গ্রামবাংলা হোক কিংবা শহরের ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট, ভাগ্য খুব খারাপ থাকলে সাক্ষাৎ যমরাজের মুখোমুখি হতে হতে পারে পারে। সর্পদেবতা কখন কোথায় থাকবেন তা আগে থেকে না জানার কারণে হঠাৎ সর্পদেবতার দর্শন পেলে বুক তো কেঁপে উঠবেই। গ্রামবাংলার দিকে চিকিৎসাপদ্ধতি উন্নত না হওয়ার কারণে সেইসব জায়গায় সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। শহরে সাপের ছোবল খেলেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সময়মতো অ্যান্টিডোট দেওয়া গেলে সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো যায়। কিন্তু এখানেই কপাল কোঁচকাচ্ছে চিকিৎসকদের। কি কারণে?
বর্তমানে নানা গবেষণার ফলে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য যা বিজ্ঞানীদের বেশ চমকে দিতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিন দিন বিবর্তনের ফলে যেমন বদলাচ্ছে মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণী সেরকমই বদলাচ্ছে সর্পকুল। বদলে যাচ্ছে তাদের বিষের ভান্ডারও। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সর্পকুল অত্যন্ত বিষাক্ত। কিন্তু 'বিষাক্ত' কথাটির দুটি অর্থ রয়েছে। এক হলো ‘পয়জনাস’ এবং আরেকটি হলো ‘ভেনোমাস’। পয়জনাস কথার অর্থ হলো, যে প্রাণীর শরীরের কোনো জায়গায় সঞ্চিত রয়েছে বিষ কিন্তু ভেনোমাস কথার অর্থ হল যে সব প্রাণীর কামড়ের ফলে শরীরে প্রবেশ করে বিষ। সেই হিসেবে সর্পকুল পড়ে ভেনোমাসের আন্ডারে। সাপের বিষ থাকে বিষথলিতে যা সাপের বদলে যাওয়া লালাগ্রন্থির অন্যরূপ।এমন অনেক সাপ আছে যাদের আবার বিষথলিতে বিষ সঞ্চিত না হয়ে সঞ্চিত হয় শরীরের অন্য কোনো জায়গায়। তারা আবার পয়জনাস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাপের বিষ হলো বিশেষভাবে প্রস্তুত করা জুটক্সিন সমৃদ্ধ লালা। জানা গেছে, ভারতে সে সকল সাপ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ ধরণের সাপ বিষাক্ত। যেমন কেউটে, চন্দ্রবোড়া প্রভৃতি সাপের কামড়ে মৃত্যু অনিবার্য।এইসব সাপের বিষ এতটাই শক্তিশালী হয় যে তারা অন্য প্রাণীর মাংসপেশি থেকে শুরু করে কোষপর্দা, হৃদযন্ত্র এবং রক্তকোষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাপের বিষ মূলত প্রোটিন এবং উত্সেচকের সমন্বয়ে তৈরী হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপের বিষ বিশ্লেষণ করে প্রায় ১৫০ ধরণের যৌগের খোঁজ মিলেছে।সাপের বিষ নির্ভর করে তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ, খাদ্য প্রভৃতি বিষয়ের উপর। সাপের বিষের অ্যান্টিডোট বা অ্যান্টিভেনম তৈরীর একমাত্র ইউনিট ছিল কলকাতাতেই। কিন্তু বর্তমানে সাপের চরিত্রের সাথে সাথে বদল ঘটছে তাদের বিষের চরিত্রেও। সাপের বিষের চরিত্রের যেভাবে বদল ঘটছে তাতে অ্যান্টিভেনম তৈরী করতে সমস্যা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।