রাজ্যে কিছু মেডিক্যাল পড়ুয়াদের জন্য কলেজগুলিতে অতিরিক্ত আসন বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজগুলির তরফে। দেশে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের সাহায্যার্থে এবং চিকিৎসক সংকটের সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন রাজ্যকে কেন্দ্র, এমবিবিএস এবং এমডিএমএস-এর আসন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে বলেছিল। মেডিক্যাল কলেজের ইকনমিক্যালি উইকার সেকশন সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই মত কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায়, তাদের মোট ২৬৪ টি আসন ইডব্লিউএস সংরক্ষণ অনুযায়ী বাড়ানো যেতে পারে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি খতিয়ে দেখেই এই আসন সংখ্যা স্থির করা হয়েছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা ভেবেছিলেন, কেন্দ্র তাদের এই দাবি নস্যাৎ করবে না।
অবাক হবার পালা ছিল পরবর্তীতে। সম্প্রতি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যে চিঠি এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, নামঞ্জুর তো হয়ইনি, উপরন্তু কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যের ১১টি মেডিক্যাল কলেজে এই সংরক্ষণ বাবদ ৪৫০টি আসন বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। বুঝুন ঠ্যালা। কখনও কিছু চেয়ে চেয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা, আবার কখনো যা চাওয়া হচ্ছে, তার চাইতে বেশি এসে যাচ্ছে। তবে এটা সত্যি কথা, এবারের নিটে কাউন্সেলিং-এ অংশ নিতে চলা রাজ্যের পড়ুয়াদের কাছে এই খবর অত্যন্ত খুশির। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন জোকার ইএসআই মেডিক্যাল কলেজকে আরও ২৫টি এমবিবিএস আসন বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে তারা।
বর্তমানে পিজি হাসপাতালে ১৫০টি এমবিবিএস আসন রয়েছে, কেন্দ্র আরও ৫০টি আসন বাড়াতে বলেছে। বাঁকুড়া সম্মিলনীতেও একইভাবে ৫০টি আসন বাড়িয়ে ২০০ টি আসন করার প্রস্তাব এসেছে। বর্ধমানের বর্তমানে ১৫০ আসনের জায়গায় ২০০ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে কেন্দ্র। চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজিকর-এই দুটি মেডিক্যাল কলেজে ২০০টি আসন রয়েছে এখন, যা বাড়িয়ে ২৫০ টি করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। ওই হাসপাতালগুলোতেও ৫০টি করে আসন সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কল্যাণী এবং সাগর দত্ত দুটি মেডিক্যাল কলেজে ২৫ টি করে আসন বাড়িয়ে মোট ১২৫টি আসন করার প্রস্তাব এসেছে। মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের কলেজে ২৫টি করে আসন বাড়ানোর কথা বলেছে কেন্দ্র। যার ফলে এই কলেজগুলিতে আসনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২৫। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং উত্তরবঙ্গের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ডাক্তারি আসন সংখ্যা ১৫০টির জায়গায় কলেজ প্রতি ৫০টি করে আসন বাড়িয়ে ২০০ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে এই খবরে। তাঁদের বক্তব্য, ৪৫০টি আসন পেলেই তো হলনা, তার জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো চাই। বর্তমানে রাজ্যের অতিরিক্ত ২৬৪টি আসনের পরিকাঠামো রয়েছে, তারও বেশি ১৮৬ টি আসনের পরিকাঠামো তৈরী হবে কিভাবে? কলেজের হোস্টেল, ক্লাসে বসানোর বন্দোবস্ত সহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই, তাই অসুবিধায় পড়তে হতেই পারে। তাই ২৬৪টির বেশি আসনে ইডব্লিউএস চালু করার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ প্রদীপ মিত্র জানান, তাঁরা অনেক ভেবেচিন্তে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।