করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল সকলেই। সংক্রমণ বাড়ছে আর ক্রমশই গোটা দেশে টেস্টকিটের ঘাটতি প্রবল হয়ে উঠেছে। কিটের হাহাকার স্বাস্থ্যমহলেও। ফলে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগে সরব রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও বিরোধীরা। আর সেই সমস্যার সমাধানে চমকপ্রদ দিশা দেখালেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। করোনা সন্ধানে তাদের হাত ধরেই আবার আসতে চলছে ফেলুদা। কিভাবে ? কখন দেখা দেবে ফেলুদা ? জানাবো আজ।
তথ্যানুসন্ধানের কাজ জারি রেখেই আবারো আসছে ফেলুদা। তবে ইনি কিন্তু মানুষ নন। দেশীয় প্রযুক্তিতে বানানো কিট। বিদেশি কিটের অভাব দূর করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স এবং ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানী সৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী নিজেরাই দেশীয় প্রযুক্তিতে বানিয়ে ফেলেছেন নতুন ধরনের কিট। যার পুরো নামটি বেশ জটিল FnCas9 Editor Linked Uniform Detectio Assay। তবে এর সংক্ষিপ্ত নামটি আপামর বাঙালির একান্তই পরিচিত, প্রিয় ফেলুদা (FELUDA) ! এর মাধ্যমে কম খরচে ও কম সময়ে সংক্রমণ পরীক্ষা সম্ভব হবে। আর এই উদ্দেশ্যেই তৈরী টেস্টকিট । করোনার সংক্রমণের কথা মাত্র একঘণ্টায় বলে দিতে পারবে এই কিট। আর খরচও অবিশ্বাস্য! বিদেশি কিটের খরচ ৪৫০০ টাকা। সেখানে মাত্র ৫০০ টাকা খরচেই বানানো যাবে এই কিট। ফলে বাড়ানো যাবে মাথা পিছু পরীক্ষার হার। আর দ্রুত পরীক্ষার করতে পারলে ঠেকানো যাবে গোষ্ঠী সংক্রমণ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সাত দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আসতে চলেছে এই দেশীয় কিট।
কিন্তু ফেলুদা এই পরীক্ষা করবে কি করে ? বিদেশি কিটের জন্য আকারে বড় ও দামি পিসিআর মেশিন লাগে। কিন্তু এই কিটের এর জন্য দরকার নেই কোনো বড় পিসিআর যন্ত্রের। যেকোনো স্থানীয় পরীক্ষাকেন্দ্রের ছোট পিসিআর যন্ত্রেই ‘ফেলুদা’-র সাহায্যে করা যাবে পরীক্ষা। এমনকি স্কুল, কলেজের ল্যাবের পিসিআরেও। দেবজ্যোতিরা জানান, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আরএনএ থাকে। প্রথমে করোনা ভাইরাসের আরএনএ-কে ডিএনএ-তে পরিবর্তন করা হয়। তারপর পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিনের সাহায্যে একটি ডিএনএ থেকে তার অসংখ্য কপি (ডিএনএ) তৈরি করা হয়। পরবর্তী ধাপে এর সঙ্গে মেশানো হয় ক্রিসপার-ক্যাস-৯ নামক ব্যাকটেরিয়া প্রোটিন। যা ভাইরাল ডিএনএ-কে চিহ্নিত করে। এর পর ওই নমুনা কাগজের স্ট্রিপে ফেলা হয়। নমুনা ফেলার পর এই স্ট্রিপে প্রথমে একটি লাইন ফুটে ওঠে। এতে বোঝা যায় স্ট্রিপটি ঠিক মতো কাজ করছে। এর পরে দ্বিতীয় একটি লাইন ফুটে উঠলে, বুঝতে হবে সেই নমুনা পজিটিভ। অর্থাৎ যাঁর নমুনা তিনি করোনা সংক্রমিত। স্ট্রিপে দ্বিতীয় লাইন ফুটে না-উঠলে সেই ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত নন।
এই প্রযুক্তি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী দুই বঙ্গসন্তান। পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই অনেক করোনা সংক্রমিত রোগীর উপরে ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলাফল খুব ইতিবাচক। বাণিজ্যিক ভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ওই পদ্ধতি বাজারে চলে আসবে বলে আশা করছে সিএসআইআর। এতে পরীক্ষার সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে এবং অনেকটা সহজ হবে শরীরে করোনা চিহ্নিতকরণের কাজ। বলতে দ্বিধা নেই এই পরিস্থিতিতে ফেলুদার অপেক্ষাতেই রয়েছেন সবাই ।