শান্তিময় নিরামিষ
শারদোৎসব শেষ।নিত্যদিনের জীবনে ফিরতে হয়েছে সকলকেই। উত্তাল আনন্দ শেষে তরঙ্গহীন শান্ত জীবনও যে সমান সুন্দর সেই অনুভবে স্থিত হতে গেলে আহার্যেও চাই স্নিগ্ধ রস। আজকের লেখায় তাই রইল শান্তিময় কিছু নিরামিষ পদের পরিচয়।
ডালফেলানি তরকারি
কী কী লাগবে
আলু-১০০ গ্রাম
মিষ্টি আলু-১০০ গ্রাম
বেগুন-১৫০গ্রাম
পটল-১৫০ গ্রাম
ঝিঙে-১৫০গ্রাম
শিম-১০০গ্রাম
মুলো-১০০গ্রাম
মিষ্টি কুমড়ো-১৫০গ্রাম
মিষ্টি কুমড়োর ডগা-১০০ গ্রাম
কাঁঠালের দানা-১০০গ্রাম
সজনে ডাঁটা-১০০গ্রাম
থোড়-১০০গ্রাম
মটরের ডাল-১৫০ গ্রাম
কাঁচা লঙ্কা-৪/৫ টা
শুকনো লঙ্কা-২টো
মেথি-ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল-আন্দাজমতো
ঘি- ১চামচ
চিনি-সামান্য
নুন-আন্দাজমতো
এই সব কটি তরকারি যে লাগবে তা নয়। মোটামুটিভাবে ৫/৬ রকমের তরকারি হলেই হবে। তবে মিষ্টি কুমড়োর ডগা, মিষ্টি কুমড়ো আর মুলো না থাকলে জমবে না।
কীভাবে রাঁধবেন
মটর ডাল ভালোভাবে ধুয়ে প্রেশার কুকারে এমনভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে যাতে ডাল গলে যাবে না আবার কাঁচাও থাকবে না। মানে, ডাল সেদ্ধ হলেও গোটা থাকবে। তরকারিগুলো ভাল ভাবে ধুয়ে মাঝারি আকারে কেটে নিতে হবে।এবার এই সেদ্ধ ডালে আলু, কাঁঠালের দানা ও মুলো দিয়ে ফোটাতে হবে। তরকারিগুলো সেদ্ধ হয়ে এলে অন্যান্য তরকারিগুলো দিয়ে নুন ও চিনি দিয়ে ফোটাতে হবে। জল কমে এলে জল দিয়ে ফোটাতে হবে। তরকারিগুলো সেদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাস থেকে নামিয়ে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল ও ঘি মিশিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা ও মেথি ফোড়ন দিয়ে তরকারি শুদ্ধু ডাল ঢেলে দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। তরকারি নরম হবে কিন্তু গলে যাবে না। ডাল আর তরকারি মিলেমিশে ঘন হয়ে এলে ঘি দিয়ে নামিয়ে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে ডালফেলানি তরকারি। এই তরকারির স্বাদ বড় কোমল, বড় স্নিগ্ধ। খাওয়া যায় ভাত, রুটি-সব কিছুর সঙ্গেই। তবে বেশি জমবে গরম ভাতের সঙ্গে।
চালতা দিয়ে মটর ডাল
হারিয়ে যাওয়া যেসব রান্নার স্বাদ বাঙালির নস্ট্যালজিয়াকে উসকে দেয় তার অন্যতম এই চালতা দিয়ে মটরের ডাল। এই ডাল, ডালের মধ্যে কুলীনের মর্যাদা পায়নি। এককালে বিধবাদের জন্য নির্ধারিত এই ডালকে কখনও তেতো সহযোগে, কখনও বা অম্ল স্বাদ যোগে হারিয়ে যাওয়া রন্ধনশিল্পীরা যে অসামান্যতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন তার প্রমাণ ধরা থাকল আজকের এই লেখায়।
কী কী লাগবে
মটরের ডাল-৫০০ গ্রাম
চালতা- ১ টা
কাঁচালঙ্কা-২/৩টে
তেজপাতা-২/৩ টে
শুকনো লঙ্কা- ২টো
সর্ষের তেল-আন্দাজমতো
সর্ষে-ফোড়নের জন্য
চিনি-সামান্য
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধবেন
চালতা ভাল করে ধুয়ে নিয়ে ওপরের খোসা ফেলে দিয়ে আধ আঙুল চওড়া করে কেটে নিতে হবে। এবার ভেতরের পাতলা খোসা টেনে ফেলে দিতে হবে। চালতার টুকরো শিলনোড়ার নোড়া দিয়ে ছেঁচে নিতে হবে। মটরের ডাল ভালোভাবে ধুয়ে প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করতে হবে। তিনটে সিটি দেওয়ার পর গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা করে ঢাকা খুলে দেখে নিতে হবে ডাল সেদ্ধ হয়েছে কি না। ডাল বেশি শক্ত থাকলে আবার সিটি দিতে হবে। মোটামুটি সেদ্ধ হয়ে গেলে চালতার টুকরো দিয়ে আবার গ্যাসে বসাতে হবে। একটা সিটি দেবার পর গ্যাস বন্ধ করে রেখে দিয়ে দেখতে হবে চালতা ও ডাল ঠিকমতো সেদ্ধ হল কিনা। সেদ্ধ হয়ে গেলে, গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা আর গোটা সর্ষে ফোড়ন দিয়ে ফোড়নের গন্ধ বের হলে ডাল ঢেলে দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। নুন আর চিনি দিয়ে ফুটিয়ে ঘন হলে নামাতে হবে। গরম ভাতে চালতা দিয়ে মটরের ডাল – ভারতীয় রন্ধনসম্ভারে এমনটি যে আর নেই তা বলাবাহুল্য।
নারকেলের বড়া
কী কী লাগবে
নারকেল-আধমালা। ঝুনো নারকেল হলে বেশি ভালো।
গোবিন্দভোগ আতপ চাল-১ কাপ
সর্ষের তেল- ভাজবার জন্য
কাঁচালঙ্কা-৪টে
চিনি- সামান্য
পোস্ত- সামান্য
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধবেন
নারকেলের বড়া যেদিন করা হবে তার আগের রাতে গোবিন্দভোগ চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। নারকেল কেনার সময় ঝুনো নারকেল দেখে কিনলে বড়ার ক্ষেত্রে ভাল হবে। নারকেল কুরিয়ে নিতে হবে। কাঁচালঙ্কা কুচি করে রাখতে হবে। গোবিন্দভোগ চাল আর নারকেল আলাদা আলাদা করে শিলপাটায় অথবা মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। এই দুটো বাটাতেই যত কম জল দেওয়া যায় ততটাই ভাল। একেবারে জল না দিয়ে বাটা হলে সবচেয়ে ভাল। একটা বড় পাত্রে নারকেল বাটা, কাঁচালঙ্কা কুচি, চিনি ও নুন ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণে ২ভাগ নারকেল বাটা ও ১ ভাগ চালবাটা এই অনুপাতে মেশাতে হবে। চাল বাটার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে বড়া শক্ত হয়ে যাবে। আবার কম হলে বড়া আঁট হবে না। কড়ায় সর্ষের তেল দিয়ে গরম করতে হবে। এইসময় বড়ার মিশ্রণে সামান্য পোস্ত ছড়িয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে চ্যাপ্টা আকারের বড়া ছাড়তে হবে। বড়া ভাজার সময় আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে। বেশি আঁচে বড়ার ওপরের অংশ ভাজা হলেও ভেতরটা কাঁচাই থাকবে। মনে রাখতে হবে, এই বড়া বাঙালির নিজস্ব উদ্ভাবন। তাই চালবাটার পরিবর্তে চালের গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়। চালের গুঁড়ো দিলে তার সঙ্গে অল্প ময়দাও দিতে হবে। সময় নিয়ে অল্প আঁচে দু পিঠ লালচে করে ভাজা হলেই তৈরি হয়ে যাবে নারকেলের বড়া। গরম ভাতে ঘি সহযোগে অথবা ডালের সঙ্গে ভাজা হিসেবে যেমন অতুলনীয় তেমনই নিরামিষ পোলাও-এর সঙ্গেও এর আস্বাদ অনবদ্য।