প্রয়াত ‘মীনা’ স্রষ্টা-প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট রাম মোহন

এ প্রজন্মের কাছে মীনা অপরিচিত হলেও, ৯-এর দশকে যারা বড় হয়েছে, তাদের কাছে ‘মীনা’ ভুলে যাওয়ার নয়। মীনা, তার ভাই রাজু, তার পোষা টিয়া মিঠুর রোমাঞ্চকর নানা গল্পের মাধ্যমে সচেতনতা ও আদর্শের পাঠ পেত ছোট থেকে বড় সকলেই। সেসময় এ দেশে মেয়েদের অধিকার সুসংহত করতে এবং সচেতনতা বাড়াবার লক্ষ্যে ‘মীনা’ কার্টুন প্রচারের উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ।  গ্রহণযোগ্য একটি মুখাবয়ব সৃষ্টির জন্য তারা দ্বারস্থ হয় ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেশন’ রাম মোহনের। পরে তাঁর রং-তুলিতেই ফুটে ওঠে মীনা কার্টুনের সবার পছন্দের রূপটি। ৮৮ বছর বসয়ে চলে গেলেন সেই জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রটির স্রষ্টা।

ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে অবস্থিত হান্না-বারবারা স্টুডিওতেও মীনার প্রথম দিককার বেশ কিছু পর্ব নির্মিত হয়। পরে ভারতের রাম মোহন স্টুডিওতে মীনার বাকি পর্বগুলো নির্মাণ করা হয়। সিরিজগুলো পরিচালনা করেছিলেন রামমোহন নিজেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শিশুদের, বিশেষত মেয়েদের যেসব সমস্যা রয়েছে, তার সুন্দর সমাধান এই কার্টুন সিরিজগুলোর মাধ্যমে অত্যন্ত সহজভাবে ফুটিয়ে তোলা হত।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে খ্যাতনামা এই কার্টুনিস্টের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। ১৯৬৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে সরে দাঁড়ান। কাজ শুরু করেন প্রসাদ প্রোডাকশনের অ্যানিমেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে। ১৯৭২ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স চালু করেন, যা বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করেছিল। জাপানের ইউগো সাকোর সহযোগিতায় যৌথভাবে জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড ছবি ‘রামায়ণ: দ্য লিজেন্ড প্রিন্স রামা’ পরিচালনা করেছিলেন রাম মোহন। সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন।

রাম মোহনের মৃত্যুর খবরে অনেক অ্যানিমেশনশিল্পীই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন। প্রবীণ শিল্পী আশীষ কুলকার্নি টুইট-এ লিখেছেন, ‘রামমোহন স্যার ভারতীয় অ্যানিমেশনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তিনি সব ধরনের অ্যানিমেশনে বিপুল শিল্পী তৈরি করেছিলেন। তাঁরা বেশ কয়েক দশক ধরে শিল্পের শক্ত স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন।’

 রামমোহনকে ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেশন’ বলা হয় কারণ, ইন্ডিয়ার অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা একরকম তাঁর হাত ধরেই শুরু। শুধু দেশ নয় বিদেশের লোকজনের কাছেও তাঁর পরিচিতি মীনাকে কেন্দ্র করেই।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...