কথায় বলে, “খেতে যদি হয় সাধ,সকলই পরসাদ”। বাস্তবে এতটা না হলেও ঠিকমতো রাঁধতে জানলে যৎসামান্য জিনিসকেও যে প্রসাদতুল্য করা যায় তার প্রমাণ বাঙালির ‘বাটা’ পদ।
কোনও কোনও ‘বাটা’ কড়ায় পাক দিতে হয় আবার কোনও কোনও ‘বাটা’ সরষের তেল এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মেখে সরাসরি গরম ভাতে মেখে খাওয়া হয়। যে কোনও ‘বাটা’ পদ খাবার জন্য গরম ভাত লাগবেই। পোলাও বা অন্য কোনো ঘি-যুক্ত ভাত জাতীয় পদের সঙ্গে এদের স্বাদ খোলে না। আজ রইল মানকচু বাটা, লাউ পাতা বাটার রেসিপি। এই পদের মধ্যে ধরা আছে এক জীবন উপভোগী রন্ধননিপুণ খাদ্যবিলাসী গ্রামীণ গৃহস্থ জনজীবনের ইতিকথা। শহরবাসীর কাছেও সেই সব রান্নার কদর কম নয়।
মানকচু বাটা-
প্রবাদ বলে ‘মানের গোড়ায় ছাই’। মানে, মানকচুর গোড়ায় উনুনের ছাই দিলে তা তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। মানকচু বাংলার নিজস্ব আনাজ। এর রন্ধনের বৈশিষ্ট্যও বাঙালির নিজস্বতার পরিচয় বহন করে। বুদ্ধদেব বসু এ রান্নার উপকরণে ধনেপাতা বাটার কথা বললেও মানকচু-নারকোলবাটা-সর্ষেবাটার মিশ্রণে ধনেপাতার প্রয়োজন পড়ে না।
কী কী লাগবে?
ক’জন খাবে সেই অনুপাতে মানকচুর মুখের দিকে থেকে কেটে নিতে হবে। মধু মান অর্থাৎ যে মানে গলা চুলকাবে না সেই মানের মুখের দিক থেকে নিতে হবে। মানের নীচের দিক নিলে গলা ধরার ভয় থাকে। মানের সঙ্গে প্রায় সমান পরিমাণে নারকেল বাটা লাগবে। আর লাগবে মান ও নারকেলবাটার অর্ধেকের অল্প কম পরিমাণে সর্ষে বাটা। যারা সর্ষেবাটা খেতে পারেন না তারা সাদা সর্ষেবাটা দিতে পারেন। যদিও এই রান্নায় প্রধানতঃ কালো সর্ষেই চলে।এ ছাড়া লাগবে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের টুকরো, কাঁচালঙ্কা আর নুন ( স্বাদমতো)। প্রয়োজন মনে হলে সামান্য চিনি নেওয়া যেতে পারে।
কীভাবে রাঁধবেন
এই পদটি তৈরি করতে গেলে মানকচু বেটে নিতে হবে। মিক্সিতে করতে পারেন। তবে শিলপাটাই সেরা অস্ত্র। বাটা মানকচু কাপড়ের টুকরোর মধ্যে দিয়ে ভালো করে নিংড়ে দুধটা বের করে একেবারে শুকনো ঝরঝরে করে নিতে হবে।
নারকোল কুরিয়ে বেটে নিতে হবে। কাঁচালঙ্কা ও নুন দিয়ে সর্ষে বাটতে হবে। এবার মানকচু বাটা, নারকোল বাটা আর সর্ষেবাটা একটা বাটিতে মিশিয়ে কাঁচা সরষের তেল দিয়ে মাখতে হবে। প্রয়োজন মনে হলে সামান্য চিনি ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে মাখলেই মানকচু বাটার সুবাসে রান্নাঘর ভরপুর হয়ে উঠবে।
লাউপাতা বাটা
এই রান্নায় লাউপাতাই একমাত্র উপকরণ। বাজারে আলাদা করে লাউ শাক কিনতে পাওয়া যায় না। তাই লাউডগা কিনে সেখানে থেকেই পাতা নিতে হবে। প্রবাদ আছে “ঢলা ঢলা লাউয়ের পাতা, তোমার ভাইয়ের গোণা গাঁথা”। লাউ পাতাগুলো যেন বুড়ো না হয়। বেশ ঢলঢলে পাতায় এই পদটি ভালো হবে। “লাউশাকের বালি আর অন্তরের কালি”- দুইই সমান। কোনোটিই জলে ধুলে সহজে পরিষ্কার হয় না। তাই বারবার করে ধুতে হবে।
কী কী লাগবে-
লাউপাতা
কাঁচালঙ্কা
রসুনের স্বাদ পছন্দ করলে রসুন নিতে হবে।নয়তো না হলেও চলবে।
সরষের তেল
সামান্য কালোজিরে
নুন
কীভাবে রাঁধবেন?
লাউ পাতাগুলো ডগা থেকে ছাড়িয়ে অন্তত পনেরো মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পাতাগুলো খুব কচি হলে এমনিই রাঁধা যাবে। যদি একটু বুড়ো হয় বা শুকনো হয় তা হলে সামান্য ভাপিয়ে নিতে হবে। লাউপাতাগুলো জল ঝরিয়ে কাঁচালঙ্কা দিয়ে মিক্সি অথবা শিলে মিহি করে বেটে নিতে হবে।
এবার গ্যাসে কড়াই বসিয়ে কড়া গরম হলে সরষের তেল দিয়ে গরম করতে হবে। গরম তেলে রসুনের কোয়াগুলো কুচি করে কালোজিরের সঙ্গে ফোড়ন দিতে হবে। এবার লাউপাতা-কাঁচালঙ্কা বাটা ওই তেলে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়তে হবে। এই সময় নুন দিয়ে খুন্তি দিয়ে নেড়ে শুকিয়ে এলে নামিয়ে রাখতে হবে। গরম লাউপাতাবাটায় সরষের তেল ছড়িয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে। তবেই স্বাদে মাত করবে এ রান্না।