ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে আর কিছু হোক না হোক, সারা পৃথিবীর খবর আজ আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সব কিছুরই একটা ভাল-মন্দ রয়েছে, ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমন কিছু খবর, তথ্য আমাদের সামনে উঠে আসে যা আমাদের মন ভাল করে দেয়, নজিরসৃষ্টি করে। আমরা সবাই জানি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রতিকূলতাকে তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র মায়ের মমতা ও মানবিক আদর্শের টানে উত্তাল দামোদর নদ পেরিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিলেন। তেমনই এক নজিরবিহীন মানুষের কথা সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়, তিনি ঈশ্বরচন্দ্র না হলেও, এই শতাব্দীতে আদর্শগত ভাবে তাঁর কথাই মনে করিয়ে দেন। তিনি কেরলের মালাপ্পুরমের বাসিন্দা আবদুল মালিক, তাঁর কথা শুনলে যেকেউই চক্ষু ছানা বড়া করে বলে বসছেন- 'বাবা...এমন মানুষ এখনও রয়েছে!' হ্যাঁ, রয়েছেন। এই শতাব্দীতেও সৎ, পরিশ্রমী, মানবিক আদর্শযুক্ত মানুষের অস্তিত্ব মেলে।
চল্লিশ বছর বয়সী আবদুল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাড়ি থেকে তাঁর স্কুলের দূরত্ব খুব বেশী নয়, মাত্র বারো কিলোমিটার। বাসে বা ট্রেনে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অতিক্রম করা যায় ওই দুরত্ব। কিন্তু আবদুল মালিকের সেই রাস্তা যেতে প্রায় দু-তিনঘণ্টা সময় লেগে যায়। সৌজন্যে, রাজ্যের দুর্বল পরিবহণ ব্যবস্থা। সময়মতো স্কুলেও পৌঁছাতে পারতেন না ওই শিক্ষক। একজন শিক্ষক যদি নিজেই নিয়মের বিরুদ্ধাচরন করেন, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে? এই ভাবনাই পীড়িত করতে থাকে তাঁকে।
অতঃপর অন্যভাবে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন তিনি। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নদী পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত করবেন। কিন্তু সেখানেও কোনও পরিবহন ব্যবস্থা নেই, তাই প্রতিদিন সাঁতার কেটে স্কুলে পৌঁছান ওই শিক্ষক৷ নিয়ম করে সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বেরোন। নিজের পোশাক, জুতো, টিফিন বক্স প্লাস্টিকে জড়িয়ে কাঁধে তুলে নেন। কোমরে জড়িয়ে নেন একটি টায়ার টিউব। তারপর সাঁতার কেটেই পেরিয়ে যান নদী। নদীর পাড়ে পোশাক পরিবর্তন করে সময়মত পৌঁছে যান স্কুলে। টানা কুড়ি বছর ধরে এটাই তাঁর রুটিন।
এমন আদর্শবান শিক্ষককে পেয়ে আপ্লুত সেই স্কুল, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। সত্যিই শিক্ষা এবং শিক্ষকের মানদণ্ড ঠিক কেমন হওয়া উচিত তা এ প্রজন্মকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেরলের মালাপ্পুরমের বাসিন্দা আবদুল মালিক।