একজন লেখক বাংলায় গল্প লিখছেন অথচ তিনি বাঙালী নন এমনকি ভারতের অধিবাসীও নন সুদূর বেলজিয়ামে তার জন্ম! অদ্ভুত লাগছে না? ভাবছেন ডাহা মিথ্যে? 'ওরম মনে হয়', আপনার বিশ্বাস করতে যতই কষ্ট হোক না কেন ফাদার পল দ্যতিয়েন একজন বেলজিয়ান লেখক এবং ধর্মযাজক যিনি বাঙলা ভাষায় সাহিত্যকীর্তির মাধ্যমেই হয়ে উঠেছিলেন জগৎবিখ্যাত।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর বেলজিয়ামের রশফর শহরে জন্ম নেন পল দ্যতিয়েন। ১৯৪২ এ পল খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় জীবনযাপন শুরু করেন। একজন ধর্যযাজক হিসেবে তিনি অভিষিক্ত হন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার প্রায় দুই বছর পর পল কলকাতায় পা রাখেন এবং তারপর তিনদশক ধরে এই শহরই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর মাতৃভাষা ফরাসী, কিন্তু বাংলা যে তাঁর মাতৃভাষা নয় একথা তাঁর সাহিত্য দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি বাংলা বলতে এবং লিখতে পারেন আর দশজন বাঙালীর মতনই। 'পল দ্যতিয়েন' নামে তাঁর রচিত সাহিত্য বহুদিন ধরে বিভিন্ন বাংলা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখনীতে সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যের ছাপ বিশেষ লক্ষণীয়। বেলজিয়ামের নামুর শহরে তিনি সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেছিলেন। ভারতে পদার্পণের পর কলকাতা এবং বিশ্বভারতীতে তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা করেন। ভারতে থাকাকালীন তিনি বহু উন্নত সাহিত্যকীর্তির ছাপ রাখেন। তাঁর বিভিন্ন রচনায়, প্রবন্ধে তিনি অনবদ্য রসবোধের পরিচয় রেখেছিলেন। 'ডায়েরির ছেঁড়া পাতা' গ্রন্থটির জন্যে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘নরসিংহ দাস’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও আটপৌরে দিনপঞ্জী, রোজনামচা, তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি একজন সুঅনুবাদক হিসেবেও ছাপ রেখে গিয়েছেন। অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। 'সায়েন্ট এক্সপেরি' ও 'মিরকে ইলিড'-এর লেখা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। বাংলা এবং ফরাসি ভাষায় তাঁর বেশ কয়েকটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির তরফ থেকে রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কারে তাকে পুরস্কৃত করা হয় ২০১০ সালে। তবে শেষ জীবন তিনি তার জন্মস্থান বেলজিয়ামের কাটিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি আজীবন সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ফাদার পল কে আমরা না মনে রাখলেও লেখক ফাদার পল দ্যতিয়েন চিরকাল বাঙালির মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন।