উল্টোরথ, মানেই জগন্নাথের বাড়ি ফেরার পালা। উল্টোরথের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় রথযাত্রার উৎসব। আজও বাংলার নানান জায়গায় অনন্যভাবে উদযাপিত হয় রথযাত্রা। সেখানে থাকেন না জগন্নাথ, বলভদ্রদেব এবং সুভদ্রা। যেমন জানবাজারের রানি রাসমণির রথ, তাঁর রথে চাপেন রানিমার কূলদেবতা।
উত্তর কলকাতার কাশীপুরের দে পরিবারের রথও ব্যতিক্রমী। ৩০০ বছরের প্রাচীন দে পরিবারে গোপীনাথ জিউ রথযাত্রায় বের হন। রথে থাকে না জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। রথে বসে মাসির বাড়ি যান দে পরিবারের কূলদেবতা, কষ্টিপাথরের নারায়ণ শীলা। দে বাড়ির মন্দিরে নিত্যপূজিত স্বয়ং নারায়ণ স্বপ্নাদেশ দিয়ে রথে চাপার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বলে শোনা যায়। রাজবেশে নারায়ণ শীলাকে ফুলমালায় সাজিয়ে রথে ঘোরানো হয়ে থাকে। রথযাত্রার দিন মন্দিরে নারায়ণকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। নানারকম ফল, মিষ্টির নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়।
তিয়রবেড়িয়ার শতাব্দী প্রাচীন পিতলের রথে চাপেন জমিদার সামন্তদের কূলদেবতা শ্রীশ্রী মদন গোপাল জিউ, রাধারাণী ও শালগ্রাম শীলা রঘুনাথ জিউ। অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্যতম বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা এটি।
১০৬৯ বঙ্গাব্দে হুগলির খানাকুল থেকে রানাঘাটে চলে আসেন মহেশচন্দ্র পাল। পান কারবার শুরু করায় পালের বদলে লোকে তাঁদের পান্তি বলে ডাকতে আরম্ভ করে। মহারাজ শিবচন্দ্র চৌধুরী উপাধি দিলেন তাঁদের। রানাঘাট গ্রাম নিলামে কিনে নিয়েছিলেন কৃষ্ণপান্তি। তাঁর আমলে শুরু হয় রথযাত্রা। পান্তিবাড়ির মন্দিরে জগন্নাথের নিত্য পুজো হয়। কিন্তু রথে চড়েন নারায়ণ। এখানে বাংলা অনন্য! বর্ধিষ্ণু বাঙালি পরিবারগুলো রথে কূলদেবতাদের চাপাতে আরম্ভ করেন। ব্যতিক্রমী রথযাত্রার পরিচিতি পায় এই সব পরিবারের রথগুলি।