ছোটবেলা থেকে রান্নাবাটি খেলতে খেলতেই রান্নার সাথে পরিচয় হয় বেশিরভাগ মেয়ের। মায়ের দেখাদেখি রান্না করার সাধ ছোট থেকেই মেয়েদের মনে জেগে উঠতে থাকে। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই ছেলেবেলার রান্নাবাটি ছেড়ে সত্যিকারের রান্নাঘরের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। তবে এখন শুধু মেয়েরা নয়, ঘরে-বাইরে হেঁশেল সামলান ছেলেরাও।
শুরুতেই তো কেউ পারদর্শী হতে পারে না। ধীরে ধীরে শিখতে হয় রান্নার নানা খুঁটিনাটি। বড় না হওয়া পর্যন্ত অনেক মা-ই তাঁদের সন্তানকে রান্নাঘরে প্রবেশের অনুমতি দেন না। তাই মা’কে লুকিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে নিজের হাত পুড়িয়ে পরিবার-পরিজনদের জন্য রান্না করার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ থাকে। কিন্তু সফলভাবে রান্না করার আগে ও পিছনে লুকিয়ে থাকে অনেক ভুল। ভুলের সূত্রপাত হয় রান্নার উপকরণ কাটার মধ্যে দিয়ে। তারপর থাকে কড়াতে মাছ ভাজার সময় তেল ছিটে আসার ভয়। আজ জেনে নেব রান্নার প্রতিক্ষেত্রে করা কিছু সূক্ষ ভুল ও তা সংশোধন করার কিছু পদ্ধতি-
প্রথমেই আসা যাক সবজি কাটা ও ধোয়ার ব্যাপারে। সবজি রান্নায় দেওয়ার আগে তাকে ছোট ছোট করে কেটে, জলে ধুয়ে তবেই তা রান্নায় দেওয়ার চল রয়েছে। অনেকসময় রান্নায় দেওয়ার আগে সবজি পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটে চুবিয়ে রাখা হয় যাতে সবজির গায়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে জীবাণুর সাথে সাথে সবজি থেকে ভিটামিন বি ও সি-এর প্রায় ৪০ শতাংশ দূর হয়ে যায়।
তবে এক্ষেত্রে আবার বিশেষজ্ঞদের মত আলাদা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সবজির মধ্যে মিশে থাকা কীটনাশক এবং অন্যান্য রং মানুষের ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ। তার সাথে সাথে পেটের অসুখও হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে যদি ভিটামিনের সাথে কিছু সমঝোতা করাও হয় তাতে খারাপ কিছু নেই। তারা জানাচ্ছেন, রান্নার আগে সবজি কেটে তা জলে ডুবিয়ে রাখাই ভালো। সবজি বড় বড় টুকরো করে কাটলে এবং তা সামান্য জলে ধুয়ে সরাসরি রান্নায় দিয়ে দিলে তাতে ভিটামিনের পরিমান সঠিক থাকলেও ত্বকের রোগ থেকে শুরু করে নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। সবজির খোসায় প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও পুষ্টি বর্তমান। তাই অনেকসময় সবজির খোসা ছাড়াতেও বারণ করা হয়। যারা ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা খোসা না ছাড়িয়ে সবজি রান্না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কিন্তু সবজিতে উপস্থিত এইসব কীটনাশকজাতীয় ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির জন্য তা করতে হয়।
তেল থেকে ওঠা ধোঁয়া- প্রায় প্রতিটি বাড়ির মহিলাদের বক্তব্য, তেল থেকে ধোঁয়া না ওঠা পর্যন্ত সেই তেলে কোনো সবজি দিলে তার মধ্যে কাঁচা তেলের গন্ধ থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রতিটি তেলের একটি আলাদা স্মোক পয়েন্ট থাকে। সেই পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছালে তা থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু করে। এই তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পরে তেল থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড উড়ে যেতে শুরু করে। এই তাপমাত্রায় পৌঁছালে তেল থেকে উড়ে যেতে থাকে ভিটামিনও। তেলের মধ্যে জন্ম নিতে শুরু করে ফ্রি–র্যাডিক্যাল্স যা পরবর্তীকালে হাই কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক প্রভৃতি রোগের আগমন ঘটে শরীরে। রান্নার সময় ওঠা অতিরিক্ত ধোঁয়ার মধ্যে থাকার ফলে শরীরে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হতে শুরু করে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যাও তৈরী হতে শুরু করে। তাই তেল থেকে ধোঁয়া ওঠার আগেই তেলে ফোড়ন দিয়ে দিন। তারপরেই তাতে দিয়ে দিন পছন্দের সবজি। এর ফলে রান্নায় পুষ্টির পরিমান এক থাকে।
ভাজার সমাধান- অতিরিক্ত ভাজাভুজি খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই খারাপ, তা চিকিৎসকেরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। অতিরিক্ত তেলে রান্না করার ফলে খাবার থেকে প্রোটিন ও ভিটামিনের পরিমান ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে। এর সাথে সাথে শরীরে হানা দিতে শুরু করে হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সব রোগ। একবারের বেশি একই তেল ব্যবহার করা হলে সেই পোড়া তেলে তৈরী হয় অ্যালডিহাইড নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক। এর ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ। হার্টের রোগ থেকে শুরু করে অ্যালঝাইমার্স প্রভৃতি রোগের দেখা মেলে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নারকেলের তেলের স্মোক পয়েন্ট অনেকটা বেশি হওয়ার কারণে এই তেলে রান্না করলে বা ভাজাভুজি করলে বিপদের আশংকা কম থাকে। কিন্তু সবক্ষেত্রে যেহেতু নারকেল তেল ব্যবহার করা যায় না সেইজন্য চিকিৎসকেরা ভাজাভুজি কম খাওয়ার পরামর্শই দিয়ে থাকেন।
বাড়িতে ভাজাভুজি বেশি হওয়ার চল থাকলে কিনে নিতে পারেন ‘এয়ার ফ্রায়ার’। এতে তেল ছাড়াই আপনি ভেজে নিতে পারবেন আলু, বড়ি প্রভৃতি।