সারাদিন তুষের আগুন জ্বলছে মনের মধ্যে। কিছুতেই নেভে না। অফিসে কলিগ কেন প্রজেক্টটা ঠিক ডেলিভার করল না।
সঙ্গী বা সঙ্গিনী কেন উল্টো আচরণ করল। বাবা মা ঠিক বুঝছে না। পৃথিবীর সব অন্যায় আমার সঙ্গেই হয়।
এমন অজস্র সুতো জট পাকিয়ে যায় মনের মধ্যে। জট থেকে যত বেরিয়ে আসার ছটফটানি বাড়ে ততই জড়িয়ে যায় জাল।
অস্থির হয়ে ওঠে শরীর মন। কাজে ভুল হয়। কোনও কিছুই যেন ভাল লাগে না।
রাগ, অবসাদ এমনকি প্রতিশোধকামী মানসিকতাও। এসব কোনওটাই না হলে মনের যন্ত্রণা। সেও বেজায় কষ্টকর।
চোখের সামনে যেন একটা রাতারাতি মোটা ধোঁয়াশার পর্দা।
যা সরিয়ে খুব সুষ্ঠুভাবে ভাবতে পারে না মন।
এই অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে একটাই শব্দ। ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু তার ছোঁয়াতেই বদলে যেতে পারে গোটা দুনিয়াটা। ছুঁলেই শান্ত আগ্নেয়গিরি। গর্জে ওঠা নদীটাও অন্য স্রোতে বইতে শুরু করে। ক্ষমা।
মানুষের চরিত্রের অন্যতম শুভ গুণ। বিজ্ঞান বলে, যেভাবে মানুষের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বালানো যায় ঠিক সেভাবেই জাগিয়ে তোলা যায় ক্ষমার মানসিকতাকেও।
মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্ন এই গুণই মানব সভ্যতার প্রধান চালিকা শক্তি। ইতিহাস বারবার রূপ বদলেছে এই দুই শব্দেই।
ক্ষমা স্বর্গীয়। যে কোনও নেতি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সেই শব্দের জোরের কাছে।
১৯৯৪ থেকে ৭ জুলাই দিনটি "গ্লোবাল ফরগিভনেস ডে" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। উদ্যেশ্য শান্তি ও ভ্ৰাতৃত্ব।
খ্রিস্টান মিশনারী ধারণা থেকে দিনটির জন্ম হলেই এদিনটি আসলে মিটমাটের দিন।
যে বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়ায় বহুদিন কথা বন্ধ আজ তাকে ফোন করার দিন। কলিগের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মীয়ের মনোমালিন্য, সঙ্গী-সঙ্গিনীর সঙ্গে ছেদ বা দোষ স্বীকার। সব ভুলে এক নতুন শুরু।
এক পা এগোলে যদি সম্পর্কের গাছে নতুন পাতা ধরে তাতে ক্ষতি কী!
মনোবিজ্ঞান বলছে, যারা সহজে ক্ষমা করতে পারে তারা মানসিকভাবে অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে। জীবনে চলার পথও তুলনামূলকভাবে সহজ। মানসিক জটিলতায় ভোগে না।
তাই তাঁদের পরামর্শ, ভাল থাকতে চাইলে ক্ষমা করতে শিখুন।
মুখে যদি নাই বলতে পারেন তাহলে লেখার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। একটা চিঠি, একটা মেল কিংবা একটা মেসেজ।
শুধু অপরকে নয়, ক্ষমা করতে শিখুন নিজেকেও। নিজের ভুল, নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিলে নতুনভাবে এগোনো যায়। থাকা যায় চাপমুক্ত।
হরমোন থেকে রক্তকণিকা, হৃদয়, মস্তিষ্ক সব কিছুর ওপরই মানসিক অবস্থার প্রভাব পড়ে।
নেগেটিভ ভাবনার সঙ্গে প্রত্যেকদিনের যুদ্ধ সহজ নয়। দ্বন্দ্বে ক্ষয় হতে থাকে মন। হতেই পারে কেউ হেনস্থা করল আপনাকে। প্রিয়জনের কাছে অপমানিত হলেন। ছাড়তে শিখুন। মনে মনে বলুন, সে ভুল করেছে। কিন্তু আপনি করবেন না। ক্ষমা করুন। নিজের জীবনে এগিয়ে চলুন।
যা কষ্ট দেয় তা থেকে দূরে যাওয়াই ভাল নয় কি!