দমদম সেন্ট্রাল জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে এবার থেকে শুনতে পাওয়া যাবে রেডিওর নানান অনুষ্ঠান। আজ থেকেই কারা দফতরের অধীনে সেখানে শুরু হতে চলেছে ইন্টারনাল রেডিও নেটওয়ার্ক 'রেডিও দমদম'। তিহার জেল ছাড়াও দেশের বেশ কিছু জেলে এই রকম বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলেও রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সংশোধনাগারে রেডিও চালু হতে চলেছে।
আসলে মানুষের জীবনে গানের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। মিউজিক থেরাপি ইতিমধ্যেই স্বীকৃত একটি বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের মন অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই কারণেই সংশোধনাগারে বন্দিদের মূলস্রোতে ফেরানোর কাজে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই রেডিও স্টেশন তা বলাই বাহুল্য। বর্তমানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত মিলিয়ে চার হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন এই সংশোধনাগারে। তাদের মধ্যে থেকেই পাঁচ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে রেডিও জকি হিসেবে। তাদের সহযোগী হিসেবে থাকবে আরও পাঁচজন। কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠিত রেডিও ষ্টেশনের রেডিও জকিরা ওই সংশোধনাগারে গিয়ে বাছাই করা রেডিও জকিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মূল রেডিও জকির তালিকায় রয়েছে তুহিন রায়, পীযুষ ঘোষ, জয়ন্ত সিংহ, জিনিয়া নন্দী এবং মনুয়া মজুমদার।
বন্দিদের বিনোদনের জন্য প্রত্যেকদিন ১০ ঘন্টা চালু থাকবে এই রেডিও স্টেশন। সকাল, দুপুর, বিকেলের বিভিন্ন স্লটে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন ওই পাঁচ আর জে। জেল সূত্রের খবর, সেখানকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে তুহিন, পীযুষ, জিনিয়ারা। তুহিন গান, যন্ত্রাণুষঙ্গে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। নাট্যচর্চায় পীযুষের ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। আবার জেলের ভেতরে মহিলাদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় কর্ত্রীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মনুয়াকে। জিনিয়াও রাজ্যের কারা দফতরের সাংস্কৃতিক জগতে নিজের পরিচিতি তৈরী করেছে। জয়ন্তর খোলা গলায় গান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এছাড়াও তার গান সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জানা রয়েছে, যা তাকে রেডিও জকি হিসেবে বেশ খানিকটা এগিয়ে রেখেছে। জেলের প্রথা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরাই যে কোনও স্থায়ী কাজে সুযোগ পান। আজ দুপুরে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তের উপস্থিতিতে 'রেডিও দমদমে'র সূচনা হল।
কারা সূত্রের খবর, দমদম জেলের ভেতরে একটি জায়গায় রেডিও সেন্টারটি তৈরী করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রেডিও দমদমের সিস্টেমে ৩৫০০ হাজার গানের স্টক করা রয়েছে। বিভিন্ন সিনেমার গানের সঙ্গে তাতে ভক্তিমূলক গানের স্টকও রয়েছে। সব ওয়ার্ডে, সেলে মাইক লাগানো হয়েছে যাতে সকলেই সব অনুষ্ঠান শুনতে পারে। চলতি রেডিও স্টেশনের মতোই পরবর্তীতে বন্দিদের অনুরোধ মতো গান শোনানোর ব্যবস্থা হবে বলে জানালেন কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আরও নতুন নতুন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে ভবিষ্যতে।