'ওই কাজল নয়না হরিণী'... অথবা 'নয়নে কাজল সে তো সবাই পরে/ কজনা তোমার মত চাইতে পারে'... কিংবা কবিগুরুর 'চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে'....- এরকম অজস্রভাবে কল্পনা করেছেন বিভিন্ন কবি বা গীতিকার ‘চোখ’ নিয়ে। মানুষের চোখ শরীরের অন্যতম একটি অঙ্গের পাশাপাশি তার সৌন্দর্য বৃদ্ধিরও অদ্বিতীয় একটি অঙ্গ। একটু অন্যভাবে বললে বলা যায়, চোখের ভাষা দিয়ে মানুষ তার মনের ভাষা ব্যক্ত করে। তা সে রাগ, অনুরাগ, বিরাগ যাই বলুন না কেন। এছাড়া পৃথিবীর সৌন্দর্য আমরা উপলব্ধি করতে পারি এই চোখদুটি দিয়েই। চোখের অনুভূতি আমাদের মনের অনুভূতির থেকে কিছু কম নয়। তাই আমাদের চোখ আমাদের সকলের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ তা বলাই বাহুল্য। একেবারে ছোট বয়স থেকে শুরু করে যখনই কোনো রকম সমস্যা তৈরী হয়, তখন একদম অবহেলা না করে চোখের যত্ন নেওয়া অবশ্যই উচিত।
চোখ যথেষ্ট সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। তার কর্নিয়ায় রয়েছে ছোট ছোট প্রচুর টিস্যু, যা অতিসংবেদনশীল। তাই কর্নিয়ার আঘাত জনিত সমস্যা থেকে আমাদের বেশ ভুগতে হয়। এছাড়া কর্নিয়ার ইনফেকশন থেকেও কিন্তু আমাদের ভোগান্তি হয়| আমরা সাধারনত যা দেখি, সেই বস্তুর আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করে এই কর্নিয়ার মাধ্যমেই| কর্নিয়া বেশি আঘাত পেলে বা ইনফেকশন গুরুতর আকার ধারণ করলে সেটি প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনো উপায় থাকেনা। এই বিষয়েই একটি আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছে। বেঙ্গালুরুর একটি বায়োটেক সংস্থা থ্রি ডি প্রিন্ট হিউম্যান কর্নিয়া টিস্যু আবিষ্কার করে ফেলেছে। কর্নিয়ায় কোনো রকম ক্ষতের সৃষ্টি হলে জৈবিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত সেই ক্ষত নিরাময় করবে এই কর্নিয়া টিস্যু। ওই সংস্থার বিজ্ঞানীরা একটি নভেল হাইড্রোজেলের সাহায্যে ওই থ্রি ডি কর্নিয়া টিস্যু তৈরী করেছেন। নভেল হাইড্রোজেল আসলে কর্নিয়ার স্টেম সেলে ওষুধের মত কাজ করবে। মানুষ চাইলে সেখানে ল্যাডেন হাইড্রোজেলও ব্যবহার করতে পারেন, যা কর্নিয়ায় কোনও আঘাতের উপশম হিসেবে কাজ করবে। মূলতঃ দু'জন বৈজ্ঞানিক ডঃ অরুন চন্দ্র এবং ডঃ তুহিন ভৌমিক এই বায়োটেক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন ২০১১ সালে। এর আগে এই সংস্থা থ্রি ডি প্রিন্ট হিউম্যান লিভার টিস্যু আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বৈজ্ঞানিক মহলে। এবারেও এই আবিষ্কার যথারীতি সাড়া ফেলে দিয়েছে। তাই বলাই যায়, জৈব পদ্ধতিতে চোখের কর্নিয়ার চিকিৎসা শুরু হলে আমাদের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে আমরা নিশ্চিন্ত হব।