অগ্নিকন্যা হর্ষিনী

কোনও কাজই লিঙ্গ দিয়ে বিচার হয়না। পুরুষতন্ত্র, নারীবাদ এগুলো শুধুমাত্র কথার কথা। লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। প্যাশন ভুললে চলবেনা। একটাই জীবন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ- এমনটাই মনে করেন অসাধারন সাহসী মহিলা দমকলকর্মী হর্ষিনী কানহেকার।

     নাগপুরের মেয়ে হর্ষিনী। ছোট থেকেই ডানপিটে। বড় হয়ে জীবনে কিছু একটা করবে তা ছোটবেলাতেই বুঝেছিলেন হর্ষিনীর মা-বাবা। গড়পড়তা সিলেবাসে একেবারেই মন থাকতনা হর্ষিনীর। বরাবরই স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতে ভালোবাসেন তিনি। এনসিসিতে থাকাকালীন ইউনিফর্ম পরে প্যারেড করার সময় একদিন শুনলেন দেশের প্রথম মহিলা পাইলটের কথা। শিবানি কুলকার্নি। শিবানির লড়াইয়ের গল্প মুগ্ধ করল হর্ষিনীকে, দেশের জন্য কিছু করতে হবে ভেবে নিলেন সেদিনই।

ন্যাশনাল ফায়ার সার্ভিস কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেন। মোট ৩০ টি আসনের মধ্যে প্রথমেই নাম উঠল হর্ষিনীর। ফর্ম ফিলাপের দিনই সেখানকার লোকেরা বলেছিল, সেনাবাহিনী বা বায়ুসেনার কলেজে অ্যাপ্লাই করতে। সেটা শুধুমাত্র পুরুষদের কলেজ, মহিলাদের বাছাই করা হয়না।

     কিন্তু সিলেকশনের টেলিগ্রাম এসেছিল বাড়িতে, জানান হর্ষিনী। বাছাই পর্বেও শুরু হয়েছিল সমস্যা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম রয়েছে এই কাজে। তবে জেদের কাছে হার মেনেছিল সবকিছুই। সব পরীক্ষাতেই যোগ্য প্রমাণ করে 'ফায়ার ফাইটার' হওয়ার দৌড়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন হর্ষিনী।             কলেজে প্রথমদিনেও পুরুষ সহপাঠীরা হাসাহাসি শুরু করেছিল। কারন তিনিই একমাত্র মহিলা ছিলেন, যে দমকলবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে এসেছে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সব টিপ্পনী থেমে যায়। হর্ষিনীর মিষ্টি স্বভাব এবং তেজের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় পুরুষ বাহিনী। তারাই হয়ে উঠেছিল পরবর্তীতে পরম বন্ধু। একদিনের জন্যও তিনি ক্লাস মিস করেননি। ভারী হোস পাইপ, সাকশন পাইপ ডামি দিয়ে প্র্যাকটিস হত। কলেজে থাকতেই বিভিন্ন জায়গায় আগুন নেভানোর কাজে যেতেন তিনি। মহিলা বলে তাঁর বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে অনুমতিও নেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

       ২৬ বছর বয়সে ২০০৬ সালে হর্ষিনী যোগ দেন গুজরাটের মহসেনা দমকল কেন্দ্রে। ওএনজিসি-র অধীনে ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। কিছুদিনের মধ্যেই মহসেনা দমকল কেন্দ্রের ইন চার্জের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। দিল্লি, কলকাতায় বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডাক পড়ে হর্ষিনীর। বীরাঙ্গনার বেশে হোস পাইপ হাতে তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয় দেশ। ২০১০ সালে তাঁকে বদলি করা হয় মুম্বইয়ের ড্রিলিং সার্ভিসে। দশভুজা হয়ে যে কোনও কর্তব্যেই অবিচল থেকেছেন হর্ষিনী।

বাইক চালাতে ভালোবাসেন হর্ষিনী। ভালোবাসেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে। নারীবাদ, পুরুষতন্ত্র, লিঙ্গবৈষম্যের ছক বাঁধা ধ্যানধারণার বাইরে হর্ষিনী যেন এক ঝোড়ো হাওয়া। তিনি জানেন নারীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, নারীকে সাহস জোগাতে, নারী-পুরুষের বৈষম্যকে সমাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। নতুন ভারতের প্রতিনিধি তিনি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজ এইরকম নারীর প্রয়োজন।

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...