এই নিয়ে তিন বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময়সীমা ক্রমেই কমে আসছে। এদিকে নতুন নতুন নিয়মের জন্য খাতা দেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় খাতা দেখার সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, পরীক্ষকদের অনেকেই। এর সঙ্গে বানান ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে না বলে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তাও রদ করতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফ থেকে জানান হয়েছে যে, গত বছর খাতা দেখার সময়সীমা ছিল ২২ থেকে ২৩ দিন। ২০১৮ সালে তা ছিল আরও একটু বেশি, প্রায় এক মাস। কিন্তু এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯ দিন। উত্তরপত্র দেখার সময়সীমা কমলেও পরীক্ষক পিছু উত্তরপত্রের সংখ্যা একই থেকে গেছে। গড়ে ১৫০ টি করে উত্তরপত্র দেখতে হচ্ছে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁরা এও জানিয়েছেন যে, এ বছর খাতা দেখার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নিয়ম যুক্ত হয়েছে। সেই নিয়ম মেনে প্রতিটি উত্তরপত্রের জন্য এবার অনেক বেশি করে সময় লাগছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকে উত্তরপত্র পেতে শুরু করেছেন পরীক্ষকরা।
এবার দেখা যাক নতুন নিয়ম কি এবং কেনই বা তা মেনে খাতা দেখতে বেশি সময় লাগছে? পরীক্ষকরা জানাচ্ছেন যে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রশ্নের উত্তর দেখে যদি সঠিক এবং পুরো নম্বর দেওয়ার উপযুক্ত মনে না হয়, তাহলে তার কারণও উত্তরপত্রেই উল্লেখ করতে হবে। পরীক্ষকদের বক্তব্য, কেন কম নম্বর দেওয়া হচ্ছে, তা উত্তরপত্রে লিখতে অনেক সময় লাগছে। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রে খাতায় নম্বর দেওয়ার জন্য বক্স এঁকে নিতে হচ্ছে পরীক্ষকদেরই। প্রতিটি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য বক্স তৈরি করে আলাদা আলাদা নম্বর বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠনের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেছেন যে, পুরো বিষয়টিই সময়সাপেক্ষ। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তরের শেষে বক্স তৈরি করে নম্বর দিতে গিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, অনেক সময় এমনও হচ্ছে যে, পরীক্ষার্থীর খাতায় প্রশ্নের উত্তরের শেষে এই বক্স আঁকার আর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সব মিলিয়ে খাতা দেখতে প্রায় ৪৫ মিনিট, কখনও আবার ১ ঘণ্টা সময়ও লেগে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
১৫০ টি করে খাতা দেখার জন্য ১৯ দিনের সময়সীমা যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে অন্য একটি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর বক্তব্য, খাতায়-কলমে এই হিসেবের সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। সারাদিন স্কুলে ক্লাস নেওয়ার পর রাতে বাড়িতে বসে খাতা দেখতে হয়। এর সঙ্গে একাদশ শ্রেণির খাতা দেখারও একটা ব্যাপার থাকে। ফলে অনেক সময় খাতা জমে যায়। কিঙ্করবাবু আরও জানিয়েছেন যে, সময়সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে যে, বানান ভুলের জন্য নম্বর না কাটার যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তা যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এদিকে সময়সীমা নিয়ে এই মুহূর্তে যে অসন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন যে, খাতা দেওয়ার আগে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে উত্তরপত্র দেখার সময়সীমা নিয়ে কোনও পরীক্ষক অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কথার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরীক্ষক জানিয়েছেন যে, পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রধান শিক্ষকদের। সেই বৈঠকে শুধুমাত্র উত্তরপত্র কীভাবে দেখা হবে, সেই বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনও বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি।
এখন দেখার বিষয় এটাই যে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবং রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে করা আবেদনের ফলাফল কি হয়!