প্রত্যেক রূদ্ধশ্বাস যুদ্ধের লক্ষ্যই বোধহয় - ‘তুড়ি’ বাজানো, যে বাজাতে পারবে সে জয়ী, যে পারবেনা সে পরাজয়ী। দুপক্ষের একটাই লক্ষ্য- চিরশান্তি। একপক্ষের শান্তি- একমুখী/আত্মসর্বস্ব/একরোখা/বিধ্বংসী, অন্যপক্ষের শান্তি- সবাইকে নিয়ে/একসঙ্গে/আদর্শের শেষ কথা/সৃষ্টি। সৃষ্টি আর ধ্বংসের এই অবস্থান সর্বদা ‘প্যারালাল’। তবে সৃষ্টিতত্ত্বের পুনরাবৃত্তি-মনস্তত্ব -মানবিকতা-আদর্শবোধের কাছে বার বার জিততেই হয় সৃষ্টি-কে। আর সেই সৃষ্টি-কে টিকিয়ে রাখার অদম্য তাগিতেই কাল্পনিক আদর্শবোধে জন্ম হয় ‘সুপারহিরো’দের। তারাই করে দেখাতে পারে, আর পাঁচজনের না পারা কঠিন কাজগুলো, যেকোন অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলাই তাদের কাজ। দুর্বলতা, অসহায়তা, পিছিয়ে আসার প্রশ্ন অর্থহীন তাদের কাছে।
সেইরকমই ‘এন্ড গেম’-এর খেলা যখন প্রায় শেষের দিকে, নার্ভ জানান দিচ্ছিল উত্তেজনার পারদ বেশ তুঙ্গে, ঠিক সেসময়ই শেষ ‘তুড়ি’টা বাজিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সুবিশাল ‘সৃষ্টি’কে এক মোক্ষম তুড়িতে জিতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জয়ী মুখগুলো আরোও উজ্জ্বল হয়ে ওঠার আগেই বুজে আসছিল সেই সৃষ্টিরক্ষাকর্তার হৃদয়ের আলো। দৃষ্টি ছিল স্তব্ধ। নিশ্চুপ ছিল গোটা প্রেক্ষাগৃহ। নিভে যাচ্ছিল একটা গোটা ছেলেবেলা। নিভে যাচ্ছিল এক দশকের পরিচিত আর বর্ণময় চরিত্রের প্রান। গালের জল দলা পাকাচ্ছিল গলায়, বাক্যহারা সবাই। হতবাক সকলেই। তবে শুধু ‘এন্ড গেম’ নয়, তাঁর আপামর অনুরাগীদের মন বড্ড ভারি করে তুলেছিলেন মার্ভেল মুভি পরিবারের প্রথম সদস্য। চোখের জলের সঙ্গে সঙ্গেই প্রেক্ষাগৃহে ফেটে পড়া উল্লাস এবং করতালিই প্রতিটা মুহুর্তে বুঝিয়ে দিচ্ছিল ‘লৌহ মানব’এর বেশে তিনি একজন প্রকৃত ‘সুপারহিরো’, এক দশকের আবেগ।
কাহিনী নয়, আবেগের কথাই শ্রেয় এক্ষেত্রে। হ্যাঁ, মানছি কল্পকথা, কিন্তু আবেগটা বেরিয়ে আসেই। এত বছরের সুপরিচিত চরিত্রদের এহেন পরিণীতি দেখে মন ডুবে যায় আবেগেই।
সিনেমাটার শুরু এক আক্ষেপ নিয়ে, যে সময়টা আর ফিরে আসবে না। সেই সময়ে তারা হেরে গিয়েছিল। পারেনি নিজেদের সমস্ত ক্ষমতা,শক্তি দিয়েও সভ্যতাকে বাঁচাতে। কিন্তু জেদ তাদের সমসময়ই তুমুল। ইচ্ছে আর উপায়ের রয়সায়নে ‘ঠিক’ তারা করেই ছাড়বে।
তবে মার্ভেল এর এই সৃষ্টির সত্যিই কোনো তুলনা হয় না। গোটা avenger ভক্তদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই আগের সময়ে। তাঁদের আবেগকে চূড়ান্তে নিয়ে গিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রত্যেকটা মুহূর্ত। তৈরী করা হয়েছে এমন এক ‘ অন্তিম দৃশ্য ‘ যা শুধু মার্ভেলই পারে। তাদের প্রত্যেকটা ভাবনা, গল্প, এতটাই সুক্ষ্ম, নরম হাতে বোনা, যে মুহূর্তগুলো তৈরি হয়েছিল তা মনেই থেকে যাবে। মার্ভেল অনুরাগী তথা ‘সাই-ফাই’ অনুরাগীরা হয়ত ভুলবেনা শেষের এই সৃষ্টি। স্ট্যানলি, রুশো ভাই, মার্ভেল-এর প্রত্যেক কলাকুশলিকে ধন্যবাদ, কুর্ণিশ আর অবাধ ভালোবাসা।