ভুলে যাওয়া বাঙালি রান্নাঃ ভাঙা ইলিশ আর শাপলা দিয়ে ইলিশ ঘন্ট

ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে সমুদ্রমোহনায় উঁকি দিয়েছে রূপবতী ইলিশের ঝাঁক। সেখান থেকে বাজার ঘুরে বাঙালির পাতেও আসতে শুরু করেছে আজকাল। এই ফাঁকে নতুন কিছু ইলিশের রান্না দেখে রাখা যাক।

ভাঙা ইলিশ

খুব ছোট ইলিশ মাছে ভাঙা তেমন ভাল হয় না। মাঝারি আকারের মাছেই এই রান্না জমে যায়। ভাঙায় মাছের সঙ্গে নানারকমের আনাজ ব্যবহার করা হয়। সাধারণতঃ ইলিশ মাছে তরকারি দিয়ে রান্না খুব একটা হয় না। সে দিক দিয়ে এই রান্নার বিশেষত্ব আছে।

FotoJet - 2022-07-16T130638.109

কী কী লাগবে

ইলিশ মাছ- মাছের সাইজ ৬০০ গ্রামের ওপরে 

পটল

কাঁঠালের দানা

মিষ্টি কুমড়ো

সর্ষের তেল

হলুদ গুঁড়ো

কাঁচা লঙ্কা

মেথি ও কালোজিরে

শুকনো লঙ্কা

নুন

কীভাবে রাঁধবেন

 

ইলিশ মাছ ভাল ভাবে ধুয়ে নিয়ে কাটতে হবে। অনেকে ইলিশের স্বাদ কমে যাবে বলে কাটার পরে ধুতে রাজি হন না কিন্তু কাটার পরেও ধুয়ে নেওয়াই ভালো। মাছের টুকরোগুলোতে নুন আর হলুদ মাখিয়ে একটা পাত্রে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।পটল, মিষ্টি কুমড়ো আর কাঁঠালের দানা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। মিষ্টি কুমড়োর খোসা ছাড়িয়ে মাঝারি আকারের টুকরো করে কাটতে হবে। কাঁঠালের দানার সাদা খোসা ছাড়িয়ে লালচে খোসাও ছাড়িয়ে নিতে হবে।

তারপর দানাগুলোকে লম্বালম্বিভাবে অর্ধেক করে কাটতে হবে। ওভেনে কড়াই বসিয়ে সরষের তেল দিয়ে গরম করতে হবে। তেল তেতে উঠলে মিষ্টি কুমড়ো,পটল আর কাঁঠালের দানা হালকা করে ভেজে নিতে হবে। কড়ায় তেল থাকলে তা ঢেলে নিয়ে আবার তেল দিয়ে গরম করতে হবে। তেল থেকে ধোঁয়া উঠলে গ্যাস‌ কমিয়ে নুন হলুদ মাখানো মাছের টুকরোগুলো হালকা করে ভাজতে হবে। একসঙ্গে বেশি মাছ না দেওয়াই ভালো। মাছ ভাজা হয়ে গেলে কড়ায় তেল কমে গেলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, কালোজিরে আর মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে হলুদ আর লঙ্কাগুঁড়ো জলে গুলে কড়াইতে দিতে হবে। ভাজা পটল আর কাঁঠালের দানাগুলোও এই সময় দিতে হবে। কাঁঠালের দানাগুলো একটু নরম হলে কুমড়োর টুকরোগুলো, নুন আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। আনাজ সব প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মাছগুলো দিতে হবে। মাছগুলো হাতা দিয়ে আধভাঙ্গা করতে হবে। আবার দু-তিনটে কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে অল্প জল দিয়ে তরকারি আর মাছগুলো বেশ ফোটাতে হবে। সব মিলিয়ে বেশ মাখামাখা হলে নামিয়ে রাখতে হবে।

শাপলা দিয়ে ইলিশ ঘন্ট

"শাপলা শালুকে সাজাইয়া সাজি"- শাপলা শুধু সাজি সাজাতেই লাগে না তার স্বাদও যে চমৎকার ক’জন শহরবাসী সে খবর জানেন!

 গ্রামবাংলায় সহজলভ্য বাঙালির একেবারে ঘরের জিনিষ শাপলার সঙ্গে ইলিশের মাথা- তা সে ইলিশ গঙ্গারই হোক আর পদ্মার যখন মিলেমিশে যায় তখন যে কী অপূর্ব এক স্বাদের জন্ম হয়, তা জানতে হলে এইবার করে দেখতেই হবে এই রেসিপি।

FotoJet - 2022-07-16T130121.842

কী কী লাগবে

 

শাপলা- তাজা দেখে কিনতে হবে। মাছের পরিমাণ অনুযায়ী শাপলার পরিমাণ হবে। বড় মাছের মাথা হলে ২ আঁটি শাপলা লাগবে।

ইলিশ মাছের মাথা-৬০০ গ্রাম মাপের ইলিশের মাথা

হলুদগুঁড়ো

লঙ্কা গুঁড়ো

কালোজিরে

শুকনো লঙ্কা

নুন

চিনি

আটা

সরষের তেল

 

কীভাবে রাঁধবেন

শাপলা ভালো করে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কাটতে হবে। ইলিশের মাথা ভাল করে ধুয়ে অর্ধেক করে কেটে আবার লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে। কাটা টুকরোগুলোয় নুন হলুদ মাখাতে হবে। কড়াইতে সরষের তেল ভালো করে গরম করে টুকরোগুলো ভালো করে ভেজে রাখতে হবে। শাপলা জলে সিদ্ধ করে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। জল ঝরে গেলে শাপলার সিদ্ধ টুকরোগুলো হাত দিয়ে ভালোভাবে চটকে নিতে হবে।

কড়াইতে তেল কমে এলে আরও একটু তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা, কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে, শাপলা দিতে হবে। একটু নাড়াচাড়া করে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, নুন আর সামান্য চিনি দিয়ে বেশ করে নেড়ে ইলিশের মাথার ভাজা টুকরোগুলো আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খুব ভালোভাবে মেশাতে হবে। বেশ আঁট হয়ে এলে একটু আটা ছড়িয়ে ভালো করে মিশিয়ে নামাতে হবে।

ইলিশের মালাইকারি

FotoJet - 2022-07-16T130839.434

মালয় দেশের রান্না এদেশে এসে মালাইকারিতে পরিণত হয়েছে। মালাইকারি মানেই চিংড়ি- এমনই ধারণা বেশিরভাগ বাঙালির। কিন্তু রূপসী ইলিশকেও যে নারকেলের দুধে সিক্ত করে স্বাদ বৃদ্ধি করা যায় সে পদ্ধতি অনেকেরই অজানা।ইলিশের মালাইকারি পেঁয়াজ দিয়ে বা না দিয়ে দুভাবেই রাঁধা যায়। দু-ধরণের পদ্ধতিই রইল এই লেখায়।

কী কী লাগবে

 

ইলিশ মাছ- ৬০০-৭০০গ্রাম বা তার চেয়ে বড়

নারকেল- বড় নারকেল ১টা। মাছ বড় হলে নারকেল বেশি লাগবে। নারকেলের গুঁড়ো বা নারকেলের দুধের টেট্রা প্যাক হলেও চলবে।

গোটা গরম মশলা

আদাবাটা

হলুদ গুঁড়ো

লঙ্কা গুঁড়ো

চিনি

নুন- স্বাদ অনুযায়ী

সরষের তেল

পেঁয়াজ

কাঁচা লঙ্কা

 

কীভাবে রাঁধবেন ( পেঁয়াজ ছাড়া)

ইলিশ মাছ খুব ভালোভাবে ধুয়ে মাছের ওজন অনুযায়ী কাটতে হবে। বড় মাছ হলে গাদা পেটি আলাদা করে কাটতে হবে। মাঝারি মাপের মাছ হলে গাদা পেটি একসঙ্গে গোল করে কাটতে হবে। কাটার পর ধুয়ে, মাছে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। নারকেল কুরিয়ে তাতে হালকা গরম জল দিয়ে চিপে দুধ বার করে নিতে হবে। নারকেল গুঁড়ো বা নারকেলের দুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। কড়াইতে সরষের তেল গরম করে ইলিশ মাছের টুকরোগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে। বেশি ভাজলে ইলিশের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। মাছ ভাজার পর কড়াইয় তেল থাকলে সেই তেল ঢেলে নিয়ে নতুন করে তেল দিয়ে তাতে গোটা গরম মশলা থেঁতো করে ফোড়ন দিতে হবে। এরপর কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে গন্ধ বের হলে হলুদগুঁড়ো আর লঙ্কাগুঁড়ো অল্প জলে গুলে কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে। আদাবাটা আর চিনি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে ওভেন কমিয়ে নারকেলের দুধ, চিনি, কাঁচালঙ্কা আর নুন দিতে হবে। যদি টেট্রাপ্যাকের নারকেলের দুধ ব্যবহার করা হয় তবে প্যাকেটের পুরোটাই দিতে হবে। মশলার সঙ্গে নারকেলের দুধ ভালোভাবে মিশে গেলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে ফোটাতে হবে। বেশ গাঢ় হয়ে এলে অন্য পাত্রে ঢেলে রাখতে হবে।

পেঁয়াজ দিয়ে রান্নার পদ্ধতি

 

ইলিশ মাছগুলো ভেজে নিতে হবে। কড়ায় মাছ ভাজার যে তেল থাকবে তা ঢেলে রাখতে হবে। নতুন করে তেল দিয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, হলুদগুঁড়ো লঙ্কাগুঁড়ো, নুন আর চিনি দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। অল্প করে জল দিয়ে নাড়াচাড়া করে আবারও একটু জল দিয়ে কষিয়ে মশলার কাঁচা গন্ধ দূর করতে হবে। মশলা থেকে তেল বেরোলে অল্প জল আর নারকেলের দুধ দিতে হবে। এই সময় আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে। ভাজা মাছগুলো আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে ভালোভাবে ফোটাতে হবে। বেশ গাঢ় হয়ে এলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলেই কেল্লা ফতে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...