সার্বভৌম কোনো দেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি না পেলেও পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ সিল্যান্ড। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরণের রাষ্ট্রকে বলা হয় 'অনুরাষ্ট্র' বা মাইক্রোনেশন। এখনো পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। কিন্তু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের যা যা থাকা প্রয়োজন এই সিল্যান্ডের সবই আছে। দেশটি 'প্রিন্সিপালিটি অফ সিল্যান্ড' নামেই পরিচিত এবং আরো আশ্চর্যের বিষয় দেশটি সাগরের মধ্যে ২টি ভাসমান কংক্রিটের পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যার কোনো স্থলভাগ নেই। কিন্তু এই ভাসমান অদ্ভুত দেশটি কোথায় ! ইংল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এই 'সিল্যান্ড '- আয়তন প্রায় ৬০০০ বর্গফুট।
মজার ব্যাপার হলো এই ভাসমান দেশেরও আছে রাজধানী, যার নাম - ফোর্ট রাফস। এখানে আছে একটি মাত্র বাড়ি - সেটি রাজপ্রাসাদ। তার উপর দেখা যায় দেশটির নিজস্ব পতাকা। এখানকার প্রচলিত ভাষা ইংরেজি, মুদ্রার নাম –ডলার । সিল্যান্ড কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী তাদের ডলারের মান ইউ. এস ডলারের সমতুল্য, যদিও বাইরের দেশে এই মুদ্রা অচল। এখানকার নাগরিকদের জন্য আছে নিজস্ব পাসপোর্ট । তবে পাসপোর্ট ওয়েবসাইট থেকেও আবেদন করলে পাওয়া যায়।
কিন্তু সিল্যান্ডের এই অবকাঠামোর কারণ কি? প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ সরকার ও নৌ বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মান আক্রমণের গতিবিধি নজরদারির জন্য ইংল্যান্ডের উপকূলভাগে বেশ কিছু জলদুর্গ নির্মাণ করে। সেই পরিকল্পনায় বানানো হয়েছিল এই মউনশেল সি ফোর্ট - প্রয়োজনে সেখান থেকে আক্রমণকারী জাহাজকে আক্রমণের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর বেশ কিছু দুর্গ ব্রিটিশ বাহিনী নিজেরাই ধ্বংস করে, আর কিছু দুর্গ পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। পরবর্তী কালে ১৯৬৭-র ২রা সেপ্টেম্বর সাবেক ব্রিটিশ কর্মকর্তা মেজর প্যাডি রয় বেটস ও তার পরিবার এই জায়গার স্বত্বাধিকারী হয়ে ‘স্বাধীন নেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের কোনো দেশ 'সিলান্ড' কে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি না দিলেও কোনো রাষ্ট্র তার বিরোধিতা করে নি।
নিরাপত্তারক্ষীসহ দেশটির জনসংখ্যা মোট ২৭জন । অতীতে জার্মান দুর্বৃত্তেরা 'সিলান্ড’ আক্রমণ করে দেশটির রাজপুত্রকে অপহরণ করেছিল আর তখন থেকেই নিযুক্ত হয় নিরাপত্তা রক্ষী। বাইরে থেকে অবকাঠামোটি ২৭ জন বসবাসের উপযুক্ত মনে না হলেও এর ভিতরে থাকার জায়গা আছে। পিলারের ভিতর আছে একাধিক ঘর । অতীতে এই ঘরে ব্রিটিশ সৈন্যরা বাস করতো। বর্তমানে সিল্যান্ডের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করা হয় নিকটবর্তী ইংল্যান্ডের এস. এক্স কাউন্টি থেকে। তাছাড়া সিল্যান্ডের ভিতরে আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। সিল্যান্ডে একবার অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। সময়টি ছিল ২০০৬ সালের ২৩ জুন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগে । এতে সিল্যান্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ইংল্যান্ডের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে সিল্যান্ডকে মেরামত করা হলে ২০০৬ সালের নভেম্বরে তারা আবার সিল্যান্ডে ফিরে যান।
পর্যটক হিসেবে সিলান্ড ভ্রমণ করা যেতেই পারে। এদের ওয়েবসাইট ঘুরে কিনতে পারেন বিশিষ্ট পদ, মর্যাদাসূচক পদবি , কিনতে পারেন পণ্য। এমনকি ১০ বছরের জন্য সিল্যান্ডে কয়েক ইঞ্চি জায়গাও কিনতে পারেন যদিও সেখানে ঘুরতে গেলেও থাকার ব্যবস্থা নেই। ‘প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ডে’ যাওয়ার জন্য সাধারণত অনুমতি দেওয়া হয় না এবং সম্ভবত সেখানে যাওয়ার জন্য একটি নৌকা আগে থেকেই ব্যবস্থা করতে হয়। জরুরি বা অন্যান্য বিশেষ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ব্যুরোর কাছ থেকে পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন এবং লিখিত আবেদন করে যাওয়া যেতে পারে। তাই রেস্ত আর কৌতূহল থাকলে এখানে ঘুরে আসতেই পারেন - অভিজ্ঞতা মন্দ হবে না। সাথে যদি জায়গার মালিক হন তাহলে তো উপরি পাওনা ।