‘এলো বরষা সহসা মনে তাই’ বর্ষাদিনে শুধু গান নয় মনে আসে গরম গরম নানারকম ভাজা খাবার ইচ্ছেও। বর্ষাদিনের ‘সাঁতলাভাজা’র কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। বর্ষার অঝোর ঝরণের সঙ্গে গৃহস্থ বাঙালির রান্নাঘরের নানারকম ভাজাভুজির আস্বাদ বড় চমৎকারভাবে মিলেমিশে যায়। পুরনো দিনের নানা ভাজার তাজা খবর রইল আজকের লেখায়।
কাঁঠাল দানার বড়া
প্রবাদ আছে, ‘কাঁঠালটি আমায় দাও/ বিচি গুণে কড়ি নাও’। সেকালের বাঙালির মতো আজকের বাঙালিও কাঁঠাল খেয়ে তার বীজ দিয়ে নানারকম রান্না করে। তবে কাঁঠাল দানার বড়া? নিতান্ত অপরিচিত এই পদটির রেসিপি রইল এখানে।
কী কী লাগবে
কাঁঠালের দানা
ময়দা- গোলা করবার জন্য
চালের গুঁড়ো- ময়দার তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণে
নুন
সর্ষের তেল অথবা সাদা তেল
সাদা তেল- ময়ান দেবার জন্য
কীভাবে রাঁধতে হবে
কাঁঠালের দানার সাদা খড়খড়ে খোসা ছাড়িয়ে লাল খোসাও ততটা সম্ভব ছাড়িয়ে নিতে হবে। এবার জলে স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে কাঁঠাল দানাগুলো সেদ্ধ করতে হবে। যে সব দানার লাল খোসা আছে সেই সব তার খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। একটা একটা করে কাঁঠালের বীজ হাতার পেছন দিয়ে আস্তে আস্তে ফাটা ফাটা করতে হবে। কাঁঠাল বীজগুলো যেন খুলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার দু’ভাগ ময়দা আর এক ভাগ চালের গুঁড়ো নিয়ে তাতে কালোজিরে দিয়ে স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে মিশিয়ে সাদা তেল দিয়ে ময়ান দিয়ে জল দিয়ে ঘন করে গোলা তৈরি করতে হবে। কড়ায় সরষের তেল অথবা সাদা তেল খুব ভালো ভাবে গরম করতে হবে। ওই গোলায় একটা করে কাঁঠালের বীজ ডুবিয়ে আঁচ সামান্য কমিয়ে উল্টে পাল্টে বেশ করে ভাজতে হবে। মচমচে হলে নামিয়ে গরম গরম খেতে হবে।
চিংড়ি মাছের বড়া
এই বড়া ভাজার জন্য " গলদা চিংড়ি তিংড়ি মিংড়ি"-র কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলার নদী খালে বিলে যে ছোট ছোট চিংড়ির দেখা মেলে তাতেই এই বড়া তৈরি হবে।
কী কী লাগবে
ছোট চিংড়ি – ২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ- বড় হলে ১ টা। না হলে মাঝারি ২ টো।
নারকেল- আধমালা
হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচের চেয়ে একটু কম
লঙ্কা গুঁড়ো- সামান্য
গোলমরিচ গুঁড়ো- স্বাদ অনুসারে
আদাবাটা-অল্প
রসুনবাটা- অল্প
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
চালের গুঁড়ো ও ময়দা-দুটো মিশিয়ে নিতে হবে
কাঁচালঙ্কা কুচি
কীভাবে রাঁধতে হবে
চিংড়ি মাছের খোসা ও মাথাটা ফেলে দিতে হবে। এবার মাছের পিঠের দিক থেকে কালো শিরা সাবধানে বার করে নিতে হবে। এবার মাছগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নিলে বা মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। নারকেল কুড়িয়ে আধবাটা করে নিতে হবে। পেঁয়াজ ও কাঁচালঙ্কা কুচি করে নিতে হবে। চিংড়ি মাছ বাটায় নারকেল বাটা, পেঁয়াজকুচি ও কাঁচালঙ্কাকুচি, হলুদ গুঁড়ো, আদাবাটা, রসুনবাটা, নুন আর গোলমরিচগুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে মাখতে হবে। এবার আন্দাজমতো চালের গুঁড়ো ও ময়দা এমন পরিমাণে মেশাতে হবে যাতে বড়া ভাজার সময় ছেড়ে না যায়। আঁচ মাঝামাঝি রেখে বড়া ভাজতে হবে। এই বড়া ভাতের সঙ্গেও খাওয়া যায় আবার চায়ের সঙ্গে টা হিসেবেও খাওয়া যায়।
মানকচুর ঝুরি
কথায় বলে "কচুঘেচু"। নিতান্ত তাচ্ছিল্যের এই উচ্চারণটি সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে বাংলা সাহিত্যের এক নায়িকা বলেছিল, কচু মোটেই ফেলনা নয়। ‘অমৃতিভোগ কচু’ লোকে আলু ফেলে খায়। মানকচুর এক ব্যতিক্রমী পদ রান্নার পদ্ধতিটা এখানে দেওয়া হল।
কী কী লাগবে
মানকচু
হলুদ গুঁড়ো
লঙ্কার গুঁড়ো
নুন-
সর্ষের তেল- ভাজার জন্য
কীভাবে রাঁধতে হবে
মানকচুর খোসা মোটা করে ফেলে পাতলা গোল গোল করে কাটতে হবে। এবার গোল চাকাগুলো একসঙ্গে ধরে সরু সরু ঝিরিঝিরি করে কাটতে হবে। তরকারি কাটার ওপর রান্নার স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। মানকচু সরু সরু করে না কাটা হলে ভাজায় স্বাদ হবে না। কাটার পর জলে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে হলুদ আর নুন মাখিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে সরষের তেল গরম করে মানকচুর ঝুরিগুলো দিয়ে মচমচে করে ভাজতে হবে। একসঙ্গে সব মানকচু কড়ায় দিলে ভাজা মচমচে হবে না। অল্প অল্প করে ভাজতে হবে। আঁচ থাকবে মাঝারি। এই ভাজা যেমন শুধু শুধু খাওয়া যায় তেমনই ভাতের সঙ্গে ও খাওয়া যায়।