মাছ চাষ বলতে আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মিষ্টি জলের মাছ অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, ইত্যাদির কথা ভাবি, এই মাছ চাষের পরিমানও খুব বেশি। যেহেতু কম জলে এই মাছ চাষ করা যায় না, তাই চাষীরা সেই অর্থে জিওল মাছ চাষ খুব বেশি করে থাকেনা| যদিও নদী, নালা, খাল ও বিলেই এই মাছ পাওয়া যায়| সেই অর্থে বলতে গেলে বাজারে জিওল মাছের চাহিদা খুবই বেশি, দামের পরিমাণও যথেষ্ট| মাগুর সিঙ্গি, ল্যাঠা, সোল, ইত্যাদি মাছকেই জিওল মাছ বলা হয়ে থাকে| জিওল মাছ আসলে পুষ্টিকর মাছ| যা নিজের থেকে জন্মায় ও বড় হয়| কম জলে, বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত জলে বাঁচতে পারে| যেসমস্ত পুকুর কোনও কাজে আসে না সেই সব পুকুর জিওল মাছ চাষ করার জন্য উপযোগী| এই মাছ বাড়েও তাড়াতাড়ি| ৫ থেকে ৬ মাস এই মাছ চাষ করা হয়|
এবার স্বল্প জলে জিওল মাছ চাষের এরকমই এক উপায় দেখালো রাজ্যের একমাত্র অরন্যসুন্দরী অঞ্চল সুন্দরবন|
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় স্বল্প জলে জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাটি থেকে আড়াই–তিন ফুট গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে চাষ করা হচ্ছে মাছ| কই, শোল, মাগুর প্রভৃতি জিওল মাছ চাষ করা হচ্ছে এইভাবেই| সূত্রের খবর থেকে জানা গেছে যে এই মাছ চাষ করার ফলে ভীষণভাবেই উপকৃত হচ্ছেন চাষীরা, তাদের হচ্ছে সঠিক আয়| ১০-১৫ গ্রাম ওজনের জিওল মাছ কিনে সেগুলিকে ৬টি হাঁড়িতে ছেড়ে মাঝ পুকুরে হাঁড়িগুলি ভাসিয়ে রাখা হয় ১০ থেকে ১৫ মিনিট| তারপর মাছ গুলি পুকুরে ছাড়া হয় কারণ পাত্রের জলের সাথে পুকুরের জলের তাপমাত্রা এক না হলে মাছের চারা মরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়| কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাছগুলিকে ১০-১৫ মিনিট ফরমালিন দেওয়া জলে রেখে শোধন করে নেওয়াও হচ্ছে। যার ফলে শিঙি, মাগুর, কই মাছগুলি থাকছে তরতাজা| জিওল মাছের খাবার হিসাবে মাছের গুঁড়ো, হারের গুঁড়ো, সর্ষের খোল, গমের ভুসি, চালের খুদ ইত্যাদি দেওয়া হয়| যদিও এতে পুকুরের জল পচে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে কিন্তু জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে সেই সম্ভবনা দুরে থাকে| এইভাবেই মাছ চাষিদের অধিক আয়ের রাস্তা দেখাচ্ছে সুন্দরবন।