রাইয়ের আসল স্বাদ- না কিছুতেই খুলবে না।
দুধ পাবদা
কী কী লাগবে
মাঝারি সাইজের পাবদা- ৮ টা
হলুদ গুঁড়ো- ৪ চা চামচ
কালোজিরে বাটা-১ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা-৩-৪ টে(স্বাদ অনুযায়ী)
কাঁচালঙ্কা-৬-৭ টা
আদাবাটা- সামান্য
দুধ- ১ বড় কাপ
কালোজিরে- ফোড়নের জন্য
নুন- আন্দাজমতো
সর্ষের তেল- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধবেন
পাবদা মাছ ভালো করে ধুয়ে নুন- হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে মাছগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে। ওই তেলেই কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে হলুদ গুঁড়ো, কালোজিরেবাটা, আদাবাটা, কাঁচালঙ্কাবাটা ও নুন দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। মশলা ভালোভাবে মিশে গেলে গ্যাস কমিয়ে দুধটা ধীরে ধীরে মিশিয়ে নিতে হবে। গ্যাস বাড়িয়ে দিতে হবে। দুধ-মশলা ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে ফুটিয়ে একটু গাঢ় হলে নামিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশন করতে হবে গরম ভাতের সঙ্গে।