এই প্রথমবার জাপানের বিজ্ঞানীরা মানবীয় কোষ ধারণকারী ‘অ্যানিমাল এমব্রয়ো’ তৈরি করার জন্য সরকারী অনুমতি পেল| যা এই বছরের শুরু অবধি ব্যান ছিল|
জাপানের একজন স্টেমসেল বিজ্ঞানী হিরোমিট্সু নাকৌচি, ‘ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও’ এবং ‘স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’-র টীমলিডার হিসাবে কাজ করেন| তিনি পরিকল্পনা করেন মানুষের ‘সেল’ ইঁদুরের ‘এমব্রয়ো’তে প্রবেশ করিয়ে সেটা একটি স্যারোগেট প্রাণীর(ইঁদুর) ইউটেরাসে ‘ট্রান্সপ্লান্ট’ করা হবে| তাঁর উদ্দেশ্য এমন পশু তৈরী করা, যার শরীরে মানুষের কোষ সমন্বিত অঙ্গ থাকবে, যাতে ভবিষ্যতে তা ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে| সূত্রের খবর, এতদিন এই গবেষণায় সরকারী সম্মতি ছিল না, তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে এই ব্যান তুলে নেয় জাপান সরকার| জাপানের শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রক দ্বারা কিছু নতুন ‘গাইডলাইন ইস্যু’ করা হয়, যা এই গবেষণা করতে সম্মতি দেয়| আরো জানা যায়, পরবর্তী মাসে চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া যাবে|
এর আগে ২০১৫ সালে ‘ইউনাইটেড স্টেটস’-এ হওয়া একটি ‘হিউমান-অ্যানিমাল হাইব্রিড এমব্রয়ো’ তৈরী করা হয়েছিল যা সঠিকভাবে রূপায়িত হয়নি। তবে এবারে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী|
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে আমেরিকার টেক্সাসের অস্টিনে হওয়া একটি বৈজ্ঞানিক সাক্ষাৎকারে হিরোমিট্সু নাকৌচি ও তাঁর সহকর্মীরা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা একটি ভেড়ার শরীরে মানুষের আইপিএস কোষ বিশিষ্ট ‘শীপ এমব্রয়ো’ পর্যবেক্ষণ করেন ২৮দিনের জন্য, যার ফলস্বরূপ দেখা যায়, কয়েকটি মানব-কোষ-ই মাত্র বেঁচে ছিল, তাই কোনো অঙ্গ তৈরিতে সেই পর্যবেক্ষণটি সক্ষম হয়নি| কারণ তাঁদের মতে, সম্ভবত মানুষ ও ভেড়া বা শূকর জাতীয় পশুদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য থাকায় এটি ঘটেছে|
এই বিষয়ে, ডালাস-এর ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার’ এর মানব -পশু ‘কাইমেরা’ গবেষক ‘জুন বু’ জানিয়েছেন, এগিয়ে চলার জন্য আণবিক ভিত্তি বুঝে সেই মতো কৌশল অবলম্বন করলেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে|
হিরোমিট্সু নাকৌচি জানিয়েছেন, তিনি ধীরে ধীরে পরিকল্পনার পথে এগাবেন। প্রাথমিকভাবে একটি ‘হাইব্রিড মাউস এমব্রয়ো’ সাড়ে ১৪ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হবে, যখন ওই পশুর অঙ্গগুলি প্রায় তৈরী হয়ে যাবে তখনই সেটি কাজ করবে| এই একইভাবে ইঁদুরের(Rat) মধ্যেও পর্যবেক্ষণ করা হবে সাড়ে ১৫ দিন অবধি| তারপরে নাকৌচি সরকারের কাছে 'পিগ এমব্রয়ো' নিয়ে ৭০ দিনের পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করা হবে|
জাপানের সাপ্পোরোতে ‘হকাইদো ইউনিভার্সিটি’র ‘সাইন্স-পলিসি’ গবেষক টেতসুয়া ইশি জানিয়েছেন, সতর্কতার সঙ্গে ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া ভালো, যাতে জনগনের উদ্বেগ প্রশমণ করে তাদের সঠিক ধারণা দেওয়া যায়।
অর্থাৎ আশা করা যাচ্ছে, এই পরিকল্পনা সফলভাবে এগিয়ে চললে বৈজ্ঞানিক মহলে একটি বিস্ময়কর এবং যুগান্তকারী উন্নতি হবে| যা সুদূর ভবিষ্যতে মানব জাতির জন্য লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা|