পৃথিবীর প্রথম ডাউন সিনড্রোম জুটি উদযাপন করলেন ২২ বছরের দাম্পত্য জীবন

অনেকেই বলেছিল  নিজেদের সামলাতে যারা পারে না তারা অন্যের খেয়াল কী করে রাখবে? সম্পর্ক সামলানো কী মুখের  কথা?

যাদের দৈনন্দিনের প্রায় প্রতিটা পদক্ষেপ অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে চলতে হয় তারা কী করে পারবে অন্যের দায়িত্ব নিতে?

তাতে দমে জাননি ওঁরা।  মেরিয়ান আর টমি পিলিং। বিশ্বের প্রথম বিবাহিত ডাউন সিনড্রম জুটি।  বাইশ বছর আগে আজকের দিনে ব্রিটেনের এসেক্স চার্চে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মেরিয়ান আর টমি ।

তাদের শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না।  মেরিয়ান আর টমির পরিবারের  চারপাশের মানুষের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল এই বিয়েতে সম্মত হওয়ার জন্য।

কিন্তু মেরিয়ান-এর পরিবারের কাছে তার খুশি আর ভালো থাকাই প্রধান ব্যাপার ছিল। তাই কোনো বিরোধিতাই  মেরিয়ান আর টমির সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

FotoJet - 2019-09-05T164954.186

মেরিয়ানের দিদি সিন্ডির কথায়, ‘ মেরিয়ান টমির সম্পর্ককে আমাদের মা ১০০ শতাংশ সমর্থন করেছিলেন। প্রত্যেকটা মানুষের নিজের জীবন নিজের মতো করে কাটানোর, নিজের ভালবাসাকে সুস্থ পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অধিকার আছে। সেখানে কোনো বৈষম্য থাকতে পারে না।

২২ বছর একসঙ্গে পথ চলে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছেন  মেরিয়ান আর টমি।  

তাঁদের বিয়ের সাক্ষী হতে প্রায় ২৫০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদেরি মতো ডাউন সিনড্রোমের মানুষরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন  মেরিয়ান-টমির বিয়েতে।  বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্রাইডমেড হিসেবে  যাঁরা ছিলেন তাঁরাও ওঁদের মতোই ডাউন সিনড্রোমের মানুষ।

FotoJet - 2019-09-05T164907.928  

ছোটবেলা থেকেই ‘বিগফ্যাট-হোয়াইট ওয়েডিং’র শখ ছিল মেরিয়ানের। ঠিক সেভাবেই হয়েছিল তাঁদের বিয়েটা। দুধসাদা গাউনে রাজকুমারীর মতো সেজেছিলেন তিনি। চোখে-মুখে সপ্রতিভ উচ্ছ্বাস।    

তাদের বাইশ বছরের বিবাহিত জীবনে কোনদিন কোন ঝগড়া, বিবাদ, অসন্তোষ বা ভুল বোঝাবুঝির জায়গা নেই।  অনেকের কাছেই যা রহস্য। অনেকেই জানতে চেয়েছেন তাদের সম্পর্কের পাসওয়ার্ড কী।

এই প্রশ্নের উত্তরে সিন্ডি জানিয়েছেন, ওঁরা দুজনেই একে অপরের কাছে খোলা খাতার মতো। কোন কিছুই লুকোন না পরস্পরের কাছে। একে অন্যের প্রিয়তম বন্ধু। সেটাই ওঁদের নিজেদের এবং সম্পর্কের ভাল থাকার কারণ।

বছর পঁয়তাল্লিশ এর মেরিয়ান পিলিং – এর কথায়, ‘আমাদের বিয়ের দিনটাই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা দিন। জখন টমি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন আমি দু’বার ভাবিনি ‘হ্যাঁ’ বলতে’।

মেরিয়ান- টমি এই মুহুর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তম জুটি।  ডাউন সিনড্রোমের মানুষদের যে সমাজ মূলস্রোতের মানুষ হিসেবে ভাবে না সেই ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে মেরিয়ান-টমি এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ। বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁরা।

  

 

   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...