বাংলার মেলা: রানীগঞ্জ সিয়ারশোল রথের মেলা

আগের মেলা পর্বেই লিখেছিলাম যে পুরো আষাঢ় মাস ধরে আমরা বিভিন্ন রথের মেলা দেখতে যাব। তাদের কোনোটা ছোট, আবার কোনোটা মস্ত বড়। গত সপ্তাহে তো গেছিলাম হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ায়; শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার মেলা দেখতে। এই সপ্তাহে আমরা যাব পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানীগঞ্জে।

সেখানে একটি "খুব বড় নয় কিন্তু দুশো বছরেরও বেশি পুরনো" রথের মেলা বসে। এখানকার রথের ঐতিহ্য কিন্তু গর্ব করার মতো। তো পাঠবন্ধুগণ, চোখ বন্ধ করে ফেলুন। মনে মনে আমার হাতে তালি দিন...... ব্যস্, পৌঁছে গেলাম পশ্চিম বর্ধমানের কোলিয়ারী শহর রানীগঞ্জের সিয়ারশোল। চলুন, জেনে নিই এখানকার রথ এবং মেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য।

Searsole1

রানীগঞ্জের সিয়ারশোলের জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী এই রথ প্রায় দু'শ বছরের প্রাচীন। এই রথযাত্রা শুরু করেছিলেন সিয়ারশোলের জমিদার গোবিন্দপ্রসাদ পন্ডিত। শুরুতে পুরীর রথের আদলে কাঠের রথ বানানো হতো এখানে। ১৯২০ বা ১৯২১ সালে কোন অজ্ঞাত কারনে আগুন লাগায় রথটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১৯২২ সালে জমিদার গোবিন্দপ্রসাদ পণ্ডিতের কন্যা হরসুন্দরী দেবী কলকাতার চিৎপুরের ধাতুশিল্পীদের দিয়ে তৈরি করালেন ৩৫ ফুটের একটি রথ যেটা সম্পূর্ণ ভাবে পিতলের আচ্ছাদনে ঢাকা।

রথের দিন জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রার সাথে এই রথের চূড়ায় অধিষ্ঠিত হন জমিদার বাড়ির কুল দেবতা দামোদর চন্দ্র জিউ। অপূর্ব সুন্দর সাজে সজ্জিত করা হয় রথটিকে এবং দেবদেবীদের। এখনো পর্যন্ত রথের দড়িতে প্রথম টান দেন জমিদার পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। রথের দড়ি ধরার জন্য রানিগঞ্জ, আসানসোল, জামুড়িয়া, পান্ডবেশ্বর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শক উপস্থিত হন।

এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বসে মেলা । এই মেলায় বর্তমান সময়ের মানুষের চাহিদা পূরণের জিনিসপত্র যেমন কেনাবেচা হয় তেমনই পুরানো চাষ আবাদের সামগ্রীও পাওয়া যায় । রানিগঞ্জের এই রথের মেলা বেশ পুরনো। সিয়ারশোল রথের মেলা এখনও গ্রামীণ মেলা হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব জায়গার মেলায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও রানিগঞ্জের সিয়ারশোলের রথের মেলায় যেন সেই প্রাচীন গ্রাম্য মেলার রূপটিই চোখে পড়ে।

Searsole2

বিশেষ করে কৃষিকার্যে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ, যেমন, লাঙ্গল, মই, জোয়াল, বর্ষার ছানি, মাছ ধরার ছিপ, পলই, জাল, বেতের আসবাব ইত্যাদি এই রথের মেলায় এখনো পাওয়া যায়। পাশাপাশি অন্যান্য শৌখিন বিভিন্ন সামগ্রীও, যেমন - পুতুল, খেলনা, কাঁচের চুড়ি, রকমারি গয়না, সাজগোজের জিনিসপত্র, চপ, ঘুগনি, জিলিপি, কটকটি ভাজা, পাঁপড় ভাজা ইত্যাদি নানাবিধ খাবার জিনিস.... কমতি নেই কোনো কিছুরই।

রথযাত্রার দিনে নতুন রাজবাড়ি থেকে পুরনো রাজবাড়ি পর্যন্ত রথটিকে ট্রাকের সাহায্যে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রথটিকে আট দিন রেখে উল্টোরথের দিন আবার নতুন রাজবাড়ির কাছে নিয়ে আসা হয়। রথের দিন সকাল থেকেই রথের দড়ি টানার জন্য এবং দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় জমান রানীগঞ্জের সিয়ারশোলে। রথযাত্রা এবং মেলায় ভক্তের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। প্রাচীন এই গ্ৰাম্য মেলায় ঘুরতে মন্দ লাগবে না কিন্তু।

বন্ধুরা, আজকের মেলা দেখা এখানে শেষ করি? আরো দু তিনটে রথের মেলা দেখতে হবে কিন্তু। তাই সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...