বাঙালির চেনা প্রবাদ, "পোড়ার মুখে সবই অমৃত"। এই তালিকায় শুধু বেগুন, আলু, টমেটো পোড়ার মতো নিরামিষ তরকারি আছে তা নয়। আছে মাছের নানা পদও। কাঠের আগুনে ঝলসালে স্বাদ ভালো হয়। কিন্তু আজ সে আগুন সহজলভ্য নয়। তাই গ্যাসেও পোড়ানো যায় এমন কিছু পদ রইল আজকের লেখায়।
ইলিশ মাছ পোড়া
প্রবাদ আছে, "যখন যার কপাল পোড়ে/ পোড়া মাছ জলে পরে"। মাছ যে পুড়িয়েও খাওয়া হত এই প্রবাদই তার প্রমাণ।বর্ষার জল পেয়ে ইলিশের ঝাঁক এখন সাগর থেকে নদীর দিকে আসছে। ইলিশ খাবার সময় এখন। তাই কী ভাবে পোড়ানো যাবে ইলিশ মাছ সেটা দেখা যাক। অনেক রকম ভাবে এই মাছ পোড়ানো যায়। এখানে দু ধরণের পদ্ধতি দেওয়া হল।
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ (পেটির টুকরো হলে ভালো হয়। মাছ তেমন বড় না হলে গাদা-পেটি মেলানো টুকরো দিয়েও এই রান্না করা যায়)
গুঁড়ো হলুদ
নুন
কাঁচালঙ্কা আর সরষের তেল
মাছ গাঁথার জন্য লোহার শিক বা বাঁশের কাঠি।
কী ভাবে রাঁধতে হবে- প্রথম পদ্ধতি
ইলিশ মাছে নুন, হলুদ ও সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে রাখতে হবে। এবার লোহার শিকে বা বাঁশের কাঠিতে এমন ভাবে মাছ গাঁথতে হবে যাতে মাছ ভেঙে না যায়। মাছের সঙ্গে কাঁচালঙ্কা গাঁথলে স্বাদ ভালো হয়। গ্যাস জ্বালিয়ে বার্নারের ওপর মাছগুলো বেশ ভাল করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাছ পোড়াতে হবে।
মাছে ঝলসানোর রং ধরলে সাবধানে গরম শিক বা বাঁশের কাঠি থেকে খুলে সরষের তেল ছড়িয়ে কাঁচালঙ্কা সহযোগে গরম ভাতে মাখলেই হারানো দিনের আস্বাদ ধরা দেবে একালেও।
ইলিশ মাছ পোড়া-দ্বিতীয় পদ্ধতি
ইলিশ মাছ পোড়ানোর এই পদ্ধতিটা একটু জটিল। কিন্তু ভাল খেতে চাইলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে।
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ
হলুদ
নুন
সরষের তেল
কাঁচালঙ্কা
লোহার শিক বা বাঁশের কাঠি।
কলাপাতা
দুটো লোহার তাওয়া বা চাটু
কাঠকয়লা
কীভাবে রাঁধতে হবে
লোহার তাওয়ার ওপর তিন পরত কলাপাতা বিছিয়ে নিতে হবে। ইলিশ মাছে নুন, হলুদ, সরষের তেল মাখিয়ে মাছ পিছু একটা করে কাঁচালঙ্কা দিয়ে ওই কলাপাতার ওপরে রাখতে হবে। এবার একটা কলাপাতার বাইরের দিকে সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে মাছের গায়ের দিকে কলাপাতার তেল লাগানো দিকটা লাগিয়ে ভালোভাবে মাছ জড়িয়ে, আরও দুটো কলাপাতা দিয়ে মাছগুলোকে জড়িয়ে নিতে হবে।
এবার কলাপাতা জড়ানো সমস্ত মাছগুলোকে আর একটা লোহার তাওয়া দিয়ে ঢাকতে হবে। জ্বলন্ত গ্যাসে তাওয়া বসিয়ে মাছ ঢাকা তাওয়ার ওপরে জ্বলন্ত কাঠকয়লা রেখে অপেক্ষা করতে হবে। কাঠকয়লার আগুন যেন তাওয়ার সব জায়গায় থাকে। এই সময় গ্যাসের তাপ মাঝামাঝি রাখতে হবে। কেননা, গ্যাস 'হাই' হলে পাতা তাড়াতাড়ি পুরে যাবে কিন্তু মাছ কাঁচা থাকবে। আবার গ্যাস একদম কমিয়ে রাখলে পাতা পুড়বেই না। তাই আঁচ যেন ঠিকমতো হয়।
কলাপাতা পুড়ে এলেই গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। তাওয়ার ওপর থেকে কাঠকয়লা সরানোর আগে দেখতে হবে কলাপাতাটায় পোড়া ভাব এসেছে কিনা। এবার পোড়া মাছ আর পোড়া কাঁচালঙ্কার ওপর সরষের তেল ছড়িয়ে তাজা কাঁচালঙ্কা আর গরম ভাত -জাস্ট জমে যাবে!
পটল পোড়া
পটল বললেই পটলডাঙার প্যালারামের পটল দিয়ে শিঙি মাছের ঝোল যাদের মনে পড়ে তাদের জন্য এক সম্পূর্ণ অন্য স্বাদের পটলের রান্না এই পটল পোড়া।
গ্রীষ্মের কচি পটল এখন নববর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে উঠেছে। পটল পোড়ার জন্য সেরকম পটলই লাগবে।
কী কী লাগবে
বড় বড় একটু পাকা পটল
স্বাদ অনুযায়ী কাঁচালঙ্কা
নুন আর সরষের তেল (যারা সরষের তেল খান না তারা ঘি মেখেও পটল পোড়া খেতে পারেন)
কী ভাবে রাঁধবেন
পটল পোড়ানোর আগে অন্তত পনেরো মিনিট জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পটলের খোসা ফেলতে হবে না। খোসা ভালো করে চেঁছে নিতে হবে। তারপর পটলগুলোকে লম্বালম্বিভাবে শিকে বা বাঁশের কাঠিতে গেঁথে গ্যাসের জ্বলন্ত বার্নারের ওপর ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়াতে হবে।
যদি বাড়িতে শিক বা বাঁশের কাঠি না থাকে তবে রুটি সেঁকার তারজালির ওপর পটলগুলো সাজিয়ে পোড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একদিক পুড়ে গেলে খুন্তি দিয়ে পটল উল্টিয়ে অন্য দিকটা পোড়াতে হবে। একবারে তিন-চারটের বেশি পটল না পোড়ানোই ভাল।
পটল পোড়ার সময় বীজগুলো অনেক সময় ফেটে বেড়িয়ে এসে মুখে হাতে লেগে যায়। তাই পটল পোড়ানোর সময় একটু সাবধানে থাকতে হবে। পটলের গায়ের একটা জায়গায় সামান্য ছিদ্র করে নিলে ফাটবে কম। পটলের গায়ে সামান্য সরষের তেল অথবা ঘি মাখিয়ে পোড়ানো যায়।
পটলের গায়ে পোড়ার দাগ ধরলে শিক বা বাঁশের কাঠি থেকে খুলে বা তারজালি থেকে পটলগুলো নামিয়ে একটু ধুয়ে নিয়ে রুচি অনুযায়ী তেল বা ঘি ছড়িয়ে কাঁচালঙ্কা আর নুন সহযোগে মেখে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।