প্রতিটি দিনই হোক মায়ের

যাযাবরদেরও একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকে, সেটা হল 'মা'- আমরা সবাই মায়ের কাছে ফিরতে চাই। সত্যিই হয়তো তাই, জীবন যত জটিল হয় ততই আমরা অতীতকে ফিরে দেখতে চাই। সেখানে স্মৃতির পাতাগুলি যতই হাতড়াতে থাকি দেখি মায়ের সঙ্গে কাটানো টুকরো-টুকরো ছবি। অবাক হয়ে ভাবি এই হাজার ব্যস্ততার মাঝে একটা জটিল জীবনের সবচেয়ে সরল ও নিঃস্বার্থ জীবনী শক্তির নাম মা।

আজকের সময় দাঁড়িয়ে এরকম উপলব্ধি হয়তো অনেক জনের। তবে আমরা এখন যা অনুভব করি তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেই অনুভূতি সর্ব সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যার পোশাকি নাম সামাজিক মাধ্যম। আর এই বদান্যতায় আজকাল ‘দিবস পালনের ঘটা বেড়েছে বহুগুণ। তাই যে সন্তানটি সুদূর আমেরিকায় সফটওয়্যার কোম্পানির উচ্চ বিভাগে কর্মরত। মায়ের সঙ্গে শেষ কবে দেখা হয়েছে ঠিক মনে পড়ে না, বা মনে পড়ার বিশেষ কারণও খুঁজে পায় না।  সেও নিজের ফোন গ্যালারি ঘেঁটে পাঁচ বছর আগে দুর্গা পুজোয় অষ্টমীতে তোলা মার সঙ্গে একটা ছবি সেঁটে দিয়ে  স্ট্যাটাস দেয় আমার একলা চলার পথে মন খারাপের রাতে/ সুখ-দুঃখ যাই থাকুক মা তুমি থেকো সাথে।

যে ছেলেটা রোজ মত্ত অবস্থায় রাত্রিবেলায় নিজের স্ত্রী-মাকে হেনস্থা করে, লোকের বাড়িতে কাজ করে পাওয়া মায়ের টাকাগুলো গোপনে নিয়ে আসে নেশা করার জন্য। মাতৃ দিবসের সকালে  স্ক্রল করতে গিয়ে বহু জনের মাতৃপ্রেম দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। বাড়িতে থাকা অ্যালবাম থেকে মায়ের একটা ছবি তুলে স্ট্যাটাস দেয় 'আই মিস ইউ মম'!

মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ কষ্ট গুলো জমা রাখি। বিনিময়ে নিই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা। হ্যাঁ, আজ ঘটা করে মায়ের কথা লেখার দিন। আমরা এখন ট্রেন্ডের শিকার। তাই দিন-দিন, দিন পালনের রেওয়াজ বাড়ছে। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনা থেকেই মায়ের পুজো চলে আসছে। মা হলেন শক্তির আধার।

পুরাণে মেনকা ও উমার গল্প কথা সহজ সরল মাতৃ প্রেমের অনুষঙ্গ দিয়ে যায়। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা তো আদি অকৃত্রিম। যুগে যুগে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার নিদর্শন নেই তো কম নেই। আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট এনা জার্ভিস তাঁর মাকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি বিয়ে করেননি এবং তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য এই বিশেষ দিনটার প্রচলন করেন।  ১৯০৫ সালে আনা এনা জার্ভিসের মৃত্যু হলে তাঁর মেয়ে আনা মারিয়া  জার্ভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তাঁর  সান ডে স্কুলে প্রথম দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়।

সেই তখন থেকেই শুরু, তবে কালে কালে তা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এখন তো সবেতেই প্রচার। তাই আজকের এই বিশেষ দিনে মা'কে নিয়ে আবেগ ভালোবাসা অনুভূতির বাড়বাড়ন্ত সর্বত্র দেখা মিলবে। আর বাকি দিনে? অন্য দিনগুলো কি মা'রা তাঁদের কর্তব্য থেকে দূরে থাকেন?

 যে সন্তান মায়ের গর্ভে বাসা বেঁধে আছে সে এই দিবস কী, কেন  তা জানে না, বা যে সন্তানটা সদ্য পৃথিবীর আলো দেখেছে। মায়ের কোলকে সে সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা মনে করে তার কাছে তো মা-ই পৃথিবী এটা অন্যকে জানান দিতে হয় না। সে মনে প্রাণে অনুভব করে, ,আর এইটুকু আঁকড়েই সে বেঁচে আছে। তাই শুধু মাতৃ দিবসের দেখনদারি নয় প্রতিদিনের চলার পথে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে মায়ের কোল অমলিন হয়ে থেকে যাক। তবেই তো দিবস পালনের সার্থকতা।

 

ছবিঃ প্রতীকী 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...