বাংলার মেলা কথা: বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর মেলা

শীতকাল মানেই বাংলায় আনন্দ উৎসবের মরশুম। আর উৎসব মানে নতুন মেলা। বিভিন্ন মেলায় ঘুরতে ঘুরতে এবার আমরা পৌঁছে গেছি বাঁকুড়ার ইতিহাসের শহর বিষ্ণুপুর। প্রত্যেক বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বসে বিষ্ণুপুর মেলা। "বাংলার মেলা-কথায়" এই পর্বে আমাদের গন্তব্য বিষ্ণুপুর।

 

বিষ্ণুপুর মানেই দলমাদল কামান, বিষ্ণুপুর মানেই দ্বাদশ শতাব্দীর এক প্রাচীন সমৃদ্ধ শহর, মদনমোহন মন্দির, রাসমঞ্চ, বিষ্ণুপুর মানেই বালুচরী শাড়ি। আর এই বিষ্ণুপুরকেই রাজ্য তথা দেশের মানচিত্রে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার জন্য ১৯৮৮ সালে সূচনা হয়েছিল বিষ্ণুপুর মেলার। কিন্তু বিষ্ণুপুর তো শুধু পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে খ্যাত নয়, সংগীত, টেরাকোটা বা পোড়ামাটির তৈরী পুতুল, গহনা বা ঘর সাজানোর সামগ্রী, বালুচরী শাড়ি আর হস্তশিল্পের জন্যও  বিষ্ণুপুরের নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষ্ণুপুরের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি যাতে আরো বেশি করে প্রদর্শিত হয়, এগুলির বিপণনে যাতে আরো অগ্ৰগতি এবং উন্নয়ন ঘটতে পারে, সেইজন্যই এই  বিষ্ণুপুর মেলার সূচনা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মেলা আরো উন্নত হয়ে এখন আন্তর্জাতিক  স্বীকৃতি লাভ করেছে। পাশাপাশি গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ, বিষ্ণুপুর ঘরাণার সঙ্গীতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জেলার লোক ও আদিবাসী সংস্কৃতির উন্নতি ঘটানো এই মেলার আরেক লক্ষ্য। এই মেলা শিল্প, সুর ও জীবনের মেলা। পর্যটন, হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের মেলা হল বিষ্ণুপুর মেলা।

 

বাঁকুড়ার ও বিভিন্ন জেলার হস্তশিল্প সামগ্রীর বিভিন্ন স্টল, সরকারি নানান দফতরের স্টল বসে মেলা প্রাঙ্গণে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরা হয় মেলার সরকারি স্টলগুলোতে। নিখরচায় মেলা প্রাঙ্গণে দোকান পেয়ে থাকেন পোড়ামাটির হাটের হস্তশিল্পীরা। মেলায় বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদী সংগীত থেকে শুরু করে নানান সংগীতের আসর মাতাবেন বিভিন্ন প্রান্তের দিকপাল শিল্পীরা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস উন্মাদনা থাকে চোখে পড়ার মতো। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় ও জেলার শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের পাশাপাশি বাংলার বিখ্যাত শিল্পীরাও  সংগীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাংলা ব্যান্ডের শিল্পীরা মেলার বিভিন্ন দিনে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।

 

প্রত্যেক বছর উদ্বোধনের সময়ে বিষ্ণুপুর স্টেডিয়াম থেকে বিভিন্ন সংস্থা, শিল্পী ও ছাত্রছাত্রীদের র‌্যালি শহর পরিক্রমা করে মেলায় হাজির হয়। মেলার মাঠে পরিবেশিত হয় আদিবাসী নৃত্য, ঢাকিদের বাজনা, স্কুলপড়ুয়াদের শাস্ত্রীয় নৃত্য।

 

 বালুচরী, স্বর্ণচরীর মতো ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, বিষ্ণুপুরের অতি প্রসিদ্ধ রেশম শিল্প, পোড়ামাটি, দশাবতার তাস, পটচিত্র থেকে শুরু করে শঙ্খ, লণ্ঠন, কাঁসা প্রভৃতি হস্তশিল্পের সম্ভার নজরে পড়ে স্টলগুলিতে। আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। কত রকমের যে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় তা গুনে শেষ করা যাবে না। সারা জেলা তো বটেই, রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেও হাজার হাজার ভ্রমণার্থী ভিড় জমান এইসময় বিষ্ণুপুরে। সবমিলিয়ে শীতের আমেজ নিয়ে ইতিহাসের শহর, মন্দিরের শহর, হস্তশিল্পের শহর ও সঙ্গীতের শহর বিষ্ণুপুরে  জমে ওঠে বিষ্ণুপুর মেলা।

 

বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর মেলায় বেড়াতে ভালো লাগল বন্ধুরা? পরের সপ্তাহে আবার আমরা নতুন কোনো মেলায় বেড়াতে যাব। সমস্ত পাঠকবন্ধুকে জানাই বড়দিনের এবং ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...