রাধা এবং কৃষ্ণ, ভক্ত ও ভগবানের মিলনের লীলা উৎসব রাস উৎসব। বৈষ্ণবদের কাছে রাস উৎসব আলাদাভাবে অর্থবহ। রবিবারই কোচবিহারের রাস উৎসবের সূচনা।
কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গনে বসানো হয় রাসচক্র। কোচবিহারের রাসচক্র সমগ্র দেশের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনবদ্য উদাহরণ। যার মাধ্যম কৃষ্ণপ্রেম। রাস যে আসলে মিলনের উৎসব তা যেন প্রতিবছর নতুন করে শেখায় বাংলার কোচবিহার। যার সূচনা হয়েছিল কোচ রাজপরিবারের আমল, যা আজও।
তিন প্রজন্ম ধরে এই রাসচক্র তৈরির কাজে যুক্ত আলতাফ মিঞার পরিবার। আলতাফের স্ত্রী বাবলি বিবি তাঁর স্বামীকে রাসচক্র তৈরির কাজে সহায়তা করতেন। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমল থেকে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়ে আসছে কোচবিহারের হরিণচওড়া এলাকার বাসিন্দা পান মহম্মদ মিঞাকে। সেই থেকে বংশ পরম্পরায় তাঁর পরিবারই করে আসছে রাসচক্র তৈরীর কাজ।
মহম্মদ মিঞার মৃত্যুর পর রাসচক্র তৈরি করেছেন ছেলে আজিস মিঞা। আজিসের পর তাঁর ছেলে আলতাফ মিঞা রাসচক্র তৈরির কাজ করেন। বর্তমানে তিনিও বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ বার তাই রাসচক্র তৈরির ভার বর্তেছে আলতাফের ছেলে আমিনুরের উপর।
লক্ষ্মীপুজোর দিনে রীতিমতো উপোস করে রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করতেন আলতাফ মিঁয়া। রাসচক্র তৈরির সময় তিনি নিরামিষও আহার করতেন। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি এই রাসচক্র তৈরির কাজ করেন। এই রাসচক্রকে কেন্দ্র করেই রাস উৎসবের দিনগুলিতে মেতে ওঠেন বাসিন্দারা। তাঁর পুত্র সেই পথেই চলেছেন।
প্রতি বছর রাস উপলক্ষে সেজে উঠে মদনমোহন মন্দির। এই মন্দিরেই হয় রাস উৎসব। প্রতিবছর রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা হয়৷ আগে রাজারা রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা করতেন। এখন রাজারা নেই। তাই দেবত্র ত্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক এই রাস উৎসবের সূচনা করেন। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে বিরাট এলাকা জুড়ে বসে মেলা।