গ্রহরাজ শনি। বিশাল বলয়ের জন্য মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে একটি সুন্দর গ্রহ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে এই গ্রহটির। রহস্যে মোড়া এই শনি গ্রহের মূল উপগ্রহ হলো এনসেলাডাস। এটি ছাড়াও সম্প্রতি আরও ৫টি উপগ্রহের সন্ধান এনেছে মহাকাশযান ক্যাসিনি। বেশ কয়েক বছরের অপেক্ষার পর মহাকাশযান ক্যাসিনি ঢুকে পড়েছিল শনিগ্রহের বলয়গুলির মধ্যে। সেইখানেই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে প্রাণ খোয়ানোর আগে যে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল শনিগ্রহের বলয়ের সম্পকে খোঁজখবর আনার। এই খোঁজখবর আনতে গিয়েই এই যানটি আবিষ্কার করে অন্য উপগ্রহগুলি ছাড়াও শনির রয়েছে আরও ৫টি উপগ্রহ যা এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছিলো। জানা গেছে, শনির বলয়ের প্রতিটি কোনায় কোনায় জমে রয়েছে বরফের পাহাড়। সেই বরফের আড়ালেই রয়ে গেছে শনি গ্রহের অন্য ৫টি উপগ্রহ।
মহাকাশযান ক্যাসিনি মৃত্যুর আগে মরিয়া হয়ে উঠেছিল শনির বলয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নানা রহস্যকে উন্মোচন করতে। সেই রহস্য উন্মোচনের এক পর্যায় এসে যানটির দৃষ্টিগোচর হয় কিছু বরফের চাঙড়। ভালো করে খেয়াল করতেই সে বুঝতে পারে এই চাঙ্গড়গুলি আসলে এক একটি উপগ্রহ যা এতদিন বরফের তৈরী বলয়ের নিচে লুকিয়ে ছিল। এই নতুন ৫টি উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে 'প্যান','অ্যাটলাস', 'ড্যাফনিস', 'প্রোমেথিউস' এবং 'প্যান্ডোরা'।
ক্যাসিনির পাঠানো এই ছবিগুলি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাতে আসার পরই সমস্ত তথ্য প্রমান খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা জানান, সত্যিই এইগুলি শনিগ্রহের নতুন ৫টি উপগ্রহ যার খোঁজ এতদিন কারোর কাছেই ছিল না। তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি উপগ্রহের শরীরই গড়ে উঠেছে ধুলোবালি এবং বরফ দিয়ে। তাদের এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স জার্নাল 'নেচার'-এ।সেই গবেষণা থেকে জানা গেছে, বলয়ের ঠিক নিচেই থাকার জন্য ক্রমাগত শনিগ্রহের বলয় থেকে ধুলোবালি এবং বরফ ছুটে আসছে এই পাঁচ উপগ্রহের দিকে। তাই তারা জানাচ্ছেন, এই বরফ ও ধুলোবালির ক্রমাগত ধাক্কার ফলে এই উপগ্রহগুলির গায়ে বেশ কয়েকটি ফুটোফাটা তৈরী হয়েছে যার সবকটিই রয়েছে উপগ্রহগুলির বিষুবরেখা বরাবর। মহাকাশযান ক্যাসিনির আনা ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে এই উপগ্রহগুলি বিষুব অঞ্চল ফুটি ফাটার সাথে সাথে এবড়োখেবড়োও। অনেকটা আলুর মতো আকৃতি গ্রহণ করেছে উপগ্রহগুলি। মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৫টি উপগ্রহের মধ্যে দুটি উপগ্রহ বলয়ের খুব কাছে অবস্থিত। সেই উপগ্রহগুলিই বেশি অসমান আকার ধারণ করেছে।