অষ্টমারীর দেবী দেবী শীতলা

একহাতে কলস আর এক হাতে শূর্প মানে ঝাঁটা। সালংকারা দেবী গর্দভ বাহনে। আর হাতে থাকে হাতপাখা। দোল ফুরলেই এই দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে বাঙালি। পাড়ায় পাড়ায় ‘ঢ্যারা’ পিটিয়ে জানান দেওয়া হয় তার দিনক্ষণ। সেই দিনটা পাড়া জুড়ে অরন্ধন। কোনও বাড়িতে উনুন বা আগুন জ্বলবে না। ঠাণ্ডা খাবে মানুষ। ঠাণ্ডা মানে পান্তা বা বাসী ভাত। আগের দিন রাতে রান্না করে রাখা খাবার। এই দিনটিকে বলা হয় ঠাণ্ডা উপোস

সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে ভিড়। নিমিত্ত ‘মায়ের পুজো’। এই দেবীর নাকি নাম নিতে নেই। তিনি সকলের ‘মা’। রোগ মারী থেকে উদ্ধার করেন। হাতের ঝাঁটা দিয়ে রোগ জীবানু নির্মুল করেন। হাতের কলস পাত্রে অমৃত বারি সিঞ্চন করেন। দেবী শীতলা। স্মল পক্স, বসন্ত রোগের লৌকিক দেবী।

গুটি বসন্তে আক্রান্ত হলে তাই গ্রাম মফস্বলের মানুষ আজও বলেন ‘মায়ের দয়া’। শীতলা সপ্তমী-অষ্টমী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, অন্যান্য রাজ্যেও অনুষ্ঠিত হয়।

 

Sheetala1

 

দেবী শীতলা কে?

দেবী শীতলাকে আদ্যাশক্তি মহামায়ার অবতার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। দেবী দুর্গার আর এক রূপ ভগবতী শীতলা। বসন্ত, চর্মরোগ এবং পিশাচ থেকে মানুষকে রক্ষা করেন।

‘শীতল’ থেকে ‘শীতলা’ শব্দটি এসেছে। দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে দেবী শীতলার আলাদা আলদা নামও আছে। উত্তর ভাগে তাঁকে ঠাকুরানী, ভগবতী, মঙ্গলা, একাধিক নামে ডাকা হয়। দক্ষিণ ভারতে দেবী শীতলার অবতার মারিয়ম্মান বা মারিয়াত্থা। দ্রাবিড় ভাষী সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর উপাসনা করেন। হরিয়ানার গুরগাঁওতে শীতলাকে গুরু দ্রোণাচার্যের স্ত্রী বলে মনে করা হয়।

প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী দেবী দুর্গা কাত্যায়নী নামে মর্ত্যে জন্ম নেন। মহর্ষি কাত্যায়ন তাঁর পিতা। দুষ্টের দমনের জন্য তাঁর এই জন্মলাভ।

একবার জ্বরাসুরের আক্রমণে দেবী কাত্যায়নীর শিশু সখীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে। জ্বর, কলেরা, বসন্ত, নানারকম চর্মরোগ আক্রান্ত হয়। তখন কাত্যায়নী শীতলার রূপ নিয়ে তাঁদের নিরাময় করেন।

জ্বরাসুরকে যুদ্ধে হারিয়ে পৃথিবীকে রোগ থেকে রক্ষা করার উদ্দ্যেশেই দেবী মহামায়ার এই রূপ। তিনি জ্বরের রোগীদের শীতলতা প্রদান করেন।

হিন্দুদের বিশ্বাস, ধর্মের এই দেবীর প্রভাবেই মানুষ চর্মরোগাক্রান্ত হয়। তাই কেউ বসন্তে আক্রান্ত হলে দেবী শীতলাকে পূজা নিবেদন করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির আরোগ্য কামনা করা হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...