দেবী কালীর বিরহে ভগবান শিব মর্ত্যে আসার জন্যে ভটমুনির রূপ ধারণ করেন

আমাদের লোককথায় অভিশাপ দেওয়ার কাহিনী বহু প্রচলিত। অভিশাপদাতা এবং যিনি অভিশাপ গ্রহণ করেছেন পাল্টেছে দুই পক্ষেরই জীবন। বহু ক্ষেত্রে সেই নিয়ে ভিন্ন ধারার লোককথা প্রচলিত রয়েছে। ‌ উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের পাগলীকুঠিতে এবং আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্য কামাখ্যাগুড়িতে ভগবান ভটমুনিকে নিয়েও এমনই একটি লোককথা প্রচলিত রয়েছে। দেবী মহাকালী একবার কোন একটি ভুলের জন্য অভিশপ্ত হলেন। দেবীকে বলা হলো তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার পথ হবে বড় কঠিন। ‌ ভালোবাসা ফিরে পেতে দেবীকে চারবার পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম নিতে হবে। মা কালী সেই অভিশাপ মাথা পেতে গ্রহণ করেছিলেন। পৃথিবীতে ওঁর মনুষ্যজন্ম শুরু হয়। একটার পর একটা জীবন পার করতে থাকেন তিনি। পৃথিবীতে মানব জনম নেওয়ার জন্য দেবীর কোন আক্ষেপ ছিল না।

এদিকে স্বর্গে ভগবান শিব একা একা কাতর হয়ে পড়েন কালীর বিরহে। তিনি হিমালয়ে দিন গুনতে থাকেন কালীর ফেরার। ‌ এক সময় ভগবান শিব অধৈর্য হয়ে পড়েন। তিনি ঠিক করেন পৃথিবীতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মা কালীর কাছে যাবেন। ততদিনে পৃথিবীতে দু'বার জন্ম নিয়ে তৃতীয়বার জন্ম নিয়েছেন মা কালী। আরো একটা জন্মের অপেক্ষা রয়েছে। হিমালয় ছেড়ে মর্ত্যে এসেছেন তখন। ‌ পৃথিবীতে দেবতারূপে আসার উপায় নেই। ‌ তখন সাধারণ মানুষের রূপে পৃথিবীতে এসে কালীকে খুঁজে বের করতে শুরু করেন। ভগবান শিব মুনির রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। শিবের এই মুনির রূপের নাম ভটমুনি। ‌

ভটমুনির রূপ নিয়ে মহাদেব পৃথিবীতে তো এসে পড়েছেন। কিন্তু মা কালীর দেখা পাবেন কিভাবে? ক্লান্ত শিব দেবী কালীকে খুঁজতে খুঁজতে একটি গাছের নিচে বসলেন। এদিকে সাধারণ মানুষ একজন মুনিকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে যান। ‌ ধ্যানরত মুনিকে দেখে অনেকেই যত্ন করে তাঁর পুজো করতে শুরু করেন। এভাবেই ভগবান শিব দেখেন তাঁর স্ত্রী মা কালী ও ভটমুনির পুজো করছেন। মহাদেবের খোঁজ সম্পূর্ণ হয়। ভটমুনিকে মহাদেবের একটা অংশ এবং একাধারে মহাদেবেরই লৌকিক রূপ বলে ধরে নেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলার রাভা জনজাতির মধ্যে এই পুজো প্রচলিত রয়েছে। এই দুজায়গায় এই ভগবানের থান রয়েছে।

কোচবিহারের রসিকবিলের পাগলীকুঠিতে রয়েছে ভটমুনির থান। এখানে প্রত্যেক বছর মাঘ মাসের ১৫ তারিখে পুজো হয়। ‌ বাঁশজাগানি গান করে  বাঁশ পুজোর মাধ্যমে এই পুজোর সূচনা করা হয়। ভটমুনির সঙ্গে পাগলী মা, বাঘ সুর বাবা, বাবা পীর, নারায়ণ ঠাকুরের নামে ও প্রতিকী বাঁশ পুজো করা হয়। এই পুজোয় নদীর জল, কলার কাঁদি আর ডাবের প্রয়োজন হয়। এছাড়া সাদা-শালু কাপড় লাগে। এই পুজোয় কোন বলিপ্রথার প্রচলন নেই। ফল-মূল দিয়েই পুজো করা হয়। প্রসাদ হয় নিরামিষ। আমিষ প্রসাদের চল নেই ভটমুনির পুজোয়।

আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্য কামাখ্যাগুড়ির আদি মা কামাখ্যা ধামে ভটোমুনির থামে নিত্য পুজোর চল রয়েছে। পুজো করেন দয়াল রাভা। আষাঢ় মাসের ১১ তারিখে অর্থাৎ অম্বুবাচী তিথি দেখে ভটমুনির বাৎসরিক পুজো হয়। ‌ দুধ, কলা, বাতাসা দিয়ে এখানে মানত করা হয়। প্রায় ১০ থেকে ১৫ ইঞ্চি লম্বা বাঁশকে লালশালু কাপড়ে মুড়ে মাথায় ত্রিশূল আর  অন্য অস্ত্রও দিয়ে মন্ত্র পড়ে জাগানো হয়। ‌ একে বাঁশ জাগানি গান বলে। এখানে বাজনার তালে বাঁশগুলোকে মাটিতে ঠুকে ঠুকে ভক্তরা নাচ করতে করতে মাগন সংগ্রহ করে। এই দুই জায়গাতেই দেবতা ভটমুনিকেimage0.jpegজাগ্রত দেবতা হিসেবে মানা হয়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...