পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ও দর্শক সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ভারতীয় সিনেমার পা চলা শুরু হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে। ১৮৯৬ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের দেখা মিলেছিল। যদিও ছবির নির্মাতারা ছিলেন বিদেশি। তাদের নাম ছিল লুমিরি ও রবার্ট পল। তারপর ১৯১৩ সালে প্রথম ভারতীয় ছবি নির্মাণ করেছিলেন দাদাসাহেব ফালকে। সেই ছবির নাম ছিল 'রাজা হরিশচন্দ্র'। নির্বাক ছবি ছিল এটি। ছবিটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন দাদাসাহেব ফালকে। কিন্তু তার আগেও ১৯১২ সালে দাদাসাহেব তোরণে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন যেটির নাম ছিল 'শ্রী পুন্দানিক'। যেহেতু ছবির শুটিং করা হয়েছিল ব্রিটেনে, ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ও অন্যান্য শিল্পীরা বিদেশি ছিলেন তাই 'রাজা হরিশচন্দ্র'কে প্রথম ভারতীয় ছবি হিসেবে ধরা হয়। আর এই ছবি নির্মাণের করেছিলেন যিনি অর্থাৎ দাদাসাহেব ফালকে-কে ভারতীয় সিনেমার জনক বলা হয়।
শুধু মাত্র হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নয়, দক্ষিণ ভারতেও ছবি নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই সময়। ১৯১৬ সালে প্রথম সাইলেন্ট তামিল ছবি নির্মাণ করেছিলেন আর নটরাজ মুদালিয়া। তিনি প্রথম ফিল্ম স্টুডিয়ো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেহেতু ভারতীয় সামাজিক জীবন এবং সংস্কৃতির উপাদানগুলিকে সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আর সেই জন্য ধীরে ধীরে দর্শকদের মধ্যেও ভারতীয় ছবি নিয়ে উৎসাহ বাড়ে। সেই সময় সারা বিশ্বে আমেরিকান ছবির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছিল। তাই ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ ছবির প্রচারের ভারতে একটি কমিটি তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু ব্রিটিশ ছবির বদলে তারা ভারতীয় ছবি সমর্থন করার সুপারিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই সুপারিশ বাতিল করে দেওয়া হয়।
নির্বাক ছবি দিয়ে দাদাসাহেব ফালকে যে যাত্রা শুরু করেছিল তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও এগিয়ে গিয়েছে। যার ফল স্বরূপ স্বাধীনতার ১৬ বছর আগে ১৯৩১ সালে প্রথম সাউন্ড ফিল্ম ও ১৯৩৭ সালে প্রথম রঙিন ছবি নির্মাণ করা হয় এদেশে। প্রথম সাউন্ড ফিল্ম ছিল 'আলম আরা' নির্মাণ করেছিলেন আরদেশির ইরানি আর কালার্ড ফিল্মের নাম ছিল 'কৃষ্ণান কানাইয়া'। পরিচালনা করেছিলেন মতি বি। তিরিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে থেকে ভারতীয় ছবি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছিল। ১৯৩৭ সালে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার কোনও ভারতীয় ছবি দেখানো হয়েছিল। ছবির নাম 'সন্ত তুকারাম'। সেই বছরে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা তিনটি ছবির তালিকায় নাম ছিল এই মারাঠি ছবির। যেহেতু কৃষক বিদ্রোহের বেশকিছু ঘটনা দেখানো হয়েছিল সেই ছবিতে। তাই ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করেছিল ছবিটি।
ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল চল্লিশের দশকের শেষের দিকে। যদিও এর পিছনে অবদান জনপ্রিয় কিছু বাঙালি পরিচালকের। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, বিমল রায়। চ্যার্লি চ্যাপলিনের পর সত্যজিৎ রায় একমাত্র চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেছে। অন্যদিকে হিন্দি ছবি বাণিজ্যিক প্রসার শুরু হয়েছিল। 'পায়াসা', 'কাগজ কে ফুল', 'শ্রী-৪২০'-এর মতো ছবিতে দেখার জন্য দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে আসতে শুরু করেছিলেন। ষাটের দশকের সেই বাণিজ্যিক প্রসার এখনও অব্যাহত। তবে হিন্দির ছবির পাশাপাশি এখন 'পুষ্পা', 'আর আর আর'-এর মতো আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলোও ভারতীয় দর্শকদের মন জয় করছে। ছবিতে ভিএফএক্স ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় আজ বাজেটও যথেষ্ট বেড়েছে। চোখ ধাঁধানো ভিএফএক্সের কাজ দেখে আজ ভারতীয়দের পাশাপাশি বিদেশিরাও ভারতীয় ছবি নিয়ে উৎসাহ দেখাতে শুরু করেছে।