কল্পবিজ্ঞান ও বাংলা সাহিত্য - পর্ব ১

কল্পবিজ্ঞান। সে এক অজানা জগত। রূপকথার মত। কিন্তু অলীক নয়। বিজ্ঞানের সব রহস্যেরা ঘুমিয়ে থাকে এই জগতে।

বাংলা সাহিত্য এ বিষয়ে ধনী। কল্পবিজ্ঞানের নায়করাও সুপারহিরোর মত। কেউ দূর প্রদেশে পাড়ি দিয়ে সত্যি খুঁজে আনেন। মুক্তোর মত। কেউ আবার দুষ্টু লোককে শাস্তি দিয়ে মানুষের ভালো করেন। তবে কল্পবিজ্ঞানের গল্পে ‘হিরোইজম’ বলতে তার অতিপ্রাকৃত রূপের কথাই বোঝায়।

কিন্তু প্রথম বিজ্ঞান নিয়ে এমন কল্পনা করেছিলেন কে..? কার বুদ্ধি আর সাহসের মিশ্রণে জন্ম হয়েছিল কল্পবিজ্ঞান নামের মায়া-জগতের..?

তাঁর নাম জগদানন্দ রায়। ১৮৬৯ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর নদীয়ার এক অভিজাত পরিবারে জন্ম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহচ্ছায়ায় আসার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।

Jagadananda-Roy1

বিজ্ঞানের প্রতি অদম্য আকর্ষণ ছিল জগদানন্দ রায়ের সঙ্গী। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের যুক্তি আর রহস্যের ভান্ডার তাঁকে বুঁদ করে রাখত। কাগজ কেটে নানা প্রতিকৃতি তৈরী করতেন। ‘এলিয়েন’ রূপে।

তারপর কল্পনার ফানুসে ভর দিয়ে এগিয়ে চলত লেখা। এমন কিছু লেখার সূত্রেই সুযোগ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলাপ করার। দুজনে একসঙ্গে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করেন। ‘সাধনা’।

তখন ১৯০১ সাল। কবিগুরু প্রতিষ্ঠা করলেন 'ব্রহ্মচর্যাশ্রম' শিক্ষা-অঙ্গন। সব মিলিয়ে মোট পাঁচজন ছাত্র।সকলেই কবিগুরুর পরিবারের। এখানে অংক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে প্রথম নিযুক্ত হন জগদানন্দ রায়। পরে সর্বাধ্যক্ষ হয়ে সন্তানের মত লালন পালন করেছিলেন এই শিক্ষা-অঙ্গনকে।

দ্বিজেনন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন ছড়া।
‘জগদানন্দ রায় বিলোন জ্ঞান,
গেলান পুঁথি ঘর-জোড়া,
কাঁঠাল গুলান কিলিয়ে পাকান,
গাধা পিটিয়ে করেন ঘোড়া’।

শিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের খুব প্রিয় ছিলেন। রোজ নিয়ম করে গল্প শোনাতেন ওদের।

প্রকৃত অর্থেই সাধনা জগদানন্দ রায়কে পৌঁছে দিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নমাখা মন্দিরে। বিশ্ব-ভারতীতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন পরে। হয়ে ওঠেন সেই মন্দিরের একনিষ্ঠ সদস্য।

সাহিত্যচর্চার এই মন্দিরে এসে তাঁর জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।

তিনি লেখেন প্রথম কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস। ‘শুক্র ভ্রমণ’।

Jagadananda-Roy2

বাংলা সাহিত্যে নতুন আলো এসে পড়ে। কল্পবিজ্ঞানের আলো। শুক্র গ্রহে ভ্রমণ নিয়ে এই গল্প ।

কয়েকজন মানুষরূপী না-মানুষ অর্থাৎ এলিয়েনের শুক্র গ্রহে পৌঁছনোর অ্যাডভেঞ্চার। তারপর আবার তারা গ্রহান্তরে যায় ইউরেনাসে। সেই পথে বিজ্ঞানের নানা রহস্য উন্মোচন করে সেই এলিয়েনরা।

জগদানন্দ রায় রচিত কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসে এলিয়েনদের আকার-আকৃতি অনেকটাই ‘এপ’দের মত। প্রথম এলিয়েনদের কাল্পনিক ছবি তাঁর কলম থেকেই সাহিত্যের পাতায় আসে।

এছাড়াও তাঁর অন্যান্য বিজ্ঞান সংক্রান্ত বইগুলি হল ‘প্রকৃতি পরিচয়’, ‘মাছ-ব্যাঙ-সাপ’, ‘গাছপালা’, ‘বিজ্ঞানের গল্প’ ইত্যাদি।

১৯৩৩ সালের ২৫শে জুন তাঁর প্রিয় মন্দির অর্থাৎ শান্তিনিকেতনেই মৃত্যু হয় তাঁর।


বিজ্ঞানের ইতিহাসে জগদানন্দ রায় আজ এক বিস্মৃত নাম। তবে শান্তিনিকেতনের কলম আর অক্ষরেরা আজও তাঁকে স্মৃতি-বন্দী করে রেখেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...