কলকাতার বিখ্যাত থিম রেস্তোরাঁ

ভারতবর্ষ হল এমনই একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বসবাস করেন। আবার রাজ্যের দিক থেকে দেখতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে বিভিন্ন কালচারের মানুষ দেখা যায়। আর তাদের মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যায় বাঙালিদের। এদের সকলের মধ্যেই কথা বলা, আচার-ব্যবহার, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি বিষয় গুলিতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তবে মানুষের চাহিদা মতন খাবারের নানা ভ্যারাইটি এখানে দেখা যায়। আর কথায় আছে বাঙালি মানেই খাদ্যরসিক। খাদ্য তালিকায় আমিষের সাথে তাল মিলিয়ে চলে নিরামিষও। এখানে খাঁটি বাঙালী খাবারের সাথে সাথে পাওয়া যায় নানা রকম বিদেশী, ভারতীয়, কোস্টাল ও ফিউশন যুক্ত খাদ্য। যেমন - জার্মানির স্প্যাযেল থেকে শুরু করে ব্রিটেনের কটেজ পাই, দক্ষিণ ভারতের উত্তাপাম হোক বা ইতালির পিৎজা-পাস্তা, উত্তর ভারতের রাজমা চাওল, আফ্রিকার ফুফু কিংবা কোনো কোস্টাল ডিশ সবই পাওয়া যায় এই কলকাতা শহরে। শুধু স্বাদের বাহার নয় কলকাতায় সাধারণ রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি থিম বেসড রেস্টুরেন্ট। যেখানে খাবারের সাথে সাথে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সুন্দর মন মাতানো পরিবেশ। কোথাও জেলখানা আবার কোথাও হন্টেড হাউস, আবার কোথাও টলিউডের থিম কোথাও গাছপালায় ভরা পরিবেশ আবার কোথাও বিমানের ভিতরকার পরিবেশ।

এখানে আমরা জেনে নেব কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি থিম রেস্তোরাঁ সম্বন্ধে-

থিম মানেই কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে কিছু তৈরী করা বা বানানো। ঠিক তেমনই কলকাতায় মাথা তুলে গড়ে উঠেছে সু-সজ্জিত বেশ কয়েকটি থিম বেসড রেস্তোরাঁ। তদের মধ্যে যেমন রয়েছে ভিন্ন সাজের বাতাবরণ সাথে রয়েছে সুস্বাদু খাবারের সমাহার। চাইলেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন পছন্দ মতন কোনো একটিতে।

১. গব্বরস্ বার অ্যান্ড কিচেন

কলকাতার ক্যামাক স্ট্রীটে অবস্থিত ‘গব্বরস্ বার অ্যান্ড কিচেন’ নাম শুনলেই ফিল্মি কালচারের আভাস মেলে। এই রেস্টুরেন্টে গেলে মনে হবে যেন গোটা বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখানেই। বলিউডের নামজাদা অভিনেতা-অভিনেত্রী ও ৬০ এর দশকের বিখ্যাত কিছু হিন্দি চলচ্চিত্রের থিমে সজ্জিত এই রেস্টুরেন্ট।

এবার তবে জেনে নেওয়া যাক খাবারের বিষয়ে, এই রেস্তোরাঁয় আসলে পাওয়া যাবে চাইনিজ, ইতালিয়ান ও ভারতীয় ফুড কুইজিন। এখানেই শেষ নয়, এই রেস্তোরাঁর মেনু কার্ডে প্রত্যেকটি ডিশের নাম বলিউড ফিল্মি নাম ও গানের স্বরূপ নামাঙ্কিত। কলকাতায় সুস্বাদু খাবারের সাথে বলিউডকে উপভোগ করতে হলে এই রেস্তোরাঁই শ্রেষ্ঠ। 

খরচ ২ জন প্রতি ১৪০০ টাকা।

 

২. কাফিলা

ব্যস্ত জীবনের মধ্যে অল্প সময়ে মধ্য প্রাচ্য ঘুরে আসতে চাইলে যেতে পারেন কাফিলাতে। কলকাতায় বসে জিভে জল আনা কাজাক ও আফগান খাবারের স্বাদ পেতে চাইলে একমাত্র আকর্ষক হল কাফিলা রেস্তোরাঁ। এই রেস্টুরেন্টটি সিটি সেন্টার ১-এ অবস্থিত।

এই রেস্তোরাঁর আকর্ষণ হল আফগানী কালচারের সাজসজ্জা ও আলোক সজ্জার মধ্যে আছে এক আলো-আঁধারির মেল বন্ধন সাথে আফগানী মিউজিকের সমারোহে আসে এক আলাদা মাত্রা।

খরচ ২ জন প্রতি ১৫০০ টাকা।

 

৩. মিরচ মসালা রেস্তোরাঁ অ্যান্ড বার

বলিউড যদি আপনার প্রিয় ঘরানা হয়ে থাকে কিংবা আপনি যদি ফিল্ম বাফ হয়ে থাকেন তাহলে চলে আসতে পারেন মির্চ মসালা রেস্তোরাঁয়। এখানে নর্থ ইন্ডিয়ান এবং চাইনিজ খাবার পরিবেশন করা হয়।

এই রেস্টুরেন্টেটি সাজানো ফিল্ম সেটের আদলে। এখানকার আরেকটি আকর্ষণ হল একটি হলুদ ট্যাক্সি, এছাড়া এই রেস্তোরাঁয় দেখতে পাওয়া যায় নানা রকমের বলিউড আর্টিফ্যাক্ট্স।

খরচ ২ জন প্রতি ৮০০ টাকা।  

 

৪.  ফিউশন ফ্যান্টাসি

ফিউশন কথাটি শুনলেই মনে হয় কিছুর সংমিশ্রণ, ঠিক তাই কলকাতার লেক রোড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ফিউশন ফ্যান্টাসি। এই রেস্টুরেন্টের তিনটি ফ্লোরে তিন রকম ভিন্ন থিম এর দেখা মিলবে। সি-ফুড এর স্বাদ পেতে চাইলে আসতে পারেন এই রেস্তোরাঁয়।

ট্রাইবাল কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে একটি ফ্লোর সাজানো আছে, অপর একটি ফ্লোরে আছে পাইরেটস অফ দি ক্যারেবিয়ান সিনেমাকে কেন্দ্র করা একটি থিম, যেখানে গেলে মনে হবে কোনো জাহাজে আছি আবার হন্টেড হাউসের কথা মাথায় রেখে একটি ফ্লোরে হরর থিম রাখা হয়েছে। সি-ফুডের সাথে ট্রাইবাল-হরর-সিপ এর মতন বাতাবরণ উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসুন ফিউশন ফ্যান্টাসি।

 খরচ ২ জন প্রতি ৭০০ টাকা।   

 

৫. সি-এস্তা-ইন

কলাকাতার বুকে সি-বিচ উপভোগ করতে চান? সন্ধ্যা বেলা সমুদ্রের পাড়ে বসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে চান? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের ভবানী সিনেমা হলের উল্টো দিকে অবস্থিত সি-এস্তা-ইন রেস্তোরাঁ।

এখানে ডেকোরেশন এমনই ভাবে করা যে মনে হবে যেন আপনি কোন এক সমুদ্রের পাড়ে বসে আছেন, বালির উপর থেকে হেঁটে এখানে প্রবেশ করতে হবে,সুস্বাদু সি-ফুডের সমাহার যা আলাদা মাত্রা আনে। এখানেই শেষ নয় ক্যান্ডেল লাইটে বসে খাদ্য উপভোগ করার ব্যবস্থাও আছে। সবমিলিয়ে সমুদ্র তটের একটা সুন্দর বাতাবরণ এই রেস্টুরেন্টের মূল আকর্ষণ। 

খরচ ২ জন প্রতি ৭০০ টাকা।    

 

৬. টলি টেলস

বাংলা সিনেমা মানেই মহানায়ক উত্তম কুমার এবং সত্যজিৎ রায়কে মনে পড়ে যায়। এই কথাটি মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে টলি টেলস রেস্তোরাঁ।

টলিউডের সকল কিংবদন্তি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছবি ও বিখ্যাত সিনেমার পোস্টার দিয়ে সজ্জিত এই রেস্টুরেন্ট। আর এখানে সন্ধ্যায় আকর্ষনীয় শো এর সাথে আসাধারণ খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।

খরচ ২ জন প্রতি ৯০০ টাকা।     

 

৭. XII জোডিয়াক

জোডিয়াক শব্দের অর্থ রাশি, কলকাতার বুকে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁয় সকল রাশি অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। এখানকার মূল আকর্ষণ হল আপনার নিজের রাশি আনুযায়ী পরিবেষণ করা হয় খাবারের তালিকা

চাইলেই আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন এই আকর্ষনীয় খাদ্য সমূহ। এই রেস্টুরেন্টের অ্যাম্বিয়েন্স পুরোটাই বিভিন্ন রাশির ছবি দিয়ে সাজানো। আরও আছে বুফের ব্যবস্থা। 

খরচ ২ জন প্রতি১১০০ টাকা  ও বুফের খরচ ৭৫০ টাকা।   

 

৮. কয়েদী কিচেন

সাধারণত আমরা জেলে কখনই যেতে চাইনা, তবে ফিল্মের মতন যদি আপনাকেও সুযোগ দেওয়া হয় জেলের ন্যায় পরিবেশে থেকে সুস্বাদু পছন্দ মতন খাবার খাবার খেয়ে প্রিয়জনের সাথে একটি সন্ধ্যা কাটানোর জন্য? আশর্য হলেন তাই তো? ঠিক এমনই এক থিমের রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন মানিস্কোয়ারের মলের কয়েদী কিচেন-এ।

এই রেস্টুরেন্টে জেলের অ্যাম্বিয়েন্সের অনুকরনে সাজানো হয়েছে। এখানকার ওয়েটার থাকে শুরু করে অন্যান্য কর্মচারীদের সাজ পোশাকেও জেলখানার কয়েদী ও দারোগাদের ন্যায়। এখানে আসলে মনে হবে আপনি একটি জেল খানার কয়েদী। 

খরচ ২ জন প্রতি১১০০ টাকা।   

 

৯. ট্রাম ডিপো

কলকাতার একটি ঐতিহ্য হল ট্রাম। এই ট্রাম পুরানো কলকাতার সময় থেকে শুরু করে এখনও চলে আসছে। আর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই দক্ষিণ কলকাতায় গড়ে উঠেছে ট্রাম ডিপো রেস্টুরেন্ট।

রেস্তোরাঁটি দেখতে সম্পূর্ণ ট্রামের মতন। এখানে পেয়ে যাবেন জয়পুরি খাবার, স্ন্যাক্স, মকটেল ও আরো অন্যান্য।

খরচ ২ জন প্রতি১১০০ টাকা।     

 

১০. স্ম্যাশ ষ্ট্রীট

স্ম্যাশ ষ্ট্রীট রেস্তোরাঁটি সাজানো হয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের জনপ্রিয় সিনেমা ‘দ্য ইনসেপশন এর ন্যায় থিমে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ইনডোর গেমের ব্যবস্থা যা এই রেস্টুরেন্টের আলাদা আকর্ষণ।

আবার একটি বিরাট স্ক্রিনে স্পোর্টসের স্ক্রিনিং হয়। এখানকার ডেকোরেশন ও অসাধারণ খাবার খাদ্য রসিক ও খেলাধূলা প্রেমীদের একমাত্র গন্তব্যস্থল। 

খরচ ২ জন প্রতি ৮০০ টাকা।     

 

সময়ের সাথে সাথে কলকাতায় বাড়ছে মানুষের চাহিদা ও সেই সাথে বদলাচ্ছে খাবারের অভ্যাস। আর এর সাথেই বেড়ে উঠছে রেস্তোরাঁর সংখ্যা। প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে একটি অপরটির তুলনায় ভারী। নানা রকম থিমের সম্ভার নিয়ে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট যা স্বভাবতই আকর্ষনীয়। আপনিও চাইলেই উপভোগ করতে পারেন এই সকল থিম বেসড রেস্টুরেন্ট গুলি।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...