অনেকেই আছেন যাদের সকালে ঘুম থেকে উঠে চা না খেলে ঘুম ভাঙে না। বেড টি পান করেই সকাল হয় অধিকাংশ মানুষের। আসাম, দার্জিলিং প্রভৃতি জায়গায় চাষ হয় চায়ের। ঐসব জায়গা থেকেই যে আমাদের এখানে চায়ের সরবরাহ হয় তা সকলেরই জানা। এইসব বিশাল বিশাল চা বাগানগুলিতে কাজ করেন বেশির ভাগ মহিলারাই। কিন্তু কখনোই বড় কোন পোস্ট পেতে দেখা যায়নি তাদের। কিন্তু প্রায় ২০০ বছরের প্রথা ভেঙে এবার রেকর্ড গড়া হলো। সাধারণত বাগানের উচ্চপদে বরাবর আসীন থাকতে দেখা গেছে পুরুষদের। চাপাতা তোলার কাজেই বেশি দেখা যেত মহিলাদের। কিন্তু বদল এলো এই প্রথায়।
ব্রিটিশরা ভারতে চায়ের বাগান তৈরী করে মূলত আসামে। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে আসামে চায়ের বাগান তৈরী করে তারা। সেই থেকেই দেশে বিদেশে চা রপ্তানি করতে থাকে আসাম। সেই আসামের চা বাগানের দায়িত্বে বরাবরই থাকতেন পুরুষরাই। সেই এলাকার মহিলারাও চা বাগানেই কাজ করতেন কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকতো চা পাতা তোলা, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজ। কখনো কোনো মহিলাকে বাগানের বড় পোস্টে বসানোর কথা ভাবা হয়নি। কিন্তু সমাজ বদলাচ্ছে। দিন এগোচ্ছে। পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজ এগিয়ে চলেছে নারীরাও। তার প্রমাণ মিলছে প্রতি পদে পদে। যেমন প্রায় ২০০ বছরের পর প্রথম চা বাগানের দায়িত্ব পেলেন এক মহিলা। চা বাগানের ম্যানেজার পদে আসীন করা হলো মঞ্জু বড়ুয়াকে।
আপার আসামের ডিব্রুগড়ে হিলিকা চা বাগানটি ৬৩৩ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। সম্পূর্ণ এলাকাই এই মহিলা ম্যানেজারের আওতাধীন। তিনি এই সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে মোটর বাইকে, সাইকেলে বা জিপে ঘুরে ঘুরে এলাকার পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। প্রায় ২৫০০ কর্মী রয়েছেন ওই চা বাগানে| প্রথম দিকে চা বাগানের দায়িত্বে থাকা কর্তাদের বড় সাহেব বলে সম্বোধন করা হতো। যেহেতু সেই সময় ব্রিটিশদের রাজত্ব ছিল তাই তাদের বড় সাহেব সম্বোধন করার চল হয়েছিল। বর্তমানে সাহেব নেই ঠিকই তবে ডাকের মধ্যে তার টান রয়েই গেছে। সেখানকার কর্মীদের কথায়, চা বাগানের নতুন ম্যানেজার মঞ্জু বড়ুয়াকে বড় ম্যাডাম বলে ডাকার কথা তাদের বলা হয়েছে। তবে প্রথমবারের জন্য মহিলা ম্যানেজার পেয়ে বেশ খুশি চা বাগান কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। ওয়েলফেয়ার অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি পরে ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। মঞ্জু নিজের এমবিএ কোর্স করেছেন এবং তাঁর ১১ বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। চা বাগানের কাজ মানে ভোর ৬.৩০টা থেকে কাজ শুরু হয়ে যায়। সেই কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরে যথেষ্ট খুশি মঞ্জু বড়ুয়া।