ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বিভিন্নভাবে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের নিজেদের ভোট দিতে পারেন, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোটপ্রদান থেকে ভোট গণনা অব্দি যাতে সুষ্ঠুভাবে সব সম্পন্ন হয়, তার দিকে খেয়াল রেখে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই রকমই একটি অভিনব পন্থা নিল এবারে নির্বাচন কমিশন, শহর কলকাতার ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।
উত্তর কলকাতার জেলা নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু সরকার তৈরী করেছেন একটি জিঙ্গল-'আমার গর্বের কলকাতা, আমার নির্ভয়ে ভোট’। শহরের সব জায়গায় এই গান বাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কলকাতার ঐতিহ্য ও হেরিটেজ তুলে ধরে তৈরী করা হয়েছে 'এক ডজন গপ্পো'। এই প্রকল্পে কলকাতার ট্রাম, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, আর্মেনিয়ান ঘাটের কুস্তি, কলকাতার রিকশা, ফুটপাথের খাবারের জন্য বিখ্যাত ডেকার্স লেন, পুরোনো দিনের গাড়ির গ্যারেজ মেকানিক প্রভৃতি বিষয়কে থিম করে ৩৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড-এর একটি ভিডিও তৈরী করা হয়েছে। মহিলা কর্মী, বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়েও ওই ভিডিও করা হয়েছে যার মাধ্যমে সকলকে ভোট দানের আহবান জানানো হয়েছে। মানুষকে যাতে আরো বেশি করে বুথমুখী করা যায়, তার জন্যই এই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার এই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যের অন্যান্য জায়গার তুলনায় মূল কলকাতায় ভোটদানের হার অনেকটাই কম। গত ২০১৪ সালে কলকাতায় মোট ভোট পড়েছিল ৬৬.৬৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৪.২৭। পাশাপাশি বাকি রাজ্যের জেলাগুলোর তুলনায় এখানে ভোটদানের হার ছিল ১৬ শতাংশ কম। তাই এখানকার ভোট সংখ্যা বাড়াতেই এই ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্যাবলো তৈরী করে, কলকাতার অলিতে গলিতে ঘোরানো হবে। সেখানেই ওই গান বাজবে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় হোয়াটস আপ, ফেসবুক প্রভৃতির মাধ্যমে তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এছাড়াও আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অটিজমের শিকার বেশ কিছু নাগরিক ভোটাধিকার পেতে চলেছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা বেলেঘাটার প্রদীপ সেন্টার ফর অটিজম ম্যানেজমেন্টে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মোট ২২ জনের সচিত্র আবেদন নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো কেউই ভোটার কার্ড হাতে পাননি, তবে ওই সেন্টারের অন্যতম প্রধান অধ্যাপিকা মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কিছুটা যখন এগোনো গেছে তখন আরো কিছুটা এগোবে আশা করাই যায়। আবার নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু সরকার জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই প্রদীপের ছাত্রছাত্রীদের ভোটার কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বলা ভাল, এ বারে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের তথা প্রান্তিক, মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়া মানুষকে ভোটাধিকার দিচ্ছে কমিশন। ও লক্ষ্যেই আরো এক ধাপ এগোলো নির্বাচন কমিশন।