কলকাতার অফবিট জাদুঘর

বাংলায় জাদুঘর শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে আরবি শব্দ 'আজায়ব' থেকে, যার অর্থ হল ঘর বা খানা। অন্যদিকে ইংরেজি শব্দ মিউজিয়ামের মূল উৎস হল গ্ৰিক শব্দ 'মাউসিয়ন'। এই জাদুঘরেই সংরক্ষণ করে রাখা হয় প্রাচীন ও মূল্যবান জিনিসগুলিকে। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে বহু অজানা জাদুঘর। ভারতীয় জাদুঘর তো আমরা সবাই চিনি, কিন্তু তার বাইরেও আছে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা। যেগুলির নাম আমরা অনেকেই জানি না।

বাংলার অচেনা অজানা জাদুঘরগুলির নাম তুলে ধরা হল এই নিবন্ধে।

নৌকা জাদুঘর: নৌকা শব্দটা শুনলেই নদী বা সমুদ্রের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু নৌকার জাদুঘর থাকতে পারে সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না। বিভিন্ন ধরনের নৌকার মডেল‌ যেমন- সপ্তডিঙা মধুকর, ময়ূরপঙ্খী, অষ্টমুখী, সিংহমুখী, বজরা, হরপ্পার নৌকো আমুলেট, পাটিয়া, ঢোলাই, খরোকিস্তি, গোলোইয়া, পাউখিয়া, মাসুলা, তালাই, ডিঙ্গি, ভেড়ি ইত্যাদি। মোট ছেচল্লিশটি নৌকার মডেল‌ রয়েছে এখানে। এই নৌকোর মডেলগুলি তৈরি করেছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজবংশীদের দক্ষ শিল্পীরা। কলকাতার কাঁকুড়গাছির আম্বেদকর ভবনে অবস্থিত এই জাদুঘরটি ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণী দপ্তরের প্রচেষ্টায় চালু হয়েছিল।

প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা এই সংগ্রহশালায় ঘুরে আসা যায়।

Instrumental-Musuem

বাদ্য-বিথীকা জাদুঘর: বাদ্য যন্ত্রের ধ্বনির মিশ্রনে সঙ্গীত হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়। আর এই বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যার নাম বাদ্য-বিথীকা। বর্তমানে মোট প্রায় ৪৫০টিরও বেশি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে এখানে। যারা মধ্যে কিছু বাদ্যযন্ত্রের সংস্কার কার্য এখনও চলছে। এখানে বাদ্যযন্ত্রের চার ধরনের বিভাগ রয়েছে। যেমন তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র গিটার, সেতার ও অন্যদিকে বাঁশি ছাড়াও অন্য বাদ্যযন্ত্রের দেখা মিলবে এখানে। সল্টলেক সেক্টর ৩-এর পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আই.বি.২০১ অবস্থিত বাদ্য-বিথীকা। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠী এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেছিলেন। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই জাদুঘরটির রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিয়েছিল।

সোম থেকে শুক্র সকাল ১১টা থেকে ৫ টা এই সংগ্রহশালার দরজা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

Tram-Musuem

ট্রাম-জাদুঘর: শহর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল ট্রাম। আজও শহরে পথে দেখা মিলবে ট্রামের। তবে শুধু মাত্র পথে নয় জাদুঘরেও দেখা মিলবে ট্রামের। কলকাতার ট্রাম জাদুঘরের নাম 'স্মরণিকা'। উত্তর চৌরঙ্গীর ৬ নং সিধু কানু ডহরে রোডে অবস্থিত কলকাতার ট্রাম কর্পোরেশন অফিস চত্বরে রয়েছে এই জাদুঘর। এটি এশিয়ার একমাত্র ট্রামের জাদুঘর। তবে শুধু ট্রাম নয় শহরের ইতিহাস জানা যাবে এই জাদুঘরে আসলে। জাদুঘরের একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যেখানে ভ্রমণকারীরা কফি খেয়ে নিতে পারবেন। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই জাদুঘরে গিয়ে শহরের ইতিহাস জেনে নিতে পারবেন। বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহের যে কোনও দিন এই মিউজিয়াম ঘুরে দেখা যায়। সময়সীমা দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা।

RBI-Musuem

আরবিআই মিউজিয়াম: টাকা সবার কাছেই একটি মূল্যবান সম্পদ। তবে শুনলে আশ্চর্য লাগলেও একটি কথা সত্যি যে টাকার জাদুঘর রয়েছে। যেখানে ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশের দুষ্প্রাপ্য নোট ও তার ছবি রয়েছে। এছাড়াও তাদের নিয়ে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে সেখিনে। ৮ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের সেন্ট জোন্স চার্চের উল্টো দিকে অবস্থিত এই জাদুঘর। ১৯৩৪ সালে কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সূচনা হয়েছিল। যদিও পরে এখান বোম্বে শহরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূল অফিসটি স্থানান্তর করা হয়েছিল।

সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য এই সংগ্রহশালা মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা খোলা থাকে। সোমবার সম্পূর্ণ বন্ধ।  

নাট্য-জাদুঘর: থিয়েটারের মঞ্চে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন গল্পকে। থিয়েটার মঞ্চের এই ম্যাজিক দর্শকদের মুগ্ধ করে। তবে থিয়েটারের বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিষয় ও বস্তু সংগ্ৰহ করা হয় নাট্য-জাদুঘর বা থিয়েটার জাদুঘরে। পশ্চিমবঙ্গের এক মাত্র নাট্য সংগ্ৰহশালা নামে পরিচিত। তবে সল্টলেক সেক্টর ২ এলাকায় অবস্থিত এই জাদুঘর সম্পর্কে জানেন না শহরের বহু মানুষ।

সপ্তাহে ৭ দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা ঘুরে দেখা যায় সংগ্রহশালা।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...