কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো সামনে এলেই অবধারিত ভাবে চলে আসে দেবীর ভোগের কথা। মা লক্ষ্মীর ভোগ মানেই খিচুড়ি- দেবীকে নিবেদন করা এই ভোগের স্বাদ যেন অমৃততুল্য। মানুষ আকুল হইয় সেই প্রসাদের জন্য।
বাঙালি বাড়িতে কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোয় অতিথি আগমন ও আপ্যায়নের অন্যতম হেতু মা লক্ষ্মীর খিচুড়ি।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি ভোগই বেশি প্রচলিত। গোবিন্দভোগ বা আতপ চালের খিচুড়ির সঙ্গে থাকে ভাজাভুজি, লাবড়া, চাটনি। এছাড়াও আনুসাঙ্গিক প্রসাদ হিসেবে থাকে খই মুড়কি, নাড়ু ইত্যাদি নানা উপাচার।
কোজাগরী লক্ষ্মীর পুজোয় খিচুড়ি আবশ্যিক। এর পশ্চাতে একটি কাহিনিও প্রচলিত আছে। সেই কাহিনি অনুযায়ী,
দশেরায় রাবণ বধ করে দীপাবলির দিন রামচন্দ্র সীতা, লক্ষণ ও হনুমানে সঙ্গে নিয়ে অযোধ্যায় প্রবেশ করেন।
এদিকে রাম রাজ্যে ফিরে এলেও লক্ষ্মীর স্বরূপ সীতা মাকে নিয়ে প্রজাদের মধ্যে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। কারণ তিনি রাবণ রাজার অশোক বনে বন্দিনী ছিলেন। প্রশ্ন ওঠে তাঁর চারিত্রিক শুদ্ধতা ও সতীত্ব নিয়ে।
আর তারপরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় লক্ষ্মী-স্বরূপা সীতা দেবীকে নিয়ে গুঞ্জন, তাঁর চারিত্রিক শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন। লক্ষ্মী পুজোর দিন সীতাদেবী রাবণের ছবি এঁকে সখীদের রাবণ সম্বন্ধে বোঝানোর সময়ে, রামচন্দ্র সেই ঘরে প্রবেশ করেন।
প্রজাদের সন্দেহ দূর করতে সীতাদেবীকে রাজ হেঁশেলের 'এক পাক' মানে খিচুড়ি খাইয়ে মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। তাই লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি নিবেদন আবশ্যিক।
অনেক বাড়িতেই অবশ্য খিচুড়ি চালের ভোগ হওয়ায় চিঁড়ে-মুড়কি বা ফলের ভোগ দেওয়া হয়। লক্ষ্মী পুজোর ভোগে থাকতেই হবে কদমা, তিল পাটালি, বিভিন্ন রকম নাড়ু, নারকেলের মিষ্টি। এছাড়াও পানিফল, পদ্মবীজও তাঁর খুব প্রিয়। তালের ফোপরা এই পুজোর আবশ্যিক উপাচার। আর কোনও দেবদেবীর পুজঅয় প্রসাদ-নৈবেদ্য থালিতে এই জিনিস দেখা যায় না।