কলকাতায় ফুটপাথে এই মুহূর্তে ২০ হাজার এমন ব্যবসায়ী আছেন যাঁরা স্টোভ, উনুন বা গ্যাস জ্বালিয়ে খাবার রান্না করে বিক্রি করছেন। ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর তরফে পশ্চিম বঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কে সমীক্ষা করে এই এই ব্যবসায়ী সংখ্যা জানাতে বলা হয়েছিল। পর্ষদ এই তথ্য ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে দিয়েছে। এই সংস্থাটি বলছে, কলকাতার দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফুটপাথে রান্না করার ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া। এই দূষণের হাত থেকে কলকাতাকে বাঁচাতে হলে এই মুহূর্তে কলকাতার ফুটপাতে উনুনে, স্টোভে বা গ্যাস জ্বালানো বন্ধ করতে হবে। সংস্থাটি সুপারিশ করেছে, কলকাতার ফুটপাথে বায়ো ফুয়েল চালিত স্টোভে রান্না করলে দূষণ একেবারেই কমে যাবে। তবে দূষণ বন্ধ করতে কলকাতার ফুটপাথে কয়লার উনুনে, কেরোসিন স্টোভে, গ্যাস জ্বেলে রান্না করার কাজটি কলকাতা পুরসভাকে বন্ধ করতে হবে।
এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবীর কুমার বসু জানান, "২০০৫ সালেই আমি বায়ো ফুয়েল চালিত স্টোভ তৈরী করেছি। আজকাল বায়ো ফুয়েল উৎপাদন করছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা। কাজেই বায়ো ফুয়েল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না তাও নয়। বায়ো ফুয়েলে দূষণের সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া বায়ো ফুয়েল চালিত স্টোভের জন্য খরচ বেশি পড়ে না। কাজেই কলকাতার দূষণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হলে এই মুহূর্তে ফুটপাথে কয়লার উনুন, কেরোসিন স্টোভ ও গ্যাস ওভেন জ্বালানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। যেহেতু ভোজ্য তেল থেকে বায়ো ফুয়েল পাওয়া যায় তাই এর ঘাটতি নেই বললেই চলে"
তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার ফুটপাথের রান্না করা খাবারের ব্যাবসায়ীদের বলা হয়েছে ইলেকট্রিক ওভেন দেওয়া হবে। এই ঘোষণার পর পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বড় হয়েছে। পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, "কলকাতায় প্রতিদিন গাড়ির দূষণের মাত্রা যে হারে বাড়ছে তাত গত শীতকালে কলকাতার দূষণ দিল্লিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও বরানগর জোড়াসাঁকো রবীন্দ্রভারতী ক্যাম্পাস-এর সামনে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের যে দূষণ পরিমাপক যন্ত্র বসানো আছে তাতে স্বাভাবিক সময় বাতাসে প্রতি ঘন মিটারে ৬০ টি কণা বা পি.এম এর উপস্থিতি দেখায়। গত শীতকালে দূষণের এই কণা বা পি.এম প্রতি ঘন মিটারে ১৮০ থেকে ২০০ তে পৌঁছে গিয়েছিল। কাজেই কলকাতার দূষণের মাত্রা কি হারে বাড়ছে তা সহজেই অনুমেয়। এর ওপরে যদি রাস্তার উপর ইলেকট্রিক ওভেন জ্বলে তবে দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই ।“
এ দিকে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও কলকাতা পুরসভা সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে কলকাতার রাজপথে যে সব হকার কেরোসিন স্টোভে বা গ্যাস জ্বেলে রান্না করে খাবার বিক্রি করেন তাঁদের কারোরই ট্রেড, ফুড, ফায়ার লাইসেন্স নেই। তাই এদের কি করে ইলেকট্রিক ওভেন দেওয়া হবে তা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। কারণ ইলেকট্রিক ওভেন জ্বালাতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগবে। সেটা তারা পাবেন কোথায়? তাই এই ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষও আপাতত ধীরে চলার পথ নিয়েছে। তবে আর ৩ থেকে ৪ মাস পরেই কলকাতায় শীত শুরু হবে। তবে কি এবারও কলকাতা শীতকালে দূষণে দিল্লিকে টেক্কা দেবে?