প্রথম সেলফি তোলেন এক অস্কার প্রাপক

                                   

                            বেশ  কিছু বছর ধরেই  অত্যাধুনিক মানবকুল এক অভিনব হুজুকে মজে আছে - তা হলো সেলফি। আর সাথে ভ্রাম্যভাষ  মানে যাকে মোবাইল বলি তাতেও এসেছে অভিনবত্ব।  আর তা হলো সেলফি মোড সাথে প্রবল উন্নত ক্যামেরা সেই ক্যামেরা যার যত ভালো তার ছবিও ততই ভালো। আর  তাতেই তারা মজে আছেন দিবারাত্র। আর হবে নাই বা কেন??? ছবি তোলার জন্য তো আর সারাক্ষন অন্যের উপর নির্ভর করা চলে না। কিন্তু এসব তো  হালফিলের ঘটনা। সেলফি বিষয়টির ধারণা অনেক আগেই ছিল। এই  নিয়ে আজ এক অনবদ্য তথ্য দেব। 

 

                                এই যে সেলফি নিয়ে এতো কথা বললাম জানেন কি, ভারতে প্রথম সেলফি তুলেছিলেন স্বয়ং  সত্যজিৎ রায় অবাক লাগছে !! হ্যাঁ।  সময়টা   ১৯৩৪ কী ১৯৩৫ হবে।  এই সময়ে কিন্তু  না ছিল ফ্রন্ট ক্যামেরা, না অটোমেটিক, না তার রকমফের। মাত্র ২ বছর বয়েসে পিতৃহারা সত্যজিৎ  বাবা সুকুমার রায়ের সাথে পরিচয়ের সুযোগই পান নি। পিতা-পুত্রের  পরিচয় হয় ছবি আর  খেরোর খাতার মধ্যেই দিয়ে। যাই হোক, কিশোর সত্যজিৎ ঠিক করলেন মা কে নিয়ে একটি ফটো তুলবেন।  মা সুপ্রভা দেবী ও তাতে  সম্মত   হলেন।  কিন্তু শুধু মা কেন ??  চাই  বাবা সুকুমার রায় কেও, না হয় ছবিতেই হলো প্রথম ফটো ।  বাবাকে  রাখলেন  ফ্রেমে, ছোট একটি সেন্টার টেবিলের উপর  রাখলেন বাবার ছবি। ছবির মধ্যে ছবি!

 

                           এবার তো আসল  ব্যাপারখানা।  ছবিটি তুলবে কে ? ফ্রেমে তিনজনকে থাকতে হলে উপায় কী ?  আর উপায়ের বুদ্ধিও বার করলেন তিনি। আর  এবুদ্ধি যার, গোটা বিশ্ব তাকে কুর্নিশ জানাবে এ আর আশ্চর্য কি?  কিশোর সত্যজিৎ ক্যামেরার সাটারের সুইচের সাথে সুতো এমন ভাবে বাঁধলেন নিজের বাম হাতে যাতে সুতো টানলেই ছবি উঠে যায় এবং তিনি তাঁর এই পরীক্ষায় দারুণ ভাবে সফলও হলেন । এটা কি নিছকই একটি ছবি ছিল?  এক্কেবারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফটোগ্রাফির যে শৈল্পিক দিক তা সেই বয়সে কিশোর সত্যজিতের মধ্যে ভাল মতই প্রস্ফুটিত হয়ে গেছিল ।

                               

                                     তিনি ছবিটি তোলার আগে অন্ধকার ঘরে সূর্যালোককে  এমন ভাবে কাজে লাগালেন যাতে  ছবির ফ্রেমে তিনজনই  সমান গুরুত্ব পায় । তিনজনের পজিশন রাখলেন তিন ভাবে, তিন জনের দৃষ্টি থাকল তিন দিকে। আলো আঁধারি ঘরে মা কে এমন ভাবে দাঁড় করালেন যাতে মায়ের ব্যক্তিত্বময়ী রুপটি ফুটে ওঠে,  একই  সাথে যেন  মায়ের সাদা শাড়িটিও প্রতিফলকের কাজ করে,। মায়ের মুখের ওপর স্প্লিট লাইটের ব্যবহার  লক্ষ  করলে তাঁর প্রতিভার  প্রতিফলন দেখা যাবে ।  সেলফি তো আমরা এখন অনেকেই তুলি কিন্তু এমন করেও যে সেলফি তোলা যায় তা কেউ কি কখনও ভেবেছি ?  তিনি ভেবেছিলেন সেই সময়, আর তারই এক অভিনব রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি।   এ ছবির গুরুত্ব  কতখানি  তা আজ বোঝা যায়।                    

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...