সদ্য শেষ হল দুর্গাপুজো। আসছে আলো তথা বাজির উৎসব দেওয়ালি। সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে বিষাক্ত বিষ। বাতাসে ধূলিকণা বিষাক্ত হয়ে গেলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই দূষিত ধুলিকণাকে দূষণমুক্ত না করলে শরীরের অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়, তা বলাই বাহুল্য। এই ব্যাপারে খড়্গপুর আইআইটি-র এক প্রাক্তন ছাত্র বিশেষ ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেছেন। ধুলো দিয়েই ধুলো পরিস্কারের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন তিনি। এই প্রক্রিয়াতেই বধ হবে মানব শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)।
পারসেপিয়ান ইনোভেশনের সঙ্গে দিল্লির পরিবহন দফতরের কথাবার্তা হয়েছে। এই প্রযুক্তির ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রযুক্তির পেটেন্টের জন্যও আবেদন করা হয়েছে। এর আগে বিশ্বের অন্য কোনও দেশে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা হয়নি। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার দেবায়ন সাহা কলকাতার জন্যও কিছু করতে চান। কলকাতাতেও বাতাসের দূষণ রোধে এই প্রযুক্তি কার্যকরী হবে বলে মনে করেন তিনি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক থেকে পরিবেশকর্মীরা বারবার বলছেন, কলকাতায় বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ পিএম ২.৫। এই সূক্ষ্ম ধূলিকণা নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, সিওপিডি থেকে ক্যান্সার অনেক মারণ রোগের কারণ হয়। দেবায়নের সংস্থা যে প্রযুক্তির কথা বলেছে, তার নাম 'মাইনাস ২.৫'।
এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎশক্তি এবং তরঙ্গশক্তির যৌথ প্রয়োগ হচ্ছে। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত যন্ত্রের মধ্যে দিয়েও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বদলে নিয়ে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা বা পিএম ২.৫ কণা বের হবে। এই কণাগুলির মধ্যে এক ধরণের চৌম্বকত্ব তৈরী হবে। কণাগুলি তখন বাতাসে ভাসমান অন্য সূক্ষ্ম ধুলিকণাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করবে এবং বহু কণা মিলে আয়তন অনেক বেড়ে যাবে। অর্থাৎ পিএম ২.৫ কণাগুলি কার্যত পিএম ১০০ বা পিএম ২০০-তে রূপান্তরিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় কণা বাতাসে ভেসে থাকতে পারবেনা এবং নিচে পড়ে যাবে। এতবড় কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানব শরীরেও প্রবেশ করতে পারবেনা। অর্থাৎ পিএম ২.৫-কে দিয়েই পিএম ২.৫ কে বধ করা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। আপাতত গাড়ির জন্যেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। পরবর্তী সময়ে দু'চাকার গাড়ি বা বাড়ি অথবা কারখানার চিমনিতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
দেবায়ন জানান, আপাতত দিল্লি সরকারের সঙ্গে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা চান, সেখানকার সরকারি পরিবহন সংস্থার বাসে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। এছাড়াও যে কোনও পরিবেশ কর্মী বা সংস্থা ব্যক্তিগত বা সংঘটিত উদ্যোগে পরিবেশের জন্য যদি কিছু করতে চান, তাহলে তাঁদের এই যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। সঠিক ছবি বা তথ্য পাঠালে বিনামূল্যেই তাঁদের উক্ত যন্ত্র সরবরাহ করা হবে বলে জানান দেবায়ন। আসলে মাটির নিচে জলের পরিমাণও তো দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধুলো দিয়ে ধুলো মারার প্রযুক্তি অনেক বেশি কার্যকরী হবে সেটা বলাই যায়। তবে পরিবেশবিদদের মত, এই প্রক্রিয়া যদিও বেশ ভালো, তবে আমরা যদি দূষণকে উৎসমুখেই বন্ধ করতে পারি, সেটাই হবে দূষণ রোধ করার সব থেকে ভালো উপায়।