সারা বিশ্বে বাড়ছে হিংসার ঘটনা। ঘরে- বাইরে সমান তালে। হিংসার শিকার হচ্ছে মানুষ। বাদ পড়ছে না শিশুরাও। চারপাশের অস্থিরতার জেরে নষ্ট হচ্ছে শিশুদের কোমলতা। পাশের মানুষকে সহজ চোখে দেখার বা গ্রহণ করার মানসিকতা ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই সমস্যা গোটা পৃথিবীতে।
তবে ডেনমার্কের ছবিটা বোধহয় একটু আলাদা।
জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’ অনুসারে পৃথিবীর প্রথম তিন সুখী দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ডেনমার্ক। বছরের পর বছর ধরে ডেনমার্ক ধরে রাখতে সফল হয়েছে এই স্থান।
কিন্তু বাকি দুনিয়ার থেকে কীভাবে আলাদা হল ডেনমার্ক?
দেশের নাগরিকদের ‘সুনাগরিক’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটা শুরু হয় ডেনমার্কের স্কুল থেকেই।
১৯৯৩ সাল থেকে ডেনমার্কের স্কুলগুলোতে শুরু হয়ে ‘এমপ্যাথিক্লাস’। অর্থাৎ সহমর্মিতার শিক্ষা।
অন্যের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া, মানুষকে অনুভবের শিক্ষা শুরু হয়ে যায় একেবারে কিডস স্কুল থেকেই।
প্রতি সপ্তাহে ডেনমার্কের স্কুলগুলোতে ‘সোশ্যাল লার্নিং’ বলে একটি বিষয় শেখানো হয়। প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টার ক্লাসটাইম। ৬ থেকে ১৬ বছরের শিশু–কিশোরকে এ ক্লাস করতে হয়। ড্যানিশ কারিকুলামের বা শিক্ষা কার্যক্রমের একটি মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এক ঘন্টার ক্লাসে শিশুদের নিজের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। সেই সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে হবে তার পথ দেখিয়ে দেন শিক্ষকরা।
সহপাঠী বন্ধুরাও সেই আলোচনায় অংশ নেয়। একজনের সমস্যা দেখে আর একজন শেখে। একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করে। পাশাপাশি কীভাবে তারা খুশি থাকতে পারবে তার পাঠও দেওয়া হয়।
এভাবেই তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পরিবর্তে মানবিক বোধ গড়ে ওঠে। অন্য মানুষের অনুভূতিকে সম্মান করতে শেখে।
ড্যানিশ শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সহমর্মিতাবোধের যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা অন্য দেশেও অনুসরণ করা উচিত।
ডেনমার্কের এমন অভিনব শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁদের মতে শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতাবোধ বাড়ানোর বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে গেছে। বিশ্বকে দেখার চোখ তৈরি হবে তাদের। ছোটবেলা থেকেই ইতিবাচক ভাবে দেখতে শিখবে মানুষকে। ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথে যা ভীষণ জরুরি।