জেরুজালেমের রাস্তায় যেদিন ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন যিশু খ্রিষ্ট সেইদিন কেঁদেছিল গোটা বিশ্ব| অথচ সেই দিনটি আজও পালিত হয় গুড ফ্রাইডে হিসেবে| সেই দিনটি ছিল শুক্রবার| তার ঠিক পরের রবিবার কোনো এক অজ্ঞাত কারণবশত পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন তিনি| সমস্ত পাপের অবসান ঘটানোর জন্য পুনর্জীবন লাভ করেছিলেন তিনি| তার পুনর্জীবন লাভের দিনটি আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে পালিত হয় ইস্টার ডে হিসেবে|
এইদিন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষজন গির্জায় গিয়ে ইস্টার সং গান, নানা বর্ণময় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন এমনকি ইস্টার এগ তৈরী করে তা উপহার স্বরূপ সকলকে দেওয়ার প্রথাও রয়েছে তাদের| সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া, আনন্দ উৎসব পালন সমস্তটাই ঘটে সেইদিন| কারণ সেই দিন যে বড় আনন্দের দিন| সেই দিন তাদের ভগবানের ফিরে আসার দিন| সেই দিন নিজেদের করা সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার দিন| পৃথিবীর নানা প্রান্তেই পালিত হয় ইস্টার| সেই সঙ্গেই খাস কলকাতার বুকেও কিন্তু পালিত হয় এই অনুষ্ঠানটি| এই বিশেষ দিনটি স্মরণ করেন কলকাতায় বসবাসকারী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা| কলকাতার বাসিন্দারা নিজেরাই জানিয়েছেন, ৪১ দিনের উপোষ শেষে শনিবার শুরু হচ্ছে তাদের ইস্টার উৎসব| শহরের রাস্তায় এইদিন এক বিশেষ মিছিল বের হয়| শহরের সকল মানুষকে এই উৎসবের সামিল করাই লক্ষ্য তাদের জানালেন শহরেরই একজন ব্যবসায়ী| এইদিনই কিছু মানুষ কবরস্থানে গিয়ে নিজের মৃত বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন| এছাড়াও এইদিনই সারা বছর করা পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার রীতিও রয়েছে|
এই বছর ২১শে এপ্রিল অর্থাৎ রবিবার কলকাতার বুকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই বছরের ইস্টার উৎসব| তারই মধ্যে ভিড় জমতে শুরু করেছে নিউ মার্কেট চত্বরের একটি বেকারীর দোকানে| চকলেট ইস্টার এগ থেকে শুরু করে বাদামের পেস্ট দিয়ে নানা উপকরণ, কেক প্যাস্ট্রি প্রভৃতির চাহিদা এই দোকানে বহুদিনের| সেই দোকানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই এই বেকারিতে ক্রেতাদের ভিড় জমেছে| শহরের অন্যান্য বেকারিতে এক বিশেষ প্রকৃতির পাঁউরুটি যাকে হট ক্রস বান বলা হয় সেই পাঁউরুটি তৈরী করা হয় গুড ফ্রাইডের দিন সকালে| কিন্তু নিউ মার্কেটের শতাব্দিপ্রাচীন এক বেকারি স্টোরে এই পাঁউরুটি পাওয়া যায় বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই| স্বাভাবিকভাবে সেই দোকানেই ভিড় জমা করতে শুরু করে ক্রেতারা| শহরের বেশ কিছু রেস্তোঁরায় এই বছর ইস্টার উপলক্ষ্যে শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে| তাদের জন্য ইস্টার এগ হান্টিং রেসের পাশাপাশি এগ পেন্টিং-এর ব্যবস্থাও থাকছে|
ইস্টারের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুত বো-ব্যারাক| সেখানে এককালে ধুমধাম করে প্রতিটি বাড়িতে কেক প্যাস্ট্রি সহযোগে বিরাট করে ইস্টার পালন করা হত| কিন্তু সেখানকারই এক বাসিন্দা জানান, বাড়ির বাচ্চারা সকলে এখন বড় হয়ে গেছে তাই এই বছর ঘরে ঘরেই ইস্টার পালন করবেন তারা| তবে শহরের অন্যান্য রাস্তায় যে সেদিন মিছিল থাকবে তা স্পষ্ট| জানা গেছে, সখেরবাজার থেকে ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত একটি বর্ণময় মিছিল যাবে ইস্টার উপলক্ষ্যে|