পরিবেশ কর্মী।টেলিভিশন-ব্যক্তিত্ব।গবেষক। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার। বুদ্ধিজীবী। নেপাল রাজ পরিবারের দায়িত্বশীল বধূ। স্ত্রী। মা। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে তাঁর পরিচয় তিনি ‘টাইগার প্রিন্সেস’। ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজিস্ট। পৃথিবী তাঁকে চেনে বাঘ বিশেষজ্ঞ হিসেবে।
নিজেকে সেভাবেই পরিচয় দিতে ভালোবাসেন তিনি। লতিকা নাথ।
পুরুষ প্রধান পেশায় লতিকা আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছেন নিজকে।
ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করবেন। তবে সেই স্বপ্নকে সত্যি করার পথটা সহজ ছিল না মোটেই। হলেন বাঘ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ।
তাঁর নিজের কথায়, বাবার পেশার সূত্রে পরিমন্ডলটাই ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, আইনজীবীর। কিন্তু খুব ছোবেলা থেকেই জঙ্গল তাঁকে টানত। তাই অন্য কিছু নিয়ে পড়াশোনার কথা ভাবতেই পারেননি। সাত বছর বয়সেই কী হতে চান সেই স্বপ্নটা খুব স্পষ্ট ছিল লতিকার কাছে। শুরু থেকেই হতে চেয়েছিলেন ইকোলজিস্ট।
স্নো-লেপার্ড, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, প্যান্থরের টান শেষ পর্যন্ত নিয়ে এল এই পেশায়।
এই অন্যরকম রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছিলেন বাবা’র হাত ধরে। প্রফেসর ললিত এম নাথ হরিয়ানার নামকরা চিকিৎসক। ১৯৬৯ সাল থেকে ইন্ডিয়ান বোর্ড অফ ওয়াইল্ড লাইফের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।বল্লভগড়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ তাঁর উদ্যোগেই। বাবার মুখ থেকে শুনতেন জঙ্গলের গল্প। বিপন্ন পশুদের কাহিনী। সেই থেকেই আগ্রহ জন্মায়। থাকতেন গ্রামে। হাতি, শজারু, বানর, নানা ধরনের পাখির দেখা মিলত হামেশাই।
স্কুলের ছুটি পড়লেই চলে যেতেন জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে। শীতের ছুটিতে ‘নেচার স্টাডি ক্যাম্প’ চলত।
তবে সলতে পাকানোর গল্পটা জানতে হলে আরও খানিকটা পিছিয়ে যেতে হয়। সে গল্প লতিকার একেবারে কাঁচা বয়সের গল্প। লতিকার ঠাকুরদা থাকতেন কাশ্মীরে। প্রতি বছর তিন-চার মাসের জন্য চলে যেতেন শ্রীনগর। ফার্ম ছিল সেখানে। ডেচিগ্রাম ন্যাশনাল পার্কে মাঝেমাঝেই বেড়াতে যেতেন।
মৈত্রেয়ী কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর স্কুল অফ ফরেস্টি’র স্কলারশিপ পান। সেই সূত্রেই ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাওয়া। অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ডি-ফিল করেছেন বন্য প্রাণ নিয়েই।
২৫ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে। ভারত সরকারের বনপ্রাণ মন্ত্রকে। কানহা টাইগার রিজার্ভ- এ।
১৬-১৮ ঘন্টাও কাজ করতে হয়। পিঠের রুকস্যাকের ভার ৩০কেজির ওপর। কিন্তু জঙ্গল আর বন্যপ্রাণ তাঁকে সব কিছু ভুলিয়ে দেয়।
পেশাগত ক্ষেত্রে একটা প্রশ্নের মুখে তাঁকে বারবার পড়তে হয়েছে। মহিলা হওয়ার কারণে কতটা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে?
উত্তরে লতিকা বলেন, ‘ কাজের কোনও লিঙ্গভেদ হয় না। তিনি গবেষণা করেন। সেটাই তাঁর কাজ। সেখানে কোনও স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই।’