মূলতঃ মধ্য প্রাচ্য অর্থাৎ তুরস্ক, ইরান ইত্যাদি দেশের রান্না পোলাও বা পলান্ন। পল অর্থাৎ মাংস মিশ্রিত অন্নকেই পোলাও বলা হলেও নিরামিষ পোলাও-র কদর ও কম নয়। সরু সুগন্ধী বাসমতি চাল, ঘি ও নানান মশলা ছাড়াও পোলাও রান্নার প্রধান উপকরণ আখনির জল। বাঙালি পরিবারের নানা অনুষ্ঠানে পোলাও যে সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল তার প্রমাণ ধরা আছে শরৎকুমারী চৌধুরাণীর লেখায়-"রান্না হইয়াছে পোলাও, কালিয়া, চপ, চিংড়ির মালাইকারি...."।
কী কী লাগবে
পাঁঠার মাংসের কিমা(মুরগির মাংসের কিমাও ব্যবহার করা যায়)- ৩০০ গ্রাম
আদা- ৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ-২৫০ গ্রাম
বেসন- পরিমাণমতো
বাসমতি চাল- ৫০০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো- অল্প
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী
নুন- স্বাদ অনুযায়ী
চিনি- স্বাদ অনুযায়ী
টক দই- ৫০ গ্রাম
গোটা গরমমশলা- ছোট এলাচ(৫/৬টা), দারচিনি( ছোট টুকরো ৭/৮ টা), লবঙ্গ(৪টে)
তেজপাতা-অল্প
কাঠবাদাম(আমন্ড)-৫০ গ্রাম
কিশমিশ- ৫০ গ্রাম
গোটা ধনে- ১ চা চামচ
শা জিরে- ২৫ গ্রাম
কাবাবচিনি- অল্প
জাফরান- অল্প
দুধ- জাফরান গোলার জন্য যতটা লাগবে
গরমমশলার গুঁড়ো- আন্দাজমতো
গোটা গোলমরিচ- ১ চামচ
রাঁধার জন্য- ঘি ও সাদা তেল
কী ভাবে বানাবেন
আখনির জলেই পোলাও-র স্বাদ। আখনির জল বানাতে গোলমরিচ, অর্ধেক পরিমাণে আদা কুচি করা অবস্থায়, গোটা ধনে, হলুদ গুঁড়ো আর কাবাব চিনি একটা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে নিতে হবে। গ্যাসে ডেকচি বসিয়ে তাতে ১ লিটারের কিছু বেশি জল নিয়ে তার ভেতরে ওই কাপড়ে বাঁধা মশলা দিয়ে ফোটাতে হবে। ফোটাবার সময় ডেকচির মুখ ভালোভাবে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। জল ফুটে অর্ধেক হলে নামিয়ে মশলার পুঁটলিটা তুলে নিতে হবে। গ্যাসে একটা কড়াই বসিয়ে তাতে বড় ১ চামচ ঘি ও তেজপাতা দিয়ে ডেকচির জলটা দিয়ে একটু পরেই নামিয়ে নিতে হবে। পোলাও রান্নার অপরিহার্য উপকরণ এই আখনির জল।এবার পোলাওর চাল ভালোভাবে ধুয়ে জল ঝরিয়ে ঝরঝরে করতে হবে। শুকনো চালে আদাবাটা, পেঁয়াজবাটা, লঙ্কাগুঁড়ো, নুন, চিনি, দই আর ১ বড় চামচের ঘি দিয়ে মেখে রাখতে হবে। ২ টো বড় পেঁয়াজ কুচিয়ে নিয়ে পেঁয়াজকুচিগুলো লাল করে ভেজে নিতে হবে। প্রেশার কুকারে মাপমতো জল দিয়ে কিমা এমনভাবে সেদ্ধ করতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল না থাকে অথচ কিমা সেদ্ধ হয়ে যায়। সেদ্ধ কিমার সঙ্গে পেঁয়াজকুচি ভাজা ভালোভাবে মিশিয়ে বেটে নিতে হবে। আদা ও পেঁয়াজ আলাদা আলাদা করে বেটে নিতে হবে। কিমা বাটার সঙ্গে ১টা পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, হলুদ গুঁড়ো লঙ্কাগুঁড়ো, নুন, চিনি ও বেসন দিয়ে মেখে গোল-গোল গুলির আকার দিতে হবে। গুলি কিন্তু খুব বড় হবে না।গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সাদা তেল ও ঘি মিশিয়ে গুলিগুলো ভেজে নিতে হবে। কাঠবাদাম আর কিশমিশ কুচি করে নিতে হবে। কিশমিশ গোটাও রাখা যায়। গ্যাসে একটা তলা ভারী ডেকচি বসিয়ে বেশি ঘি অল্প সাদা তেল দিয়ে গরম করে কাঠবাদাম কুচি আর কিশমিশ দিয়ে অল্প ভেজে তুলে নিতে হবে। আর একটু ঘি দিয়ে তাতে গরমমশলা ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে মশলামাখা চাল দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে আখনির জল এমন পরিমাণে দিতে হবে যাতে চাল সেদ্ধ হবে কিন্তু গলে যাবে না। চালে জল একটু কমে এলে চাল সরিয়ে ভাজা বাদাম, কিশমিশভাজা আর মাংসের ভাজাগুলো দিয়ে সরিয়ে রাখা চালের ওপরে দিয়ে দমে বসাতে হবে। ডেকচির মুখে ঢাকা দিয়ে আটার লেচি করে ঢাকার পাশের অংশ-ও আটকে দিতে হবে।ঢাকার ওপরে কাঠকয়লার আগুন দিয়ে কিছুক্ষণ দমে রাখতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে এলে জাফরান দুধে গুলে ওপর থেকে ছড়িয়ে দিতে হবে। শা জিরে শুকনো চাটুতে ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এই শা জিরে ভাজার গুঁড়ো আর গরমমশলাগুঁড়ো পোলাও তে ছড়িয়ে দিলেই তৈরি কিমা গুলির পোলাও।
রুই মাছের টিকলি কালিয়া
রুই মাছের প্রতি বাঙালির আলাদা ভালোবাসা। সে সুখদুঃখের সঙ্গী। তবে পন্ডিতমহলেও যে এই মাছের আলাদা কদর ছিল সেকথা অনুভব করা যায় যখন শোনা যায় "রোহিতো মৎস্য রাজেন্দ্র"- একেবারে মৎস্যসম্রাট। বাঙালির রন্ধনশিল্পে তাই রুই মাছের হরেক কিসিমের পদের সমাহার। এমনই একটি পদ টিকলি কালিয়া।
কী কী লাগবে
বড় রুই মাছ- ২ কেজি ওজনের মাছের ১ কেজি
চন্দ্রমুখী আলু- ২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ-৩০০গ্রাম
টক দই- ২৫ গ্রাম
হলুদগুঁড়ো-৩০ গ্রাম
লঙ্কাগুঁড়ো-আন্দাজমতো
বেসন- ৫০ গ্রাম
চালের গুঁড়ো- আন্দাজমতো
গন্ধরাজ বা কাগজী লেবু- ১টা
জিরে- ফোড়নের জন্য
তেজপাতা- ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
কাঁচা লঙ্কা-২/৩ টে
গোটা গরমমশলা- ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল- প্রয়োজনমতো
ঘি- আন্দাজমতো
গরমমশলা গুঁড়ো- প্রয়োজনমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
রুই মাছ ভালো করে ধুয়ে আঁশ ছাড়িয়ে বড় বড় টুকরো করে নিতে হবে। এই রান্নায় মাছের ল্যাজা ও মাথা লাগবে না। তাই ওই দুটো টুকরো সরিয়ে রাখতে হবে। অবশিষ্ট টুকরোগুলো অল্প জলে সেদ্ধ করে নিতে হবে। মাছের কাঁটা বেছে ফেলে সেদ্ধ মাছের সঙ্গে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, আদাবাটা ও লেবুর রস দিয়ে মাছ মেখে রাখতে হবে। ২ টো বড় পেঁয়াজ কুচি করে লাল করে ভেজে নিতে হবে। মাছ মাখায় পেঁয়াজভাজা, বেসন ও সামান্য চালের গুঁড়ো মিশিয়ে বেশ আঁট ভাব আনতে হবে। এবার চ্যাপ্টা গোল আকারে অথবা প্রদীপের আকারে টিকলি গড়ে সরষের তেলে ভেজে তুলতে হবে। ভাজার সময় আঁচ কমিয়ে লালচে করে ভাজতে হবে। আলু মাঝারি টুকরো করে কেটে রাখতে হবে। আদা ও পেঁয়াজ আলাদা করে বেটে নিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে আলুগুলো ভেজে নিতে হবে। কড়ায় তেল কমে এলে আর একটু তেল দিতে হবে।তেল গরম হলে তেজপাতা ও গরমমশলা থেঁতো করে ফোড়ন দিতে হবে। এবার পেঁয়াজবাটা,আদাবাটা, চিনি, হলুদ গুঁড়ো ও লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। অল্প গরম জল বারে বারে অল্প করে দিয়ে মশলা কষাতে হবে। মশলা থেকে তেল বের হলে টক দই ভালো করে ফেটিয়ে অল্প অল্প করে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ভাজা আলুগুলো দিয়ে জল দিতে হবে। জল খুব বেশি দিতে হবে না। আলু প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে টিকলিভাজাগুলো দিয়ে কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঝোল গাঢ় হলে ঘি ও গরমমশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে রাখতে হবে। সরু চালের ভাত হোক বা পোলাও অথবা ফুলকো লুচি টিকলি কালিয়ার জবাব নেই।
মাংসের উল্লাস
"নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান"-এর মতো বাঙালিদের সম্ভারে আছে নানা রান্নাও। প্রতিদিনের চেনা রান্নার বাইরের একটি পদ উল্লাস।
কী কী লাগবে
পাঁঠার মাংসের কিমা- ২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ- ১৫০-২০০গ্রাম
আদা- আন্দাজমতো
শুকনো লঙ্কা-১/২টো
কাঠবাদাম- ৭/৮টা
কিশমিশ- ৫০গ্রাম
গোলমরিচগুঁড়ো-১ চা চামচ
ছোলার ছাতু-আন্দাজমতো
দই- ৫০গ্রাম
নুন-আন্দাজমতো
ঘি- সামান্য
সাদা তেল- ভাজার জন্য
কীভাবে করতে হবে
কিমা ভালোভাবে পরিষ্কার করে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। কিশমিশ আর বাদাম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আদা, শুকনো লঙ্কা, পেঁয়াজ (২টো), জল ঝরানো কিশমিশ ও কাঠবাদাম মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। বাটা কিমায় এই বাটা মশলা, নুন, দই ও গরমমশলাগুঁড়ো মিশিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে দিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে পেঁয়াজকুচি লাল করে ভাজতে হবে। ভাজা পেঁয়াজ তুলে নিয়ে, তেল ঢেলে রেখে একটু ঘি দিয়ে মাখা মাংস ভালোভাবে কষতে হবে। বারবার নেড়ে সামান্য জলের ছিটে দিয়ে মাংস কষে নিতে হবে। এবার, এই মাংসের ভাজা পেঁয়াজ আর ছোলার ছাতু মিশিয়ে মাঝারি লম্বা মাঝারি মোটা উল্লাস গড়ে তুলতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তাতে সাদা তেল গরম করে আঁচ কমিয়ে উল্লাসগুলো ভেজে তুলতে হবে। গরম গরম উল্লাস কী পোলাও-র সঙ্গতে, কী ভাতের সঙ্গে অথবা লুচি পরোটার পাশে- সাজিয়ে দিলেই সকলের উল্লাস।