আশা দেখাচ্ছেন মহিলা ব্রিগেড

গোটা বিশ্বের আন্তর্জাতিক চর্চায় ইতালি আমেরিকা স্পেনের ছবি। কীভাবে করোনা ভাইরাসের লাগাম হীন সংক্রমণ ছারখার করে দিচ্ছে সভ্যতা। সভ্যতা আজ আঁধারে। কিন্তু সেই আঁধারের আড়ালেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আলোক শিখার গল্প। খবরের বাইরে। অথচ সেই আশার কথাই উঠে আসার ছিল পৃথিবীর এই দুঃসময়ে।
জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক। এই ছয় দেশ। আলাদা দেশ, আলাদা রাষ্ট্র, ভাষা সংস্কৃতিও আলাদা। কিন্তু মিল একটাই। এই ছয় দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা সকলেই নারী।

বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশগুলো যেখানে করোনা ঠেকাতে গিয়ে ত্রাহিরব তুলেছে সেখানে এই ছয় দেশ আলাদা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল তারা। করোনা সংকট মোকাবিলায় নীতি প্রণয়ন এবং তা শুধুমাত্র স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন নয়, বিকল্প পথে হেঁটে দেশের অর্থনীতিকে সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মর্কেল মার্চ মাসের শুরুতেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেছিলেন ৭০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে চলেছেন। তিনি নিজেও কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। মার্চ থেকেই জার্মানিতে হুড়হুড় করে বাড়তে থাকে ভাইরাস সংক্রমণ। কিন্তু হাল ধরেন মর্কেল। ব্যাপকভাবে টেস্ট চালানো হয়। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ডেনমার্ক শুরু থেকেই করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন এত টালমাটাল অর্থনীতি সামাল দেওয়া, এই দুই দিকেই নজর দিয়েছিল। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফেডেরিক্সন লকডাউনের জেরে কর্মী সঙ্কোচন আটকানোর জন্য ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোকে বলেছিলেন সমস্ত কর্মীকে দু সপ্তাহের জন্য ছুটি বরাদ্দ করতে। একটি চুক্তিও করেছিলেন। এমন পদক্ষেপে সাফল্যও আসে। করোনা আক্রান্তের হার যেমন নিয়ন্ত্রিত হয় তেমনি অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবার ভরসা পায়।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আইসল্যান্ড সারা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে। ক্যাটরিন জ্যাকবস ডেটির দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছেন। লকডাউনের রাস্তাতেও হাঁটতে হয়নি তাঁদের। দেশের চিকিৎসক মহলের দাবী ছিল লক ডাউনের থেকেও বেশি জরুরি টেস্টিং। গণ হারে টেস্টিংই করোনা রোখার একমাত্র দাওয়াই।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন দেশের যে অংশে সব চেয়ে বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছিল সেই দক্ষিণ অংশকে ফিনল্যান্ডের বাকি অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ অংশ বাকি দেশের থেকে এখনও বিচ্ছিন্ন। বিন্দুমাত্র শৈথিল্য আসেনি নিয়ন্ত্রণে। দেশে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৬১ জন। সুস্থ হয়েছে ৩০০ জন। মৃত ৫৯।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী সোফি উইলিয়াম প্রথম দিকে করোনা বিপর্যয় সামলাতে সংকটে পড়লেও দ্রুত পরিস্থিতির রাশ নিজের হাতে তুলে নেন। বদলে যেতে শুরু করে ছবি। ইতালি, স্পেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। ১৪ মার্চ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাপকভাবে। কিন্তু করোনা আতঙ্কের চেনা ছবি বদলে গিয়েছে এই কয়েকদিনে। বেলজিয়ামে সুস্থতার হার ৬৭ শতাংশ।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন অনেকদিন ধরেই বিশ্বের নজরে। যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাতে তুখোড় আন্তর্জাতিক নেতারাও সমীহ করেন তাঁকে। নিউজিল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সেই পথেই চলেছেন জেদিন্দা। আক্রান্তের সংখ্যাও কম। মৃতের সংখ্যাও কম। দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। করোনাকে লাগাম পরানো গেলেও সে দেশের মানুষ এখনও গৃহবন্দী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...